ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

নৌকা বদল হয়, কিন্তু ভাগ্য নয়

  লক্ষীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৪ অক্টোবর ২০২১, ১২:১১

নৌকা বদল হয়, কিন্তু ভাগ্য নয়
ছবি: প্রতিনিধি।

ছবি তুলি কি অইবো? আমাগো খবর কেউ রাখে না। আমরা কারও কাছ থেকে সাহায্যও পাই না। আমাগো নৌকা বদল হয়, কিন্তু ভাগ্য বদল হয় না।’ নৌকাভাসি মানতা নারী সুকুরজান বিবি ও তার সন্তানদের ছবি তুলতে গেলে এমন কথাই বলেন তিনি। ঘাটে নোঙর করা একটি নৌকায় ছেলে-মেয়েদের নিয়ে বসে আছেন সুকুলজান বিবি। সাথে স্বামী-শাশুড়িও আছেন। চোখে-মুখে তার বিরক্তি, অনিশ্চয়তা আর দুশ্চিন্তার ছাপ।

নদীতে মাছ শিকার শেষে লক্ষীপুরের মজু চৌধুরী ঘাটে ভিড়েছে সুকুরজানদের নৌকা। জাল ছিঁড়ে যাওয়ায় অভিযানের শেষ দিনে (৩ অক্টোবর) নদীতে যেতে পারেনি তারা। বসে বসে জাল বুনছেন আর চিন্তা করছেন বিকেলে নদীতে গিয়ে মাছ ধরতে পারলে সন্তান ও নিজেদের জন্য দু’মুঠো খাবারের ব্যবস্থা করবেন।

সদরের মজু চৌধুরী হাট এলাকার মাছ ঘাটে গিয়ে এমনই করুণ দৃশ্য দেখা যায়। সেখানে মানতা গৃহবধূ সুকুরজানসহ অন্যদের অবস্থা যেন একই। শুধু সুকুরজান বিবি নয়, তাদের মতো অর্ধশতাধিক মানতা নারী-পুরুষের নৌকা বহর ঘাটে ভেড়ানো রয়েছে।

তাদের দুশ্চিন্তা, আজ থেকে থেকে ২২দিন নদীতে মাছ ধরা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ। এসময় তাদের জেলে কার্ডও নেই। নেই জমানো টাকাও। নিষেধাজ্ঞা চলাকালিন সময় কি খাবে? জলে জড়ানো জীবনে ভাগ্য বদল হয় না তাদের। সারাদিন জাল বেয়ে নদীতে যা মাছ পান তা বিক্রি করেই চালাতে হবে তাদের সংসার। কিন্তু ইলিশ সংকটে তাদের জীবনে নেমে এসেছে চরম বিপর্যয়। এ বছর দাদনের টাকাও দিতে পারেনি এখনও।

সুকুরজান বিবি বলেন, ‘স্বামী, এক ছেলে, শাশুড়ি, শ্বশুর নিয়ে নৌকায় ভাসমান সংসার তাদের। আগে বাবার নৌকায় ছিলেন, এখন স্বামীর নৌকায়। নৌকা বদল হলেও জীবন বদলায়নি তার। গত এক সপ্তাহে মাত্র দুই হাজার টাকার মাছ বিক্রি করেছেন, যা ডাল-ভাতের ব্যবস্থা করতে গিয়েই হিমশিম খেতে হচ্ছে। ’

তিনি বলেন, ‘আমাদের আবার আনন্দ-উৎসব। ভাতের পয়সা যোগাড় করতেই দিন কেটে যায়। কীভাবে খাবার জোগাড় করব সে চিন্তাই যেন পিছু ছাড়ছে না, সেখানে আবার আনন্দ! নদীর উত্তাল ঢেউয়ে চাপা পড়ে যায় আমাদের আনন্দ। নদীই জীবন, নদীই আমাদের মরণ।

ঘাটে নোঙর করা নৌকায় তিন মেয়ে ও এক ছেলে নিয়ে মন খারাপ করে বসে আছেন মানতা সম্প্রদায়ের নাজিম হাওলাদার। নদীতে ইলিশ না পাওয়ায় সংকটময় হয়ে পড়েছে তার জীবন।

নাজিম হাওলাদার বলেন, ‘নদীতে মাছ কম তাই আয়-রোজগার নেই। দুইদিন মাছ বিক্রি করে পেয়েছি মাত্র ৭শ’ টাকা। এ টাকা দিয়ে পেটের ব্যবস্থা করবো, নাকি নৌকার জন্য তেল কিনব?’ ৪ অক্টোবর থেকে নিষেধাজ্ঞা। এই নিষেধাজ্ঞা সময়ে সরকারি চাল ছাড়াতো কিছু পাইনা।

উপকুলের বিভিন্ন মৎস্য ঘাটে নাজিম ও সুকুরজানদের মতো নৌকাভাসি মানতাদের জীবন-জীবিকা নৌকাতেই। নদীতে মাছ পেলে মুখে হাসি ফোটে, নয়তো মলিন মুখ। জলের সঙ্গে যুদ্ধ করতে গিয়ে কখনো কখনো আশা-স্বপ্ন চুরমার হয়ে যায় তাদের।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত