ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বাস মালিকদের অঘোষিত চাঁদাবাজি থামবে কবে

  মো. ফরহাদ উজজামান

প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:১৩  
আপডেট :
 ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ২১:১৫

বাস মালিকদের অঘোষিত চাঁদাবাজি থামবে কবে
প্রতীকী ছবি

জ্বালানি তেলের দাম বাড়ার পর সরকারের পক্ষ থেকে বাস ভাড়া বাড়ানোরও ঘোষণা দেয়া হয়। তারপরও নির্ধারিত মূল্যর চেয়ে অতিরিক্ত বাস ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য চলছেই। এখনও বন্ধ হয়নি সিটিং সার্ভিস, গেটলক ও ওয়েবিল।

ভাড়া বৃদ্ধির পর বিভিন্ন রুটে হাফ পাস বা অর্ধেক ভাড়া দেয়া নিয়ে বাসের সহযোগী ও চালকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডা ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পরিবহন মালিক সমিতির নির্দেশের পরও চলছে ওয়েবিল সিস্টেমে। নিরাপদ সড়কের দাবি নিয়ে আন্দোলন চললেও সড়কে প্রতিনিয়ত ঝরছে প্রাণ। চলমান আন্দোলনের মধ্যে নটরডেম শিক্ষার্থী নাঈম হাসান গাড়িচাপায় নিহত হওয়ার পর শিক্ষার্থীরা আরও বিক্ষুব্ধ হয়।

সর্শেষ দুই বাসের প্রতিযোগিতায় আবারও প্রাণ হারালো এক শিক্ষার্থী। রামপুরায় অনাবিল পরিবহনের বাসের ধাক্কায় নিহত হয় মাইনুদ্দীন ইসলাম নামের এ শিক্ষার্থী। এনিয়ে গত ২৪ নভেম্বর থেকে রাজধানীতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন আরও তীব্র হয়। এর ফলে সড়কে বিপাকে পড়ছেন যাত্রীসহ শ্রমিকরাও। যেন অঘোষিত এসব চাঁদাবাজদের থামানোর কেউ নেই।

এর আগে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহ জানিয়েছিলেন, গত ১৪ নভেম্বর থেকে সিটিং-গেটলক সার্ভিস বন্ধ থাকবে। এ নির্দেশনা না মানলে বাসের লাইসেন্স ও রুট পারমিট বাতিল করা হবে। বাস মালিকের বিরুদ্ধেও নেয়া হবে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা।

তবে, সরেজমিনে তার কোনো কিছুই কার্যকর হতে দেখা যায়নি। এমনকি ডিজেল ও সিএনজিচালিত বাসে আলাদা স্টিকার লাগানোর কথা থাকলেও সেটিও মানা হয়নি।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও যাত্রীদের অভিযোগ, এখনো সিটিং সার্ভিস বা গেটলক নামে অনেক বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে নগরীর গণপরিবহনগুলোতে। ১ ডিসেম্বর থেকে ঢাকার মধ্যে শিক্ষার্থীদের হাফ ভাড়া কার্যকর করার কথা থাকলেও নেয়া হচ্ছে না সেভাবে। মানা হচ্ছে না কোনো নিয়ম। ভাড়ার চার্ট দেখতে চাইলেও দেখানো হচ্ছে না। বাসে ওয়েবিলের নামে সর্বনিম্ন ভাড়া ১৫ টাকা আদায় করা হচ্ছে। ২৬ শতাংশ বাড়লে সেখানে নতুন ভাড়া হওয়ার কথা সর্বোচ্চ ১৩ টাকা। সেখানে ভাড়া নেয়া হচ্ছে ১৫ থেকে ২০ টাকা। কোনো পরিবহনে ২০ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৩০ টাকা। ২৫ টাকার ভাড়া নেয়া হচ্ছে ৪০ টাকা। অথচ নতুন ভাড়ায় সঠিক হিসাব করলে কোনো কোনো বাসে ভাড়া কমে আসার কথা।

তবে শ্রমিকরা বলছে, মালিক পক্ষ থেকে যাত্রীদের কাছ থেকে ওয়েবিলেই ভাড়া নিতে বলা হয়েছে। আর এখনো হাফ ভাড়ার বিষয়ে বাসের সব শ্রমিকরা জানে না। আবার যাত্রীরাও ওয়েবিলে ভাড়া দিতে রাজি নন। এ নিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কন্ডাক্টর-চালকের বাকবিতণ্ডা ঘটছে। কোথাও কোথাও হাতাহাতি পর্যন্ত হয়েছে।

এ বিষয়ে রাজধানীর বিভিন্ন পরিবহন শ্রমিকরা জানান, এখনো অনেক গাড়ি ওয়েবিলে চলে। কারণ মালিকদের থেকে সেভাবেই আমাদের বাস নিয়ে আসতে হয়।

বুধবার ও রাজধানীর বিভিন্ন রুট ঘুরে দেখা গেছে, ডিজেলচালিত বাসের পাশাপাশি সিএনজিচালিত বাসগুলোও ভাড়া বাড়িয়েছে ৪০-৪৫ শতাংশ। কিলোমিটারপ্রতি ভাড়া পড়ছে দুই টাকারও বেশি। কোথাও আবার তা সাড়ে তিন থেকে চার টাকা।

এদিকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে বাসে ডিজেলচালিত স্টিকার লাগানো দেখা গেলেও সিএনজিচালিত কিছু স্টিকার শুধু তুরাগ পরিবহনের কয়েকটা বাসে দেখা গেছে। আবার কিছু বাসে কোনো স্টিকারই চোখে পড়েনি।

মাঠ পর্যায়ে প্রশাসনকেও মোবাইল কোর্ট পরিচালনার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সড়কে মোবাইল কোর্টের অস্তিত্ব তেমন চোখে না পড়ায় ক্ষুব্ধ যাত্রীরা বলছেন, সড়ক পরিবহনমন্ত্রীর এমন হুঁশিয়ারি নতুন কিছু নয়। হুঁশিয়ারিই দিয়ে যাচ্ছেন তিনি। কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না।

এ বিষয়ে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নাম প্রকাশ না করার শর্তে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, আমরা বর্ধিত ভাড়া কার্যকরের পর অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, বাসে স্টিকার লাগানো আছে কি না এবং ডিজেলচালিত বাস না হলেও নতুন নির্ধারিত ভাড়া আদায় করা হচ্ছে কি না, তা আমরা মনিটরিং করছি।

অথচ সরকারিভাবে শহরের অভ্যন্তরে চলাচলকারী বাস-মিনিবাসের ভাড়া বাড়ানো হয়েছে ২৬ দশমিক ৫ শতাংশ এবং আন্তঃজেলা বাসের ভাড়া ২৭ শতাংশ। নতুন ভাড়া আদায়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি বাস কর্তৃপক্ষেরই দাবি তাদের গাড়ি গ্যাসে নয়, ডিজেলে চলে। কিছু গাড়িতে আবার গ্যাসের মিটারও খুলে রাখা হয়েছে।

রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ঘুরে দেখা গেছে, মিডলাইন, রজনীগন্ধা, বিকাশ, লাব্বায়েক, মৌমিতা, ঠিকানা, ট্রান্স সিলভা, বাহন, মনজিল এসব পরিবহনের গাড়ি এখনও চলছে ওয়েবিল সিস্টেমে। কারও কথার বা সিদ্ধান্তের গুরুত্ব নেই এসব পরিবহনের মালিক ও শ্রমিকদের কাছে।

রাস্তার এই নৈরাজ্যময় পরিস্থিতি বিআরটিএ মনিটরিং করছে। তবে সংখ্যায় কম হওয়ায়, এর সুফল যাত্রীরা পাচ্ছেন না। এই অভিযান বা মনিটরিং বাস মালিক বা শ্রমিকদের কাছে কোনো গুরুত্বও পাচ্ছে না। বিআরটিএ মনিটরিং করছে দাবি করলেও প্রয়োজনের তুলনায় সে মনিটরিং অনেক কম।

এবিষয়ে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, বাস ভাড়ার এই নৈরাজ্য বন্ধ করতে হলে রাষ্ট্রের নিজের ৫০ শতাংশ বাসের মালিকানা থাকতে হবে। ব্যক্তি মালিকানার বাসগুলোকেও মনিটরিং করতে হবে।

বাস ভাড়া নিয়ে এ নৈরাজ্য বন্ধ হবে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আব্দুল্লাহপুর থেকে মতিঝিল বিআরটিসির এসি বাস চালু করেছিলো। যার ভাড়া ছিলো ৭০ টাকা। আর গ্রিন ঢাকা বাস ভাড়া নিতো ১০০ টাকা। ৭০ টাকা ভাড়া নিয়েও বিআরটিসি বাসে কোনো লোকসান হয়নি। প্রতিটি সিটেই ভাড়া বেশি নেয়া হতো ৩০ টাকা। এই গ্রিন ঢাকা বাসের মালিকানা আছে সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব এনায়েত উল্লাহর। তিনি প্রসাশনকে কৌশল করে বিআরটিসির এই এসি বাস বন্ধ করে দেন।

তিনি বলেন, কোম্পানির নামে একটা ব্যানার রেজিস্ট্রিশন করে ২০০ টা বাসের মধ্যে এসব মালিক সমিতির নেতাদের নিজেদের ১০ টা গাড়ি থাকে। বাকি ১৯০ টা গাড়িতে তারা ওয়েবিলের কথা বলে চাঁদাবাজি করে।

প্রসঙ্গত, গত ৪ নভেম্বর মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বাড়ায় সরকার। এর পরদিন থেকে হঠাৎ করেই ধর্মঘটের ডাক দেয় গণপরিবহন ও পণ্য পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। সড়ক পথে তিনদিন এবং নৌপথে দুইদিন ধর্মঘটের পর সরকারিভাবে গণপরিবহনের ভাড়া বাড়ানোর পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার (৮ নভেম্বর) থেকে ধর্মঘট প্রত্যাহার করে বাস ও লঞ্চ মালিক সমিতি। এরপর থেকেই শুরু হয় ভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত