ঢাকা, বুধবার, ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৪ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২২ মিনিট আগে
শিরোনাম

হুমকিতে এলাকা ছাড়লো গাছিরা, খেজুর গুড় তৈরি বন্ধ

  ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২২ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৪৭

হুমকিতে এলাকা ছাড়লো গাছিরা, খেজুর গুড় তৈরি বন্ধ
ছবি: প্রতিনিধি

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বোচাপুুকুর এলাকার গড়ে উঠেছে একটি খেজুরের বাগান। চার বছর ধরে শীত মৌসমে এই বাগানের খেজুরের রস থেকে উৎপাদন হচ্ছিলো গুড়। তবে এই মৌসমের মাঝামাঝিতেই চাঁদাবাজের হুমকিতে এলাকা ছেড়ে পালিয়ে যেতে হয়েছে গাছিদের।

জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও সুগারমিলের এই বাগানে ৫০০টি ছোট-বড় খেজুর গাছ ছিলো। ২০১৮ সালে রাজশাহীর কয়েকজন গাছি বাগানটি লিজ নেয়। তারা গাছের রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করছিল। ধীরে ধীরে খেজুরের রস ও রস থেকে তৈরি করা গুড় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল জেলাজুড়ে। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে এখানকার গুড় যাচ্ছিল রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। প্রতিদিন জেলার বিভিন্ন মানুষ ভিড় করতো বাগান দেখতে, খেজুরের রস খেতে কিংবা গুড় তৈরি দেখতে।

প্রতিবারের মতো এবছরও রাজশাহীর গাছিরা এই বাগানে রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি শুরু করেন। তবে তাদের অভিযোগ, কিছুদিন আগে একদল যুবকের দেয়ার হুমকির ভয়ে গুড় তৈরি বন্ধ করে তারা এলাকা ছেড়ে পালিয়েছেন।

শনিবার (২২ জানুয়ারি) সকালে খেজুরের গুড় তৈরির বিষয়ে তথ্য সংগ্রহ করতে গেলে সেখানে গাছিদের দেখা পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হয় গাছি দলের প্রধান কারিগর সুজন আলীর সাথে।

এ বিষয়ে সুজন আলী মুঠোফোনে জানান, কিছুদিন আগের এক রাতে কয়েকজন লোক এসে বিনামূল্যে খেজুরের রস খেতে চায়। তাদের রস খেতে না দিলে কিছু কথা কাটাকাটি হয়। এতে তারা নানা রকম হুমকি দেয়। রাতে এসে হত্যা করবে বলে হুমকি দেয়।

সুজন আলী বলেন, খেজুর বাগানে এক-দুইদিন পর পর এসে তারা এভাবে চাঁদা দাবি করে ও হুমকি দেয়। ৫ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত তারা চাঁদা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না পেয়ে আমরা বাধ্য হয়ে গুড় তৈরির কাজ বন্ধ করে বাড়ি চলে আসি।

চাঁদা দাবি করা ও হুমকি দেয়া ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চাইলে সুজন আলী জানান, চাঁদা দাবি করা ও হুমকি দেয়া ব্যক্তিরা রাতের আঁধারে আসতো। নাম-পরিচয় জানতে চাইলে তারা পরিচয় দিত না। তাই তাদের নাম ও পরিচয় জানা যায়নি।

সুজন আলী স্থানীয় প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেছে কিনা তা জানতে চাইলে বলেন, আমাদের বাড়ি অনেক দূরে। রাতের আঁধারে তারা যদি সেখানে আমাদের মেরে ফেলতো কে আসতো আমাদের বাঁচাতে? তাই প্রাণের ভয়ে আমরা প্রশাসনকে বিষয়টি জানাইনি।

তিনি আরও বলেন, আমরা মাঘ মাসের ২০ তারিখ পর্যন্ত খেজুর রস সংগ্রহ করে গুড় তৈরি করতাম। কিন্তু হুমকি ও চাঁদা দাবি করার কারণে গত সপ্তাহে আমরা বাড়ি চলে আসি।

এ বিষয়টি শুনে স্থানীয়রা জানান, এটি খুব দুঃখজনক বিষয়। কিছু অসাধু লোকের জন্য আমাদের জেলার সুনাম ক্ষুণ্ণ হচ্ছে। এই বিষয়গুলো এড়াতে প্রশাসনকে আরও তৎপর হতে হবে।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামন বলেন, বিষয়টি অত্যান্ত দুঃখজনক। গাছিরা বিষয়টি যদি আমাকে অবগত করতো তাহলে তাৎক্ষণিক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেত। ভয় পেয়ে গাছিরা গুড় তৈরির কাজ বন্ধ না করে তাদের উচিত ছিল প্রশাসনকে অবগত করা। আগামীতে এরকম কোনো কিছু হলে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত