ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

সাকরাইন: ঘুড়ি ও ফানুশে মুখর পুরান ঢাকার আকাশ

  অনুপম মল্লিক আদিত্য

প্রকাশ : ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:৪০  
আপডেট :
 ১৫ জানুয়ারি ২০২২, ০০:৫৭

সাকরাইন: ঘুড়ি ও ফানুশে মুখর পুরান ঢাকার আকাশ
ছবি- প্রতিনিধি

পৌষ মাসের শেষ দিন বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশেই একটি উৎসবের আয়োজন করা হয় যা পৌষসংক্রান্তি হিসেবে পরিচিত। রাজধানীর পুরান ঢাকায় এ উৎসবকে বলা হয় 'সাকরাইন'। এ উপলক্ষে বাড়ির ছাদে ছাদে চলে ঘুড়ি ওড়ানোর এক অঘোষিত প্রতিযোগিতা। সন্ধ্যার পর শুরু হয় বাসার ছাদে ছাদে গানবাজনার অনুষ্ঠান। আগের মতো আজও এ উৎসব উদ্‌যাপন করা হয়।

বিকাল সাড়ে তিনটার দিকে গেন্ডারিয়া থানা আওতাধীন ধোপখোলা ঢুকতেই দেখা গেল, আকাশজুড়ে লাল, নীল, বেগুনিসহ বাহারি রঙের ঘুড়ির মেলা। একে একে নারিন্দা, মুরগীটুলা, পাতলাখান লেন, বানিয়ানগর, সূত্রাপুর, কাগজিটুলা, লক্ষ্মীবাজার, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা, শাখারীবাজারসহ পুরান ঢাকার বেশির ভাগ ছাদে ছাদে ছেলে-মেয়ে থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরীর ভিড়। গানবাজনার তালে তালে চলে তাদের ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা।

শাখারীবাজার এলাকার কয়েকজনের যুবকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, দাম ও মানের ধরণভেদে হরেকরকম ঘুড়ি পাওয়া যায়। ঘুড়িগুলোর নামও বেশ চমৎকার। ভুয়াদর, ছাতা, কচ্ছপ, লাটিম, প্রজাপতি, তারা, চোখদার, পানদার, বলদার, দাবাদার, লেজওয়ালা, পতঙ্গ ইত্যাদি আরও অনেক নামের ঘুড়ি পাওয়া যায়।

জানা যায়, উৎসব শুরুর দু-এক দিন আগেই এসব ঘুড়ি কিনে রেখেছিলেন শিশু-কিশোর, তরুণ-তরুণীরা। পুরান ঢাকার অধিকাংশ ঘুড়ি পাওয়া যায় নগরীর শাখারীবাজার এলাকায়।

কয়েকজন দোকানীর সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, ঘুড়িগুলো পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে রয়েছে শত শত টাকার। ঘুড়িতে ব্যবহৃত নাটাই পঞ্চাশ টাকা থেকে শুরু হয় এবং নাটাইয়ে ব্যবহৃত সুতা যা পাঁচ টাকা থেকে শুরু করে কয়েক হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে।

কিছুদিন আগে থার্টি ফার্স্ট নাইটে ফানুস ওড়ানোর কারণে নগরির বেশ কয়েকটি এলাকায় ঘটে অগ্নি দুর্ঘটনা। যার কিছুটা কারণ হিসেবে আতশবাজিকে দায়ী করেছেন তদন্ত কর্মকর্তারা। তাই দোকানগুলোতে সহজে ফানুশ আর আতশবাজি পাওয়া যাচ্ছেনা, রয়েছে পুলিশের নজরদারি। অনেকসময় পরিচিত ক্রেতা আসলে তার কাছে গোপনে এগুলো বিক্রি করে বিক্রেতারা, তবে নির্ধারিত দাম অপেক্ষা বেশি দামে।

এদিকে গোধূলি লগ্ন কাটতেই ঘুড়ি ওড়ানোর খেলা পরিণত হয় আলোর খেলায়। বেশির ভাগ বাড়ির ছাদই আলোকসজ্জা করা। কোনো বাড়ির ছাদ থেকে ফোটানো হয় আতশবাজি, কোনো বাড়ির ছাদ থেকে ওড়ানো হয় ফানুস। কোথাও কোথাও মুখে কেরোসিন নিয়ে মশালে ফুঁ দিয়ে তৈরি করা হয় আগুনের হলকা।

উল্লেখ্য, পুরান ঢাকাবাসী যাকে সাকরাইন বলেন তা মূলত ‘পৌষসংক্রান্তি’ বা সংক্ষেপে ‘সংক্রান্তি’ নামে পরিচিত। পুরান ঢাকায় যেসব উৎসব যুগের পর যুগ পালিত হয়ে আসছে, তার মধ্যে এই সাকরাইন ই অন্যতম। এই সংক্রান্তিকে কেন্দ্র করে দক্ষিন এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার অনেক দেশেই এই উৎসব পালিত হয়ে থাকে। দেশ থেকে দেশান্তরে অতিবাহিত হয়ে আসতে আসতে এটি পুরান ঢাকার একটি সার্বজনীন উৎসবে রূপ নিয়েছে। ভারতবর্ষে এই উৎসবের নাম “মকর সংক্রান্তি” এবং বঙ্গদেশে এটাকে “পৌষ সংক্রান্তি” নামেই ডাকা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এএম

  • সর্বশেষ
  • পঠিত