ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ১০০ টাকায়

  দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৭ নভেম্বর ২০২১, ১৯:২৮

স্বপ্ন পূরণ হয়েছে ১০০ টাকায়
ছবি: প্রতিনিধি

মা-বাবা দুইজনেই গার্মেন্টসকর্মী। গত ১০ বছর ধরে গাজীপুরের একটি গার্মেন্টস ফ্যাক্টরিতে কাজ করছেন তারা। ছোটবেলা থেকেই ছেলেকে ঢাকায় না নিয়ে নানাবাড়িতে রেখেছেন পড়াশুনার জন্য। নানির কাছে বড় হচ্ছিল রাকিবুল ইসলাম। স্বপ্ন ছিল একদিন পুলিশ হবে। কিন্তু পুলিশ হতে গেলে অনেক টাকার ঘুষ দিতে হয়- এটি সমাজে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে বলে মাঝে মাঝেই চিন্তা হতো পুলিশ হতে পারবে কিনা।

তবে দিনাজপুরের পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেনের তত্ত্বাবধানে শারীরিক যোগ্যতা, মনস্তাত্ত্বিক ও লিখিত পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে পুলিশে ভর্তি হওয়ায় সুযোগ পেয়ে নিজেকে গর্বিত মনে করছেন দিনাজপুর সদরের কাউগার গ্রামের গামের্ন্টসকমী দম্পতি রিয়াজুল ইসলাম ও রেবেকা বেগমের একমাত্র সন্তান রাকিবুল ইসলাম।

রাকিবুল জানান, তিনি কখনোই কল্পনা করেননি বিনা ঘুষে পুলিশ সদস্য হতে পারবেন। পুলিশ সদস্য হয়ে জীবনে কোনদিন দুর্নীতির সাথে জড়াবেন না বলে অঙ্গীকার করেছেন। বাবা-মা দুজনেই গার্মেন্টসকর্মী- এই পরিচয় তিনি গর্বের সাথে দিতে প্রস্তুত।

আজ শনিবার বেলা ১১টার দিকে ১০০ টাকার বিনিময়ে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া ৬২ জন নতুন পুলিশ সদস্যকে দিনাজপুর জেলা পুলিশের কার্যালয়ে স্বাগত জানানো হয়। তাদের পরিবারকেও অভিনন্দন জানিয়েছেন পুলিশ সুপার আনোয়ার হোসেন।

আনোয়ার হোসেন বলেন, রাকিবুল ইসলামের মতো পুলিশ সদস্য হওয়ার হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন ৬২ জন। দিনমজুর, ভ্যানচালক, গার্মেন্টসকর্মী, ভূমিহীন কৃষক ও গাছ কাটা শ্রমিকের সন্তানেরা চাকরি পেয়েছেন। পুলিশ মহাপরিচালকের দিকনির্দেশনায় পুলিশে যোগ দেয়ার আইন সংশোধন ও নতুন সিস্টেম চালু হয়েছে। আজ পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষার সাফল্যে আমি নিজেকেও গর্বিত মনে করছি।

এসপি আরও বলেন, আগে নিয়োগে অনেক দুর্নাম থাকলেও বর্তমানে পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষার আমূল পরিবর্তন করা হয়েছে। স্বচ্ছ জবাবদিহি ও শারীরিক ফিটনেসে যোগ্যতাসম্পন্ন ছেলেমেয়েরা আজ পুলিশে ভর্তি হয়েছে। এখন থেকে পুলিশে নিয়োগ পরীক্ষায় শারীরিক যোগ্যতা, স্বচ্ছতা এবং নতুন সিস্টেম চালু থাকবে এবং নিয়োগ নিয়ে দীর্ঘদিনের দুর্নাম থাকবে না।

পুলিশে নতুন নিয়োগ পাওয়া ভ্যানচালকের ছেলে শরিফুল ইসলাম বলেন, স্বপ্ন আজ পূরণ হয়েছে। বিনা টাকায় ভর্তি হতে পেরে নিজেকে একজন গর্বিত পুলিশ সদস্য মনে করছি। জীবনে যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন পুলিশের সদস্য হয়ে কোনো দুর্নীতি সাথে জড়াবো। সততার সাথে পুলিশে কর্মজীবন শুরু করবো, জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত নিজের পবিত্র দায়িত্ব সততার সাথে পালন করবো।

একই কথা বললেন পুলিশের নতুন সদস্য বর্ষা রানী। তিনি বলেন, গত দুই বছর আগেই আমার মা পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরলোকগমন করেছেন। বাবা নতুন করে বিয়ে না করায় ভাত রান্না, আসবাবপত্র পরিষ্কার-পরিছন্ন করে নিয়মিত কলেজে যাই। কলেজ শেষ করে এসে বাড়ির কাজকর্ম শেষ করতে হয়, এরপর রাতের খাবার তৈরীর পরই বাবা-ভাইকে খাইয়ে আবার নিজের পড়াশুনা করতে হয়। আসন্ন এইচএসসি পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু মনের মধ্যে একটা স্বপ্ন ছিল, একদিন পুলিশ হবো। কখনো এই স্বপ্নের কথা কাউকে বলতে পারিনি।

বর্ষা রানী বলেন, ১০০ টাকার বিনিময়ে পুলিশে ভর্তি ফরম পূরণ করি। যথাসময়ে শারীরিক পরীক্ষা, লিখিত ও মনস্তাত্ত্বিক পরীক্ষা সম্পন্ন করে চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে আজ আমি নিজেকে গর্বিত পুলিশ সদস্য মনে করছি।

তিনি আরও বলেন, সবকিছুই সম্ভব হয়েছে পিতৃতুল্য দিনাজপুর পুলিশ সুপারের দিকনির্দেশনা, মাঠে টিকে থাকার লড়াই আর স্বদিচ্ছার ভিত্তিতে। চূড়ান্ত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর পুলিশে ভর্তি হওয়ার জন্য যে ১০০ টাকা নিবন্ধন করেছিলাম, সেই ১০০ টাকাসহ আরও ২০ টাকার নতুন নোট আমাকে ফেরত দিয়েছেন এসপি স্যার। এই নোট দুটি আমি যতদিন বেঁচে থাকবো, ততদিন যত্ন সহকারে রেখে দেবো। এই ১২০ টাকা আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ উপহার হিসেবে সাজিয়ে রাখবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত