ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫০ মিনিট আগে
শিরোনাম

লক্ষীপুরে শসা চাষে বাজিমাত চাষির

  মো. সোহেল রানা, লক্ষীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:১৫  
আপডেট :
 ০৬ অক্টোবর ২০২১, ১৪:২২

লক্ষীপুরে শসা চাষে বাজিমাত চাষির
বিক্রির জন্য রাখা শসা। ছবি: প্রতিনিধি।

লক্ষীপুরে দিন দিন বাড়ছে ক্ষীরা আর শসার চাষ। সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়নের মিয়ার বেড়ির এলাকার কৃষক জালাল আহম্মদ শসা চাষ করে আড়াই গুণ লাভ পেয়েছেন।

পরিকল্পিতভাবে চাষ ও খেতের পরিচর্যা করলে ধানের চেয়ে শসার বেশি ফলন পাওয়া যায়। শুধু জালাল আহম্মদ নন, শসা চাষ করে লাভবান হয়েছেন সহস্রাধিক কৃষক। কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় চাষিরা এদিকে ঝুঁকছেন।

কৃষক জালাল আহম্মদ এর জমিতে গিয়ে দেখা যায়, ধইঞ্চা দিয়ে মাচা তৈরি করা হয়েছে। বোটায় বোটায় ঝুলছে শসা। শেষ বিকালের আলো শসার গায়ে পড়ে সবুজ শসা বর্ণিল হয়ে উঠেছে।

পাইকারদের শসা সরবরাহ করতে ক্লান্তিহীন শসা তুলছেন কৃষক জালাল আহম্মদ ও তার পরিবারের সদস্যরা। পড়নে লুঙ্গি, খালি গা জালাল আহম্মদের। গায়ে ঘাম চকচক করছে। মুখের ঘাম মুছে আবার তিনি কাজে মনোযোগ দিচ্ছেন। এক পর্যায়ে সন্ধ্যা নেমে এলে তিনি কাজ বন্ধ করেন। ঝুড়িতে আর পলিথিনের বস্তায় শসা সাজানো শুরু করেন। তার মুখে তৃপ্তির ঝিলিক। তার এ তৃপ্তির ঝিলিক সন্ধ্যার অন্ধকারও চাপা দিয়ে রাখতে পারে না।

স্থানীয় কৃষকদের তথ্যমতে, লক্ষীপুরের শসার গুণগত মান ভালো হওয়ায় স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায়। শসা চাষ করে জেলার কৃষি অর্থনীতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছেন এখানকার কৃষকরা। এখানে মোট উৎপাদিত শসার সিংহভাগ সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকাতে উৎপাদন হচ্ছে।

এছাড়া এই উপজেলার লাহারকান্দি, উত্তরজয়পুর, শাকচর, টুমচর, চররমি মোহন, চরআলী হাসান, কালিরচর, তেয়ারী গঞ্জের বিশাল এলাকায় শসার আবাদ করছে কৃষকরা। জেলার কমলনগর উপজেলার উত্তর চর লরে, মধ্য মার্টিন, উত্তরমার্টিন, চর কালকিনি, চর ফলকন, চর কাদিরা, চর লরে এলাকাতেও শসার উৎপাদন হচ্ছে।

এছাড়া উপজেলার ভবানীগঞ্জ এলাকার মিয়ার বেড়ি, ছটকির সাঁকো, চর ভূতা, পিয়ারাপুর, চর মনসা এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় শসা ক্ষেতে ছেয়ে আছে। ক্ষেত পরিচর্যা, শসা তোলা ও বিক্রয়ে ব্যস্ত সময় পার করছে এখানকার চাষীরা।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অফিস জানায়, প্রতি হেক্টরে ১৫০ থেকে ১৬০ মণ শসা উৎপাদন হয়। এতে এই মৌসুমে শুধু ভবানীগঞ্জ এলাকাতে শসার মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১২শ মেট্রিক টনেরও বেশি। এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশী উৎপাদন হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেছে লক্ষীপুর কৃষি বিভাগ।

কৃষকরা জানায়, উন্নত জাতের শসার বীজ বপনের পর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফলন পেতে শুরু করে। এ জাতের শসা গাছ থেকে ভাদ্র মাসের শেষ পর্যন্ত ফলন পাওয়া যায়।

দেশি জাতের গাছে ফলন অপেক্ষাকৃত কম পাওয়া যায়। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে ফলন তোলা যায়। অপর দিকে হাইব্রিড জাতের শসা গাছে ফলন বেশি কিন্তু মাত্র ২ থেকে ৩ মাস পর্যন্ত ফলন তোলা যায়। সপ্তাহে দুইদিন ক্ষেত থেকে শসা তুলতে হয়।

তারা আরও জানান, এ সময়টাতে ক্ষেতে পানি থাকে। তাই উঁচু করে সারিবদ্ধভাবে বাঁধ দিয়ে চারা লাগানোর জন্য জমি তৈরি করে নিতে হয়। গাছের গোড়ায় পানি থাকলে গাছ মারা যাবে। তাই অতিরিক্ত পানি নিষ্কাষণের জন্য সেচের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। আবার খরায় পানির প্রয়োজন হলে পার্শ্ববর্তী খাল থেকে পানি সরবরাহ করা হয়।

অল্প সময়ে ফলন বেশী হওয়ায় এসব এলাকায় হাইব্রিড জাতের শসার বেশি চাষ হয়ে থাকে বলে জানায় কৃষকরা।

কৃষক ইয়াকুব আলী বলেন, এক একর জমিতে শসার চাষ করেছি। গেল দশ দিন থেকে বিক্রি শুরু করেছি। প্রতিদিন ৫ থেকে ৮ মন পর্যন্ত শসা বিক্রি করি। এবার ফলনও যেমন বেশি হয়েছে। দামও মোটামুটি ভাল পাচ্ছি। ব্যবসায়ীদের কাছে ১০ থেকে ১৫ টাকা কেজি অথবা ৪‘শ থেকে ৬‘শ টাকা মন বিক্রি করছি।

আরেক কৃষক বলেন, খুচরা বাজারে এখন শসার দাম বেশি। প্রতি কেজি শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে। তাই আমরা চাষিরাও ভালো দাম পাচ্ছি। প্রতি মণ শসা পাইকারি পনেরশ থেকে সতেরশ টাকায় বিক্রি করছি। পাইকারি ব্যবসায়ীরা এসে ক্ষেত থেকে শসা কিনে নিয়ে যাচ্ছেন।

এসব কৃষকরা জানায়, বিগত সময়ে শসার এতো ভালো দাম ছিল না। ফলে গেল মৌসুমে লোকসান গুণতে হয়েছে। তবে এবার খরচ উঠিয়ে অধিক লাভ করতে পরবে বলে তাদের প্রত্যাশা।

জেলা কৃষি সম্পসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. মো. জাকির হোসেন বলেন, জেলায় সবজি আবাদের উপর অতিরিক্ত জোর দেয়া হয়েছে। সরকার সময়মত বীজ, সার ও ঋণ প্রবাহ সচল রেখেছেন। যার ফলে এবছর বিভিন্ন সবজি বিশেষ করে শসার বাম্পার ফলন হয়েছে।

তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগ থেকে তাদের বিভিন্ন ধরনের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। এ ছাড়াও চাষিদের জন্য সরকারি বরাদ্দকৃত প্রণোদনাসহ বিভিন্ন ধরনের সুযোগ-সুবিধা দেয়া হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত