ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসা সেই নীলগাইয়ের সংসারে নতুন অতিথি

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৯:১১  
আপডেট :
 ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২১, ২০:৩২

সেই নীলগাইয়ের সংসারে নতুন দুই অতিথি
নীলগাই

বাংলাদেশে বিলুপ্তর তালিকায় থাকা গাজীপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সাফারি পার্কে দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে একটি নীলগাই। গত ১ আগস্ট শাবক দুটির জন্ম হলেও তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে এতোদিন চেপে রাখে পার্ক কর্তৃপক্ষ।

শুক্রবার বিষয়টি প্রকাশ করেন তারা। দেশের প্রাকৃতিক পরিবেশে বিলুপ্ত প্রাণী নীলগাইয়ের শাবক জন্ম দেওয়ায় আশার আলো দেখা দিয়েছে।

সাফারি পার্কের ওয়াইল্ড লাইফ সুপারভাইজার (বন্যপ্রাণী পরিদর্শক) সারোয়ার হোসেন বলেন, গত বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা এলাকায় একটি স্ত্রী নীলগাই জবাই করার প্রস্তুতি নেন স্থানীয়রা। পরে নীলগাইটি উদ্ধার করে সাফারি পার্কে হস্তান্তর করে বিজিবি। এর আগের বছর ২২ জানুয়ারি নওগাঁ জেলার মান্দা উপজেলার জোতবাজার এলাকায় জবাইকালে একটি পুরুষ নীলগাই উদ্ধার করে স্থানীয় প্রশাসন। পরে প্রাণীটিকে রামসাগর জাতীয় উদ্যানে রাখা হয়।

সেখানে থেকে পুরুষ নীলগাইটি গত বছরের ১৯ আগস্ট তাকে সাফারি পার্কের স্ত্রী নীলগাইয়ের সঙ্গে রাখা হয়। পরে নিবিড় পর্যবেক্ষণ শেষে প্রাণীটিকে পার্কের কোর সাফারি জোনে উন্মুক্ত করা হয়। সেখানে উভয়ের মধ্যে দারুণ জুটি তৈরি হয়। প্রায় এক বছর পর গত ১ আগস্ট দুটি শাবকের জন্ম দিয়েছে এ জুটি। তবে শাবক দুটি পুরুষ না স্ত্রী তা জানা যায়নি।

সারোয়ার হোসেন আরও বলেন, নীলগাই ভারতীয় উপমহাদেশে অ্যান্টিলোপ জাতীয় প্রাণীর মধ্যে সবচেয়ে বড়। নীলগাই দেখতে খুব সুন্দর। তবে অনেকটা বিদঘুটে চেহারার ঘোড়ার মতো। এদের দেহের পেছনের দিক কাঁধ থেকে নিচু। এদের ঘাড়ে বন্য শূকরের কেশরের মতো ঘন লোম থাকে। পুরুষ নীলগাইয়ের গাত্র বর্ণ গাঢ় ধূসর, প্রায় কালচে রঙের। আর স্ত্রী নীলগাই ও শাবকের গাত্র লালচে বাদামি হয়। পুরুষ নীলগাইয়ের শিং হয়। তৃণভোজী প্রাণী হিসেবে ঘাস, শস্য ও কাঠ জাতীয় তৃণ খেতে এরা ভালোবাসে। পানি ছাড়া দীর্ঘক্ষণ কাটাতে সক্ষম তারা। এমনকী গরমের দিনও এরা তেমন পানি খায় না। এরা দৌড়ে পালিয়ে আত্মরক্ষা করে। শক্তিশালী ঘোড়ার পিঠে না চড়ে নীলগাই ধরা প্রায় অসম্ভব।

হেমন্ত থেকে শীতকালের শুরুর দিকে এদের প্রজননের সময়। পুরুষ নীলগাই সম্মতিসূচক লেজ নাড়াচাড়ার পর স্ত্রী নীলগাই মিলিত হয়। এদের গর্ভধারণকাল ২৪৩ দিন। জন্মের সময় অর্ধেকেই জমজ শাবকের জন্ম হয়। ক্ষেত্রবিশেষ তিনটি শাবকেরও জন্ম হয়। শাবক জন্মের ৪০ মিনিটের মধ্যে এরা দাঁড়াতে পারে। পুরুষ শাবক তিন বছর ও স্ত্রী শাবক দুই বছরে প্রজননের উপযোগী হয়। এদের গড় আয়ু ২১ বছর।

পার্কে জন্ম নেয়া নীলগাইয়ের শাবক দুটি দীর্ঘদিন ঝোঁপের আড়ালে লুকিয়ে ছিল। অনেক প্রচেষ্টা করেও তাদের দেখা যায়নি। পরে শাবকগুলো একটু বড় হলে তারা বের হয়ে আসে। মা ও শাবক দুটি সুস্থ রয়েছে। তাদের পুষ্টির কথা বিবেচনা করে পার্ক থেকে ঘাস, গাজর, কদমপাতাসহ বিভিন্ন ধরনের খাবার দেওয়া হচ্ছে।

সাফারি পার্কের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা তবিবুর রহমান বলেন, আমাদের দেশ থেকে বিলুপ্ত হওয়ার দীর্ঘ প্রায় ৮০ বছর পর প্রতিবেশী দেশ ভারত থেকে সীমান্তবর্তী এলাকায় নীলগাই বাংলাদেশে প্রবেশ করে। স্থানীয়দের জবাই করার মুহূর্তে ছুরির নিচ থেকে এ দুটি নীলগাই উদ্ধার করা হয়। পরে এগুলো প্রজননের জন্য সাফারি পার্কে আনা হয়। তা থেকে দুটি শাবক পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, এ প্রাণীর মাংস খুবই সুস্বাদু। একদিক দিয়ে বন কমে যাওয়ায়, অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন নীলগাইগুলো জবাই করে খেয়ে ফেলায় তা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছিল আমাদের প্রকৃতি থেকে। যে জন্য ৮০ বছর আগে দেশে প্রাণীটিকে বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়। দীর্ঘদিন পর সাফারি পার্কে জন্ম হওয়ার মাধ্যমে আবার প্রকৃতিতে ফিরবে নীলগাই।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত