ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

মিতু হত্যা মামলা: ভোলার জামিন নামঞ্জুর

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৫ অক্টোবর ২০২১, ০০:১৮

মিতু হত্যা মামলা: ভোলার জামিন নামঞ্জুর

চট্টগ্রামের চাঞ্চল্যকর মিতু হত্যা মামলার অন্যতম আসামি এহতেশামুল হক ভোলার জামিন আবেদন নামঞ্জুর করেছেন আদালত।

রোববার শুনানি শেষে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মেহনাজ রহমান আবেদন নামঞ্জুর করেন। এর আগে ভোলার আইনজীবী কে এম সাইফুল ইসলাম জামিনের আবেদন করেন।

কে এম সাইফুল ইসলাম বলেন, আমরা এ আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করব।

এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাতে ভোলাকে বেনাপোল থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ায় শনিবার বিকেলে চট্টগ্রামের আদালতে তাকে হাজির করা হয়।

চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট শফি উদ্দিন তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন।

আদালত সূত্র জানায়, জবানবন্দিতে ভোলা বলেন- বাবুল আক্তার ২০০৮ সালে চট্টগ্রামে সহকারী পুলিশ সুপার হিসেবে কর্মরত থাকাকালে তার সোর্স ছিলেন কামরুল শিকদার ওরফে মুছা। মুছার সঙ্গে আগে থেকে পরিচয় ছিল ভোলার।

এই ভোলার বিরুদ্ধে ২০টি মামলা রয়েছে। মুছা ভোলাকে বাবুলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। এরপর থেকে বাবুলকে বিভিন্ন তথ্য দিতেন ভোলা।

নগরের ডবলমুরিং থানা এলাকায় গুলি করতে যাওয়া এক ব্যক্তির তথ্য বাবুলকে দেন ভোলা। ওই ঘটনার আসামি ধরে বাবুল বেশ সুনাম কুড়িয়েছিলেন। পরে বাবুলের নির্দেশে মুছাকে ভোলা তার বালুর ব্যবসায় ব্যবস্থাপক হিসেবে নিয়োগ দেন।

জবানবন্দিতে ভোলা জানান, ২০১৬ সালের মে মাসের দিকে কামরুল ইসলাম শিকদার ওরফে মুছা ভোলাকে বলেন, স্যার (বাবুল) পারিবারিক সমস্যায় আছেন। তার স্ত্রীকে খুন করতে হবে। এ জন্য ভোলা যাতে অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন। তখন ভোলা পারিবারিক বিষয়ে না জড়াতে মুছাকে অনুরোধ করেন। কামরুল বিষয়টি বাবুলকে জানিয়ে দেন।

পরে বাবুল ভোলাকে ডেকে পাঠিয়ে বিষয়টি তৃতীয় কোনো ব্যক্তিকে জানালে ঝামেলা হবে বলে হুমকি দেন। এরপর বিষয়টি কাউকে বলেননি ভোলা। হত্যাকাণ্ডে ব্যবহারের জন্য অস্ত্র সংগ্রহ করে দেন ভোলা।

মুছাও শুরুতে রাজি ছিলেন না। তাকে এ কাজ না করলে ‘ক্রসফায়ারের’ হুমকি দিয়েছিলেন বাবুল। এ কারণে কামরুল রাজি হন।

২০১৬ সালের ২৭ জুন চট্টগ্রাম নগরীর বাকলিয়া থানা এলাকা থেকে ভোলাকে গ্রেপ্তার করে গোয়েন্দা পুলিশ। পরে ভোলার স্বীকারোক্তি মতে ভোলার সহযোগী মনিরের হেফাজত থেকে মিতু হত্যায় ব্যবহৃত অস্ত্র উদ্ধার করা হয়। এই ঘটনায় মিতু হত্যা ও অস্ত্রের দুই মামলায় ভোলাকে আসামি করা হয়। ভোলা নগরীর বাকলিয়া থানাধীন রাজাখালী এলাকায় মৃত সিরাজুল হকের ছেলে।

প্রসঙ্গত, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকাল ৭টা ১৭ মিনিটে চট্টগ্রাম নগরীর জিইসি মোড়ে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে করে তিন দুর্বৃত্ত মিতুকে ঘিরে ধরে। প্রথমে তারা তাকে গুলি করে। এরপর কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়। ওই সময় মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার পুলিশ সুপার পদে পদোন্নতি পেয়ে পুলিশ সদর দপ্তরে যোগ দিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছিলেন।

এ ঘটনায় নগরীর পাঁচলাইশ থানায় অজ্ঞাতদের আসামি করে হত্যা মামলা করেন বাবুল আক্তার। মামলাটি চট্টগ্রামের নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে ৩ বছর ১১ মাস তদন্তে থাকার পর গত বছরের মে মাসে মামলাটি পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশনে (পিবিআই) হস্তান্তর করা হয়। মামলাটির তদন্তকারী কর্মকর্তা হলেন পরিদর্শক সন্তোষ কুমার চাকমা।

তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে বাবুল আক্তারকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। এরপর মিতু হত্যাকাণ্ডে বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে মোট ৮ জনের বিরুদ্ধে গত ১২ মে মিতুর বাবা মোশারফ হোসেন পাঁচলাইশ থানায় এজাহার দায়ের করেন।

এজাহারে সাবেক এসপি মিতুর স্বামী বাবুল আক্তার, কিলিং স্কোয়াডের সদস্য মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা, এহতেশামুল হক ওরফে ভোলা, মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম, মো. আনোয়ার হোসেন, মো. খায়রুল ইসলাম ওরফে কালু, ওরফে কসাই কালু, মো. সাইদুল ইসলাম সিকদার ওরফে সাকু মাইজ্যা ও শাহজাহান মিয়াকে আসামি করা হয়েছে। যদিও এদের মধ্যে ২জন পুলিশের সঙ্গে 'বন্দুকযুদ্ধে' ইতোমধ্যে প্রাণ হারিয়েছেন এবং বর্তমানে জেলে আছেন ২জন।

পুলিশের তথ্যমতে, কিলিং স্কোয়াডের নেতৃত্বদানকারী মুসা পলাতক রয়েছেন।

এছাড়া স্ত্রী হত্যা মামলার প্রধান আসামি বাবুল আক্তারকে পাঁচ দিনের রিমান্ড নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করে পিবিআই। রিমান্ড শেষে প্রথমে আদালতে জবানবন্দি দেয়ার কথা থাকলেও পরে জবানবন্দি দেননি বাবুল। ২৯ মে থেকে বাবুল আক্তার ফেনী কারাগারে আছেন।

  • সর্বশেষ
  • পঠিত