ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

চবির গবেষণা

চট্টগ্রামের ১৫ স্থানে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২১, ২২:১৬  
আপডেট :
 ০৩ আগস্ট ২০২১, ২২:২০

চট্টগ্রামের ১৫ স্থানে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা
সংগৃহীত ছবি

চট্টগ্রামে ইতোমধ্যে ডেঙ্গুতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত হচ্ছেন আরও অনেকে। নগরীর হালিশহর, বাকলিয়া, পাহাড়তলী ও চান্দগাঁওসহ ১৫টি সুনির্দিষ্ট জায়গায় মিলেছে শতভাগ এডিস মশার লার্ভা। এই এডিস মশা থেকেই প্রাণঘাতী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হচ্ছেন অনেক মানুষ।

চট্টগ্রামের ৫৭টি জায়গা থেকে সংগ্রহ করা মশার নমুনার ১৫টি নমুনাতেই শতভাগ এডিস মশার লার্ভা পেয়েছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। গবেষকদলটি এক মাস ধরে চট্টগ্রাম নগর ও হাটহাজারীর ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে এই নমুনা সংগ্রহ করে।

যেসব স্পটে এডিস মশার লার্ভা: হালিশহর এ-ব্লক, ২৬ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী এলাকার ফইল্যাতলী বাজার, দক্ষিণ কাট্টলী সাগরিকার রূপালী আবাসিক এলাকা, সাগরিকা জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ার রোডের জেলে পাড়া, পাহাড়তলী সিডিএ মার্কেটের দুলালাবাদ, সেগুনবাগান এলাকার ১৩ নং রেলওয়ে কলোনি, পাহাড়তলী আমবাগান এলাকার বাস্তুহারা কলোনী, সদরঘাট পশ্চিম মাদারবাড়ি এলাকার মাঝিরঘাট সড়ক, সদরঘাট থানাধীন কাস্টম রেলওয়ে রেলওয়ে কলোনি, পশ্চিম বাকলিয়ার চাক্তাই প্রাইমারি স্কুল, চকবাজার ডিসি রোডের তুষার কলোনি ও বাদশা মিয়া সওদাগরের বাড়ি, কল্পলোক আবাসিক এলাকার এক নম্বর সড়ক (ই-৯৬ এর পাশে), চাঁন্দগাওয়ের ফরিদার পাড়া ও চাঁন্দগাও আবাসিক এলাকার মসজিদের আশপাশ।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আহ্বানে মশক নিধনে নগরে প্রয়োগ করা ওষুধের কার্যকারিতা যাচাই করতে গত ৫ জুলাই থেকে গবেষণা চালায় চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) ছয় সদস্যের একদল গবেষক। এরপর টানা ২৫ দিন চট্টগ্রাম নগরের ১০০টি স্পট পরিদর্শন করে ৫১টি স্পটের মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়।

তাছাড়া পরীক্ষার সুবিধার্থে চবি ও এর পাশের ছয়টি স্পটের লার্ভাও সংগ্রহ করা হয়। পরে পরীক্ষাগারে নগরের এসব স্পটের নমুনা পরীক্ষা করে ১৫টি স্পটে এডিস মশার লার্ভা পাওয়া যায়।

বাড়ির ফুলের টব, পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের পাত্র, দোকানের ব্যাটারির সেল ও টায়ার এবং রাস্তার পাশের পাইপে জমে থাকা বৃষ্টির পানিতে মিলেছে এডিস মশার লার্ভা। এসব এলাকা থেকে সংগৃহীত লার্ভার শতভাগই ছিল এডিসের।

মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) গবেষক দল তাদের গবেষণা প্রতিবেদন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর কাছে হস্তান্তর করেছেন।

গবেষণা প্রতিবেদন হস্তান্তর

গবেষকরা বলেন, সিটি কর্পোরেশন থেকে আমাদেরকে পাঁচ ধরনের মশা নিধক ওষুধ দেয়া হয়েছিলো। আমরা তা পরীক্ষা করে একটি কেমিক্যালে শতভাগ সফলতা পেয়েছি। হারবাল প্রোডাক্ট জাতীয় ওই কেমিক্যালের সাথে কেরোসিন ব্যবহার করলে শতভাগ লার্ভা ধ্বংস হচ্ছে। বাকি চার ধরনের কেমিক্যালে লার্ভা ধ্বংস হলেও মশার মৃত্যুহার কম।

গবেষকরা আরও বলেন, শহরের একটি জলাশয়ে অনেক ময়লা আবর্জনা ও দীর্ঘদিন পানি জমে থাকলেও তাতে কোনো লার্ভার অস্তিত্ব খুঁজে পাইনি আমরা। পরে পরীক্ষা করে জানতে পারলাম ওই জলাশয়ে এমন কিছু মাছ আছে যা লার্ভা ধ্বংস করতে সক্ষম। সিটি কর্পোরেশনগুলো এসব মাছ শহরের বদ্ধ জলাগুলোতে নিয়মিতভাবে প্রতিবছর ছেড়ে দিতে পারে। এতে করে এসব জলায় মশা ডিম ছাড়লে উৎপন্ন লার্ভা খেয়ে দেশি মাছগুলো মশা দমনে অনেক অবদান রাখবে।

