ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৭ মিনিট আগে
শিরোনাম

হরিণাকুন্ডুতে বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারে মৃত্যু বাড়ছে

  মাহফুজুর রহমান, ঝিনাইদহ প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:০৩  
আপডেট :
 ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০৪:১৬

হরিণাকুন্ডুতে বেসরকারি ক্লিনিকে সিজারে মৃত্যু বাড়ছে
ফাইল ফটো

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডুতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে উঠেছে নানা নামের ভুঁইফোড় বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিক। দালালরা এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকে ধরে নিয়ে যাচ্ছেন রোগী। করা হচ্ছে সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার। এখন মাঝে মাঝেই মৃত্যু হচ্ছে নবজাতক কিংবা প্রসূতি মায়ের। তারপরও এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয় না স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বা সিভিল সার্জন অফিস।

অভিযোগ রয়েছে, সিভিল সার্জনের কার্যালয়কেই মাসে মাসে ঘুষ দিয়ে চলছে নামসর্বস্ব এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক। তাই চোখের সামনে অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। কেউ কখনও এগুলো পরিদর্শনেও যান না।

গত মঙ্গলবার (২১ সেপ্টেম্বর) বিকেলে উপজেলার রামনগর গ্রামের মজনু মিয়ার মেয়ে মহিমা খাতুন নামের এক প্রসূতিকে ভর্তি করা হয় হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

পরে সেখানে সেবা না পেয়ে হাসপাতাল মোড়ের আক্তারুজ্জামান কুসুমের মালিকানাধীন রেসিডো নামের একটি ক্লিনিকে ভর্তি করা হয়। কিছুক্ষণ পরই ডা. আলমগীর হোসেনের তত্বাবধানে তার সিজারিয়ান অস্ত্রোপচার করা হয়। একটি নবজাতকের জন্ম দেন মহিমা। সিজারের পর নবজাতকের হেড ডেমারেজ হয়েছে বলে জানাই ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ।

পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ক্লিনিক কর্তৃপক্ষ তাকে শিশু বিশেষজ্ঞের কাছে নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেন। ঝিনাইদহ নেওয়ার পথে নবজাতক মারা যায় বলে তার স্বজনরা জানান। ডা. আলমগীরের সিজার করার বৈধতা আছে কিনা এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে মানুষের মনে।

গত ১৯ জানুয়ারি বিকেলে চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার হাটখোলা পাঁচলিয়া গ্রামের শাহাবুল হোসেনের স্ত্রী আসমা খাতুনকে ভর্তি করা হয় হাসপাতাল মোড়ের অনুমোদনহীন নিউ রেসিডো ক্লিনিকে। সেখানে অপারেশন করেন হরিণাকুন্ডু উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. জামিনুর রশিদ। সিজার অপারেশনের পর নবজাতকের মৃত্যু হয়।

অসময়ে সিজারে নবজাতকের মৃত্যুর অভিযোগ তুলে মারা যাওয়া নবজাতকের পিতা শাহাবুল হোসেন ডা. জামিনুর রশিদসহ ৫ জনের নামে মামলা করেন। সাম্প্রতিক সময়ে হরিণাকুন্ডুতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ঠিক কতজন নবজাতক বা প্রসূতির মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে তার হিসাব রাখেনি কেউ। বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালকের কার্যালয়, সিভিল সার্জনের কার্যালয় এবং থানায় খোঁজ নিয়েও এ তথ্য পাওয়া যায়নি। তবে স্থানীয়রা বলছেন, মাঝে মাঝেই প্রসূতি বা নবজাতকের মৃত্যু নিয়ে হাসপাতাল মোড়ের ক্লিনিকগুলোতে হট্টগোল হয়। কখনও কখনও ভাঙচুরও করেন রোগীর বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা। এক সময় রোগীর স্বজনদের সঙ্গে হাসপাতাল-ক্লিনিক কর্তৃপক্ষের সমঝোতা হয়ে যায়।

গণমাধ্যমকর্মী বসির বলেন, ‘প্রসূতি ও নবজাতকের মৃত্যুর ঘটনায় মাঝে মাঝেই বিক্ষুব্ধ স্বজনেরা হরিণাকুন্ডুর বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে ভাঙচুর করে। কিন্তু এসব হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে যাদের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তারা নেন না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হরিণাকুন্ডুতে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের সংখ্যা ১১টি। এর মধ্যে ক্লিনিক ৬টি ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ৫টি। লাইসেন্স না থাকলেও অবাধে এসব বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলো চলছে। এগুলোর বেশিরভাগই উপজেলার হাসপাতাল মোড়ে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের একেবারেই নাকের ডগায় এসব হাসপাতাল-ক্লিনিক চললেও কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ফলে হাসপাতাল-ক্লিনিকগুলোর দালালেরা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রোগী ভাগিয়ে নিয়ে যায়। সেখানে রোগীরা প্রতারিত হন। ভুল চিকিৎসায় মৃত্যুও হয়।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে একজন গাইনী বিশেষজ্ঞ বলেন, বেশিরভাগ প্রসূতিরই সিজার করার প্রয়োজন নেই। কিন্তু এখন বেশিরভাগ প্রসূতিরই সিজার হচ্ছে। আর এটা হচ্ছে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিকে। সেখানে কোন মতে একজন প্রসূতিকে নিয়ে যেতে পারলেই সিজার। এ ধরনের হাসপাতাল-ক্লিনিকের বিরুদ্ধে দ্রুতই ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।

এ বিষয়ে ঝিনাইদহ সিভিল সার্জন ডা. সেলিনা বেগমের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি একটু ব্যাস্ত আছি। পরে বিষয়টি জানানো যাবে।

বাংলাদেশ জার্নাল / এএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত