ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ মিনিট আগে
শিরোনাম

দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:৪০  
আপডেট :
 ১৪ অক্টোবর ২০২১, ২০:৫০

দেশবিরোধী গভীর ষড়যন্ত্র

কুমিল্লার একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কোরআন অবমাননার ‘কথিত’ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেশের বিভিন্ন স্থানে মন্দিরে হামলা করেছে দুর্বৃত্তরা। এর আগেও বিভিন্ন সময় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনা পরিকল্পিতভাবে সাম্প্রদায়িক উস্কানি ছড়ানোর অপকৌশল বলে মনে করা হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, সম্প্রীতির দেশে পরিকল্পিতভাবে উত্তেজনা ছড়িয়ে মন্দিরে হামলার মতো ঘটনা দেশের বিরুদ্ধে গভীর চক্রান্ত। দেশকে অস্থিতিশীল করার এ অপচেষ্টা দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রেরই অংশ। কোন কোন মহল দেশকে অকার্যকর ও জঙ্গি রাষ্ট্রে পরিণত করতে চায়?

বিশেষজ্ঞদের মতে, আফগানিস্তানে তালেবানের ক্ষমতা দখলে ভারত-পাকিস্তানের পাশাপাশি বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে জঙ্গিবাদ বিস্তৃতি লাভের ব্যাপক ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। আশির দশকে বাংলাদেশ থেকে অনেকে আফগানিস্তান থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে দেশে ফিরে সংগঠিত হয়েছিল। এবারও তেমনটা ঘটতে পারে। কুমিল্লায় কথিত ঘটনাকে কেন্দ্র করে পরিকল্পিতভাবে দেশজুড়ে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর ঘটনা সেই ইঙ্গিত বহন করছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিৎ বলেও মনে করেন তারা।

অভিযোগ রয়েছে, দেশ-বিদেশে বসে দেশবিরোধী ভয়ংকর তৎপরতা চালাচ্ছে যুদ্ধাপরাধী ও সন্ত্রাসী সিন্ডিকেট। তারা বিপুল অর্থের বিনিময়ে আন্তর্জাতিক সাইবার সন্ত্রাসী গোষ্ঠী নিয়োজিত করেছে। প্রযুক্তির অপব্যবহার করে ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেশের বিরুদ্ধে তৎপরতা চালাচ্ছে তারা।

সম্প্রতি ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে কুচক্রী মহল সক্রিয় হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, সারাদেশে প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ হাজার পূজামণ্ডপে উৎসব পালিত হচ্ছে, তাই একটি কুচক্রী মহলের গাত্রদাহ হচ্ছে।

আওয়ামী লীগের জ্যোষ্ঠ নেতা আমির হোসেন আমুর মতেও একটি চিহ্নিত মহল হীন রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে কুমিল্লার নানুয়া দিঘীর ঘটনা ঘটিয়েছে। তিনি বলেন, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিনষ্ট করে দেশ ও মানুষের কল্যাণের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে তারা।

বুধবার সকালে কুমিল্লা নানুয়া দিঘীর পাড়ে একটি পূজামণ্ডপে পবিত্র কুরআন অবমাননার অভিযোগের ছবি-ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এরপরই ওই মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটে। একপর্যায়ে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষও বাঁধে। এর জেরে চাঁদপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মৌলভীবাজার ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের মন্দিরে হামলার ঘটনা ঘটেছে। এখন পর্যন্ত মন্দির হামলায় চার জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

এর আগে ২০১৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলায় মন্দির ও হিন্দুদের বাড়িঘরে ব্যাপক হামলা-ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটানো হয়েছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভুয়া খবর ছড়িয়ে ব্যাপক সহিংসতা ঘটিয়েছিল দুর্বৃত্তরা।

২০১২ সালে কুমিল্লা নানুয়া দিঘীর পাড় ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগরের মতো একই রকমের ঘটনা ঘটে কক্সবাজারের রামুতে। ওই সময় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে কথিত কুরআন অবমাননার ছবি ছড়িয়ে তাণ্ডব চালানো হয়। রামু উপজেলার ১২টি বৌদ্ধমন্দির এবং বৌদ্ধদের ৩০টি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটে।

এছাড়া ভুয়া খবর ছড়িয়ে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় হিন্দুদের বাড়িঘরে আক্রমণ, অগ্নিসংযোগ, লুটপাটের ঘটনা ঘটে ২০১৭ সালের নভেম্বরে। একইভাবে ২০২০ সালে কুমিল্লার মুরাদপুর, হোমনা, পাবনার সাঁথিয়া, সাতক্ষীরার ফতেহপুরে সাম্প্রদায়িক সহিংসতা ঘটিয়েছিল।

কুমিল্লার ঘটনাকে কেন্দ্র করে এবার সারাদেশে সাম্প্রদায়িক উত্তেজনা ছড়ানোর বিষয়ে সরকার কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছে সরকার। সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ ঘটনায় যারাই জড়িত তাদের আইনের আওতায় আনা হবে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না।

মহানবমীর অনুষ্ঠানে বৃহস্পতিবার গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি শুভেচ্ছা বিনিময়কালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, কিছু মানুষের মধ্যে সব সময় দুষ্টু বুদ্ধি কাজ করে। কোনো জিনিস সুন্দরভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দেখলে সেটা নষ্ট করার চেষ্টা করে। বাংলাদেশে এখন উন্নয়নের পথে দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে, এ যাত্রাটা ব্যাহত করার জন্য দেশে সমস্যা তৈরি চেষ্টা করা হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, কুমিল্লার ঘটনার ব্যাপক তদন্ত হচ্ছে। আমারা এরইমধ্যে অনেক তথ্য পেয়েছি। যারা এ ধরনের ঘটনা ঘটাবে তাদের আমরা খুঁজে বের করবোই। এটা প্রযুক্তির যুগ তাদের খুঁজে বের করা যাবেই। সে যেই হোক না কেনো এবং যে ধর্মেরই হোক না কেন? তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তা করেছি এবং করবো।

আর/এমআর

  • সর্বশেষ
  • পঠিত