আরও পড়ুন: করোনার সঙ্গে ডেঙ্গু শঙ্কা, অভিযানে নামছে চসিক

জানা গেছে, এর আগে গত বছর ওষুধ ছিটানোর পরও মশার উৎপাত না কমায় পরীক্ষার জন্য ডিসেম্বরে বিসিএসআইআর (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) গবেষণাগারে লার্ভিসাইড (মশার ডিম ধ্বংসকারী ওষুধ) এবং এডালটিসাইড (পূর্ণাঙ্গ মশা ধ্বংসকারী) পাঠায় চসিক কর্তৃপক্ষ। তবে সে সময় সংস্থাটি চসিককে জানায়, মশার ওষুধের গুণগত মান তাদের ল্যাবে পরীক্ষা করা হয় না।

গবেষক দলের আহ্বায়ক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও প্রাণ রসায়ন ও অনুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. রবিউল হাসান ভূইয়া বলেন, সিটি কর্পোরেশনের বাজেটে আমরা ৫ জুলাই থেকে পুরোদমে কাজ শুরু করি। টানা ২৫ দিন ৯৯টি এলাকা পরিদর্শন করে নগরীর ৫১টি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৬টি স্থান থেকে মশার লার্ভা সংগ্রহ করা হয়। এতে ১৫টি স্পটে মিলেছে ডেঙ্গুর জীবাণুবাহী এডিস।

চবির গবেষণা প্রসঙ্গে মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, ফগার মেশিন দিয়ে এত ওষুধ ছিটানোর পর নাগরবাসীরা বলেন- মশার কামড়ে অতিষ্ঠ। এরপর চিন্তা করলাম ওষুধের কার্যকারিতা নির্ণয়ের। চবি উপাচার্যকে অনুরোধ জানাই, মশার ওষুধ নিয়ে গবেষণার জন্য। আজ সেই কাজের প্রতিবেদন সবার সামনে উপস্থাপিত হলো।

মেয়র বলেন, একটি স্প্রে মেশিনের চেয়ে ১০০ গুণ বেশি দাম ফগার মেশিনের। এ মেশিনের পরিবর্তে যে স্প্রে মেশিন ব্যবহার করতাম তা নিয়ে এগিয়ে গেলে অনেক বেশি সুফল পাব। স্প্রে মেশিন সবচেয়ে উপযোগী বলে মনে করি। ফগার মেশিন দিয়ে যে ওষুধ ছিটানো হয় তার কার্যকারিতা নগন্য। লার্ভিসাইড এডাল্টিসাইড মেশিন দিয়ে ওষুধ স্প্রে করলে বেশি সুফল পাব। আমাদের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ও মশকনিধনে নিয়োজিত কর্মচারি আছেন তাদের সঙ্গে আলাপ আলোচনা করে যে ওষুধ ব্যবহার করলে মশার উপদ্রব থেকে পরিত্রাণ পাব সেটা ব্যবহার করবো।

এদিকে নগরের নন্দনকাননে নির্মাণাধীন একটি ভবনের নিচে জমানো পানি পাওয়ায় ভবন মালিককে ৫ হাজার টাকা জরিমানা করেছে সিটি কর্পোরেশনের ভ্রাম্যমাণ আদালত।

উল্লেখ্য, এর আগে নগরীতে মশক নিধনে ব্যবহৃত ওষুধের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পর গুণগত মান পরীক্ষার উদ্যোগ নেয় চসিক। গত ১৪ মার্চ ব্যবহৃত ওষুধ পরীক্ষা করতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শিরীন আখতারকে অনুরোধ করে চসিক। এরপর ২৪ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভূঁইয়াকে আহ্বায়ক এবং উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. ওমর ফারুককে সদস্য সচিব করা হয়।

কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন- রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. তাপসী ঘোষ রায়, ভূগোল ও পরিবেশবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. শহীদুল ইসলাম, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ এবং প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. আবদুল ওয়াহেদ চৌধুরী।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন অফিসের হিসাব অনুযায়ী, ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত একমাসে চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা নিয়েছেন ৭ জন। মৃত্যু হয়েছে দুজনের। ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে গত ৩০ জুলাই মেরিন সিটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মারা যান দেওয়ানহাট সিটি করপোরেশন কলেজের এইচএসসির ছাত্রী নাফিজা জাহান। অন্যদিকে গত ৫ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান লালখানবাজার এলাকার এক গৃহবধূ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত