ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

পুলিশের লাঠির আঘাতে জেলের মৃত্যু, উত্তাল জনতা

  গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২১ সেপ্টেম্বর ২০২১, ১৮:২১

পুলিশের লাঠির আঘাতে জেলের মৃত্যু, উত্তাল জনতা
ছবি: প্রতিনিধি

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় নৌ পুলিশের লাঠির আঘাতে সুজন হাওলাদার (৩০) নামে এক জেলের মৃত্যু হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে উপজেলার বালিয়াতলি ইউনিয়নের ঢোস এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত জেলে সুজন একই ইউনিয়নের চরবালিয়াতলি গ্রামের চৌকিদারবাড়ীর মৃত আবদুস সত্তারের ছেলে।

এ ঘটনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে হাজার হাজার গ্রামবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। অভিযুক্ত নৌ-পুলিশের বিচার দাবিতে উত্তেজিত জনতা চার পুলিশ সদস্যকে তাদের কথিত সোর্সসহ ট্রলারে অবরুদ্ধ করে রাখে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় উপজেলা প্রশাসন, কলাপাড়া থানা পুলিশ ও জেলা দাঙ্গা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকাল অনুমান সাড়ে ১০টার দিকে পায়রা সমুদ্র বন্দর সংলগ্ন রামনাবাদ নদীতে মাছ ধরা শেষে ছোট ইঞ্জিনচালিত নৌকা নিয়ে তীরে ফিরছিলেন জেলে সুজন, তারেক, মাসুদসহ অপর দুই জেলে। এ সময় লালুয়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ির সোর্স আলমগীর, এএসআই মামুন, কনেস্টেবল আ. সত্তার, সুমন ও রিয়াজ তাদের ট্রলার নিয়ে ধাওয়া করে। নৌ-পুলিশের ভয়ে জেলেদের নৌকাটি চরবালিয়াতলি গ্রাম সংলগ্ন ঢোস এলাকার ছোট খালের তীরে ভিড়িয়ে দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করে জেলেরা। কিন্তু এএসআই মামুনের নেতৃত্বে থাকা নৌ-পুলিশ টিমের সদস্যরা জেলে সুজন হাওলাদারকে ধরে ফেলে। এ সময় লাঠির আঘাতে ঘটনাস্থলেই সুজন অজ্ঞান হয়ে পড়েন।

এরপর দীর্ঘক্ষনেও জেলে সুজনের জ্ঞান না ফেরায় তাকে চিকিৎসার জন্য কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

চার পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করেছে জনতা

কলাপাড়া হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. সায়মা সুলতানা বলেন, সুজন নামের একজন জেলেকে হাসপাতালে নিয়ে আসার আগেই মৃত্যু হয়েছে। তার মরদেহ পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

এদিকে পুলিশের লাঠির আঘাতে জেলে সুজনের মৃত্যুর বিষয়টি দ্রুত গ্রামে ছড়িয়ে পড়ায় হাজার হাজার গ্রামবাসী ঘটনাস্থলে জড়ো হয়ে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। বিচারের দাবিতে তারা অভিযুক্ত চার নৌ-পুলিশ সদস্যকে অবরুদ্ধ করে রাখে।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক, কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী, ওসি (তদন্ত) আসাদুর রহমান স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় বিক্ষুব্ধ জনতাকে শান্ত করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করেন।

কলাপাড়া থানার ওসি মো. আসাদুর রহমান বলেন, চর বালিয়াতলি এলাকায় আছি, ভীষণ ব্যস্ত রয়েছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছি।

এ বিষয়ে জানতে কলাপাড়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আহম্মেদ আলী’র ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধিকবার ফোন দিয়েও সংযোগ পাওয়া যায়নি।

পটুয়াখালীর পুলিশ সুপার মো. শহিদুল্লাহ বলেন, ব্যস্ত আছি। বলার মতো কিছু থাকলে পরে জানাবো।

কলাপাড়ার ইউএনও আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক বলেন, সুজন নামের এক জেলের মৃত্যুতে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। নৌ-পুলিশের ধাওয়া খেয়ে সুজনের মৃত্যু হয়েছে, নাকি না লাঠির আঘাতে মৃত্যু হয়েছে, এটি তদন্ত সাপেক্ষ বিষয়। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। অবরুদ্ধ চার পুলিশসহ কথিত সোর্স আলমগীরকে ছয় ঘণ্টা পর অবরুদ্ধ অবস্থা থেকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহত জেলের মরদেহের সুরতহাল শেষে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ পটুয়াখালী মর্গে পাঠানোর উদ্দোগ নেয়া হয়েছে। পুলিশের কথিত সোর্সসহ চার পুলিশ সদস্যকে থানায় নিয়ে আসা হলেও আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের বিষয়টি স্পষ্ট করেনি পুলিশ।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত