ইভ্যালিকে দেউলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা ছিল রাসেলের
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৩:৫৪ আপডেট : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:২৯
ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ইভ্যালির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মোহাম্মদ রাসেল একটি বিদেশি ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের লোভনীয় অফারের আলোকে ইভ্যালির ব্যবসায়িক স্ট্রাটেজি তৈরি করেছেন। ৩ বছর পূর্ণ হলে শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভূক্ত হয়ে দায় চাপানোর পরিকল্পনা নেন। র্যাব বলছে, সর্বশেষ তিনি দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে ইভ্যালিকে দেওলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করেন। দায় মেটাতে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বৃদ্ধি করার আবেদন একটি অপকৌশল মাত্র।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর কুর্মিটোলায় র্যাব সদর দপ্তরে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন এসব তথ্য জানান।
আরও পড়ুন: রাসেল-শামীমার ১০ দিন রিমান্ড চায় পুলিশ
কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, তিনি (রাসেল) ও তার স্ত্রী পদাধিকারবলে মাসিক ৫ লাখ টাকা করে বেতন নিতেন। তারা কোম্পানির অর্থে ব্যক্তিগত দুটি দামি গাড়ি (রেঞ্জ রোভার ও অডি) ব্যবহার করেন। এছাড়া কোম্পানির প্রায় ২৫-৩০টি যানবাহন রয়েছে। ব্যক্তি পর্যায়ে সাভারে রাসেলের কয়েক কোটি টাকা মূল্যের জায়গা-জমিসহ অন্যান্য সম্পদ রয়েছে।
গত বুধবার ইভ্যালির চেয়ারম্যান শামীমা নাসরিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ রাসেলসহ ওই প্রতিষ্ঠানের বেশকজন কর্মকর্তাার বিরুদ্ধে গুলশান থানায় প্রতারণা মামলা দায়ের করেন নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার পূর্বগ্রাম এলাকার বাসিন্দা মো. আরিফ বাকের।
পরে বৃহস্পতিবার বিকেলে রাজধানীর মোহাম্মদপুরের বাসা থেকে রাসেল ও শামীমাকে গ্রেপ্তার করে র্যাব।
র্যাব জানিয়েছে, তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিলো প্রথমত ইভ্যালিকে একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু করা। এরপর দায়সহ কোন প্রতিষ্ঠিত আন্তর্জাতিক কোম্পানির কাছে বিক্রি করে লভ্যাংশ নেওয়া।
এ উদ্দেশ্যে তারা বিভিন্ন দেশও ভ্রমণ করেছেন। অন্যান্য পরিকল্পনাসমূহের মধ্যে ছিল বিভিন্ন প্রতিষ্ঠিত কোম্পানির কাছে কোম্পানি শেয়ারের অফার দিয়ে প্রলুব্ধ করে দায় চাপিয়ে দেওয়া। এছাড়া ৩ বছর পূর্ণ হলে শেয়ার মার্কেটে অন্তর্ভূক্ত হয়ে দায় চাপানোর পরিকল্পনা নেন। তিনি জানান যে, দায় মেটাতে বিভিন্ন অজুহাতে সময় বৃদ্ধি করার আবেদন একটি অপকৌশল মাত্র। সর্বশেষ তিনি দায় মেটাতে ব্যর্থ হলে দেওলিয়া ঘোষণার পরিকল্পনা করেন।
খন্দকার আল মঈন বলেন, ইভ্যালির বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বর্তমানে প্রায় ৩০ লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গেটওয়েতে ৩০-৩৫ কোটি গ্রাহকের টাকা আটক হয়ে আছে বলে রাসেল জানান।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে র্যাবের এই কর্মকর্তা জানান, রাসেল ২০০৭ সালে একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স এবং পরবর্তীতে ২০১৩ সালে এমবিএ সম্পন্ন করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত একটি কোচিং সেন্টারে শিক্ষকতা করেন। ২০১১ সালে ব্যাংকিং সেক্টরে চাকরি শুরু করেন। প্রায় ৬ বছর চাকরির পর ২০১৭ সালে ব্যাংকের চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। তিনি প্রায় এক বছর শিশুদের ব্যবহার্য একটি আইটেম নিয়ে ব্যবসা করেন এবং পরে তিনি ওই ব্যবসা বিক্রি করে দেন।
২০১৮ সালে আগের ব্যবসালব্ধ অর্থ দিয়ে ইভ্যালি প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নেন। ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ইভ্যালির কার্যক্রম শুরু হয়। কোম্পানিতে তিনি সিইও এবং তার স্ত্রী চেয়ারম্যান পদে অধিষ্ঠিত হন।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক আরও বলেন, ইভ্যালির অবকাঠামো সম্পর্কে জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভাড়াকৃত স্পেসে ধানমন্ডিতে প্রধান কার্যালয় এবং কাস্টমার কেয়ার স্থাপিত হয়। একইভাবে আমিন বাজার ও সাভারে দুটি ওয়্যার হাউজ চালু করা হয়। কোম্পানিতে একপর্যায়ে প্রায় দুই হাজার ব্যবস্থাপনা স্টাফ ও ১ হাজার ৭০০ অস্থায়ী কর্মচারী ছিল। যা ব্যবসার অবনতিতে বর্তমানে স্টাফ ১ হাজার ৩০০ এবং অস্থায়ী পদে প্রায় ৫০০ জন কর্মচারীতে এসে দাঁড়িয়েছে।
কর্মচারীদের একসময় মোট মাসিক বেতন বাবদ দেয়া হতো প্রায় ৫ কোটি টাকা, যা বর্তমানে দেড় কোটিতে দাঁড়িয়েছে। গত জুন থেকে অনেকের বেতন বকেয়া রয়েছে।
র্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তারদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ইভ্যালির অন্যতম কর্ণধার রাসেল ও তার স্ত্রী। ইভ্যালি পরিকল্পিতভাবে একটি পরিবার নিয়ন্ত্রিত ব্যবসায়িক গঠনতন্ত্র। একক সিদ্ধান্ত গ্রহণে স্বেচ্ছাচারিতা করার অবকাশ রয়েছে। ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান পরিচালনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ঘাটতি রয়েছে। ফলে ক্রমান্বয়ে প্রতিষ্ঠানের দায় বৃদ্ধি হতে হতে বর্তমানে প্রায় অচল অবস্থায় উপনীত হয়েছে। বিভিন্ন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠানের কাছে দায়, গ্রাহকদের কাছে দায় নিয়ে বিচলিত প্রতিষ্ঠানটি।
তিনি আরও বলেন, ইভ্যালির নেতিবাচক ব্যবসায়িক স্ট্রাটেজি উন্মোচিত হওয়ায় অনেক সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান ও অর্থ ট্রানজিশন গেটওয়ে ইভ্যালি থেকে সরে এসেছে। ব্যবসায়িক উত্তরণ নিয়ে সন্ধিহান গ্রেপ্তাররা। এখন পর্যন্ত উত্তরণের কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনাও নেই বলে জানান র্যাবের এই কর্মকর্তা।
এফজেড/আর