ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১০ মিনিট আগে
শিরোনাম

নানা লক্ষণ নিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা, তবুও নেই স্বাস্থ্যবিধি

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:২৫  
আপডেট :
 ১৯ জানুয়ারি ২০২২, ২০:৪০

নানা লক্ষণ নিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে করোনা, তবুও নেই স্বাস্থ্যবিধি
ছবি: প্রতিনিধি

করোনাভাইরাস আবার স্বরূপে ফিরতে শুরু করেছে চট্টগ্রামে। ধীরে ধীরে বাড়ছে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা এবং মৃত্যুর সংখ্যা। গত ২৪ ঘণ্টায় একদিনের ব্যবধানেই সংক্রমণ হার বেড়েছে প্রায় ৮ শতাংশ। আগের দিন যেখানে শনাক্ত ২৩ শতাংশের মধ্যে ছিল, তা এখন প্রায় ৩১ শতাংশের দ্বারপ্রান্তে এসে দাঁড়িয়েছে। গত একদিনে চট্টগ্রামে করোনা করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৯৮৯ জন। একই সময়ে করোনা আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে ১ জনের।

আশঙ্কাজনক হারে করোনা বাড়ায় ইতোমধ্যে সরকার বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। চট্টগ্রামের লাগামহীন করোনা শনাক্তের সংখ্যা বাড়ায় শঙ্কিত চিকিৎসকরা। মাস্ক ব্যবহার ও স্বাস্থ্যবিধি মানার ওপর জোর তাগিদ তাদের। তবে করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারি নির্দেশনায় অনীহা দেখাচ্ছে সাধারণ মানুষ। স্বাস্থ্যবিধি মেনে যত সিট ততো যাত্রী নিয়ে বাস চলার নির্দেশনা থাকলেও বাস্তবে দেখা গেছে ভিন্ন চিত্র। চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাসে নির্ধারিত আসনের অতিরিক্ত যাত্রী নিয়ে বাস চলাচল করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি ও সামাজিক দূরত্ব মানার ব্যাপারে উদাসীন ছিল বাসযাত্রী ও পরিবহন শ্রমিকরা।

এদিকে চলতি মাসের শুরু থেকে হঠাৎ হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হতে শুরু করেছে। ইতোমধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতাল, মা ও শিশু হাসপাতাল, ফৌজদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালসহ নগরের বেসরকারি কম-বেশি হাসপাতালগুলোতেও রোগী ভর্তি শুরু হয়েছে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায়, তাদের গুছিয়ে নেয়া শয্যাগুলো পুনরায় সাজাতে শুরু করেছে।

বুধবার সকাল থেকে চট্টগ্রাম নগরীর আগ্রাবাদ, দেওয়ানহাট, টাইগারপাস, জিইসি, দুই নম্বর গেট, বহদ্দারহাট ও নিউমার্কেট এলাকা ঘুরে দেখা যায়, গণপরিবহন শ্রমিক (বাস) ও যাত্রীদের মধ্যে কোন সচেতনতা নেই। বাস চালক-সহকারী ও যাত্রীদের অধিকাংশের মুখে মাস্ক ছিল না। আসন না পেয়ে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যেতে দেখা যায় অনেক যাত্রীকে। শুধু গণপরিবহনগুলোতেও নয় জনসমাগম ঘটে এমন জায়গাগুলো মানা হচ্ছে না স্বাস্থ্যবিধি।

বহদ্দারহাটগামী ৬ নং বাসের চালক সোহান বলেন, সকালে অফিস টাইমে এবং বিকালে ছুটির সময় নিয়ম মানা যাচ্ছে না। তখন যাত্রীদের গাড়িতে উঠতে না দিলে আমাদের ওপর চড়াও হন তারা। যখন অফিস টাইম থাকে না তখন সিটের অতিরিক্ত যাত্রী নিই না।

নগরীর একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকরিজীবী মোহাম্মদ হোসেন বলেন, মানুষ সচেতন না হলে করোনা থেকে কখনোই রেহাই পাওয়া যাবে না। চালক-হেলপার কেউই মাস্ক পড়ছে না। তার ওপর যাত্রী নিচ্ছে সিটের অতিরিক্ত। সরকার নির্দেশনা দিয়েই চুপ। কয়েক জায়গায় মোবাইল কোর্ট বসালেও খুব একটা কাজ হচ্ছে না। মোড়ে মোড়ে ট্রাফিক পুলিশ দিয়ে চেকিং করানো উচিৎ।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের সিনিয়র কনসালটেন্টে ডা. আব্দুর রব মাসুম বলেন, চট্টগ্রামে করোনার সংক্রমণ বাড়ছে। কাজেই সচেতন থাকা খুবই জরুরি। ডাবল ডোজ টিকা নিলে করোনা আক্রান্ত হবে না, ব্যাপারটা তেমন নয়। টিকা মানুষকে করোনার সংক্রমণ থেকে রক্ষা করতে পারবে না, তবে সংক্রমিত হলে প্রতিরোধ তৈরি করতে পারবে।

সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ৬৩ জন সাধারণ ওয়ার্ডে এবং আইসিইউতে ৪ জন করোনা রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া ফৌজাদারহাটের বিআইটিআইডি হাসপাতালে ১১ জন, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৭ জন, চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে আইসিইউতে ১০ জন এবং সাধারণ ওয়ার্ডে ২৫ জন এবং সিএমপি বিদ্যানন্দ হাসপাতালে ১০ জন করোনা রোগী ভর্তি রয়েছেন। তার বাইরে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে ২১ জন, ইমপেরিয়াল হাসপাতালে ৩৩ জন, ম্যাক্স হাসপাতালে ১২ জন, সিএসসিআর হাসপাতালে ২ জন, ন্যাশনাল হাসপাতালে ১ জন ভর্তি থাকার তথ্য পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. মোহাম্মদ ইলিয়াছ চৌধুরী বলেন, যেভাবে সংক্রমণ বাড়ছে, তাতে হাসপাতালেও রোগীর সংখ্যা বাড়তে পারে। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি হওয়া শুরু হয়েছে। তবে আমরা রোগীদের চিকিৎসা নিশ্চিতের বিষয়ে প্রস্তুত আছি। ইতোমধ্যে আমরা হাসপাতাল সংশ্লিস্টদেরও বলেছি, তারাও যেন প্রস্তুত থাকেন। আশা করছি কোনো সমস্যা হবে না।

এদিকে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তদের ক্ষেত্রে এবারে নতুন করে রক্তে সোডিয়ামের মাত্রা কমে যাওয়ার ঘটনা ঘটছে। এক্ষেত্রে একইসঙ্গে আবার রোগীর ডায়রিয়া হচ্ছে। বমিও করছেন। এমন সব উপসর্গ দেখতে পাচ্ছেন কর্মরত চিকিৎসকরা।

চট্টগ্রামে বিশেষজ্ঞ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রক্তের ঘনত্ব নির্ভর করে রক্তের সোডিয়ামের পরিমাণের ওপর। তাই রক্তে কোনো কারণে সোডিয়ামের মাত্রা এদিক-সেদিক হলে রক্তের ঘনত্ব পাল্টে যায়। রক্তে সোডিয়ামের স্বাভাবিক মাত্রা থাকে প্রতি লিটারে ১৩৬-১৪৫ মিলিমোল। রক্তে সোডিয়াম কমে গেলে তাকে ‘হাইপোনেট্রেমিয়া’ বলা হয়। হাইপোনেট্রেমিয়ায় বমি ভাব, নিস্তেজ ভাব, দুর্বলতা, অসংলগ্ন কথাবার্তা, চিন্তাভাবনা থেকে শুরু করে খিঁচুনি ও এমনকি অজ্ঞান হয়ে পড়ার মতো জটিলতা দেখা দিতে পারে।

এ বিষয়ে চট্টগ্রাম মেডিকেল সেন্টারের চিকিৎসক ডা. কামরুল আলম বলেন, করোনার আগের ভ্যারিয়েন্টগুলোতেও ডায়রিয়া বা বমি হতো। কিন্তু বর্তমানে এই লক্ষণগুলো প্রকট আকারে দেখা যাচ্ছে। এটা হয়তো নতুন ভ্যারিয়েন্টের কারণে হচ্ছে। তবে নিশ্চিত নই। যেহেতু এখন পর্যন্ত নতুন ভ্যারিয়েন্টের জিনোম সিকোয়েন্সও সেভাবে হয়নি।

চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক ডা. সেখ ফজলে রাব্বী বলেন, আসলে নতুন ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে কিনা সেটা এখনও জানা যায়নি। আমাদের এখানে জিনোম সিকোয়েন্স করার সুবিধাটাও অত বেশি তো না। তবে আমরা রোগীদের উপসর্গ দেখে চিকিৎসা দিচ্ছি।

চট্টগ্রামে এখন পর্যন্ত ১ লাখ ৭ হাজার ৪৪৬ জনের দেহে করোনা শনাক্ত হয়েছে। তাদের মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৭৮ হাজার ২৬৭ জন। বাকি ২৯ হাজার ১৭৯ জন বিভিন্ন উপজেলার। আক্রান্তদের মধ্যে এখন পর্যন্ত মোট ১ হাজার ৩৪১ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে ৭২৭ জন নগরের। আর বিভিন্ন উপজেলায় মৃত্যু হয়েছে ৬১৪ জনের।

এদিকে গত এক সপ্তাহের তথ্য বিশ্লেষণে ঢাকা ও রাঙামাটির পর চট্টগ্রামসহ দেশের ১০ জেলাকে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের রেড জোন বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ঘোষণা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত