ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৯ মিনিট আগে
শিরোনাম

বীরাঙ্গনার নতুন দুয়ারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক

  হারুন-অর-রশীদ, ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জুলাই ২০২১, ১৬:৪০

বীরাঙ্গনার নতুন দুয়ারে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক

আষাঢ়ের ঘন বাদল দিনে স্নিগ্ধ ও বৃষ্টিভেজা সকালে বীরাঙ্গনার দুয়ারে তার খোঁজ নিতে পৌঁছলেন ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। করোনাকালীন আসন্ন ঈদ উৎসবে বিপন্ন মানুষে উৎসাহ উদ্দীপনা আর মনোবল বাড়াতে এ এক অচিন্তনীয়, অভূতপূর্ব উদ্যোগ।

এর আগে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীরমুক্তিযোদ্ধাসহ নানা শ্রেণির মানুষের দুয়ারে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার-মানবিক সহায়তা প্রদান আর ত্রাণ তৎপরতার অব্যাহত অংশ হিসেবে জেলা প্রশাসকের এ আগমন।

নতুন ঘরে উঠে আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে কেঁদে উঠেন বীরাঙ্গনা মায়া রানী। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, হাসিনা আমার আজীবনের বান্ধব। বীরাঙ্গনা মায়া রানী প্রধানমন্ত্রী ও দেশের সকল নাগরিকের জন্য দোয়া করেন।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় ফরিদপুর পৌরসভার শোভারামপুর এলাকার বাসিন্দা নিঃসন্তান মায়া রানীর দুয়ারে পৌঁছান জেলা প্রশাসক অতুল সরকার। পৌঁছে তিনি বীরাঙ্গনা মায়া রানীর সার্বিক খোঁজ-খবর নেন। এ সময় তিনি তাকে ফুল দিয়ে প্রধানমন্ত্রীর ঈদ উপহার পৌঁছে দেন। জেলা প্রশাসকের সাথে এ সময় ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজা, উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মো. আব্দুর রাজ্জাক মোল্যা উপস্থিত ছিলেন।

এ সময় জেলা প্রশাসক অতুল সরকার বলেন, মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী দেশব্যাপী ভূমিহীন গৃহহীনদের জন্য ভূমি প্রদান ও গৃহ-নির্মাণ কার্যক্রম গ্রহণ করেছেন, তারই অংশ হিসেবে উপজেলা পরিষদের রাজস্ব তহবিল থেকে একটি ঘর করে দিতে পেরেছি।

তিনি জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। তিনি আমাদের বীরাঙ্গনা। আমরা এই ঘর দিয়ে শুরু করলাম। ভবিষ্যতে তার জন্য আরও ভাল কিছু করার চেষ্টা করবো। তার যেন থাকা খাওয়া সমস্যা না হয় সেজন্য সব সময়ই আমাদের প্রশাসন যোগযোগ করবে।

জানা যায়, মহান মুক্তিযুদ্ধে নিজ বাড়িতে ১৬ বছর বয়সে হানাদার বাহিনী ও স্থানীয় দোসরদের দ্বারা নির্যাতিত হন মায়া রানী সাহা। ফরিদপুর বর্ধিত পৌরসভার শোভারামপুরের বাসিন্দা মায়া রানী সাহা দীর্ঘদিন ধরে অসহায়ভাবে জীবন যাপন করছিলেন। তার ছিলো না কোন স্বীকৃতি কিংবা ভরসার জায়গা।

খবর পেয়ে গণশুনানীর সময় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক অতুল সরকার এর সাথে দেখা করেন মায়া রানী। মায়া রানী তার সঙ্গে ঘটে যাওয়া সেই বিভীষিকাময় অধ্যায়ের কথা, তার অসহায়ত্বতার কথা জানান জেলা প্রশাসককে।

তাৎক্ষণিকভাবে জেলা প্রশাসক ফরিদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার মো. মাসুম রেজাকে নির্দেশনা প্রদান করেন মায়া রাণী সাহার বিষয়ে সরেজমিনে তদন্ত করে সুস্পষ্ট মতামতসহ জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিলে (জামুকা) প্রতিবেদন প্রেরণের জন্য।

সেই নির্দেশনার আলোকে গত বছরের ১৪ জানুয়ারি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নেতৃত্বে উপজেলা বীরাঙ্গনা যাচাই বাছাই সংক্রান্ত গঠিত বিশেষ কমিটি প্রতিবেদন প্রস্তুত করে জামুকা বরাবর প্রেরণ করেন। তারই প্রেক্ষিতে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে মায়া রাণী সাহাকে ৩৮০ নং গেজেটে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি প্রদান করেন।

এদিকে বীরাঙ্গনা হিসেবে স্বীকৃতি পেলেও তার ছিলোনা কোনো থাকার ঘর। মায়া রানী সাহার জরাজীর্ণ আবাসস্থল সেমি পাকা ভবনে রূপান্তরে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নেন জেলা প্রশাসক অতুল সরকার।

ফরিদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার তত্ত্বাবধানে একটি সেমি পাকা ঘর নির্মাণের কাজ শুরু করে মায়া রানী সাহার জরাজীর্ণ বসত ভিটায়। বর্তমানে নির্মাণ কাজ সমাপ্ত হয়েছে। এখন মায়ারানী তার ঘরে বসত করছেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত