ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

চিৎকার করে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কথা জানালেন আব্দুস সাত্তার

  নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩১  
আপডেট :
 ২৩ জানুয়ারি ২০২২, ১৯:৩৫

চিৎকার করে স্ত্রী-সন্তানকে হত্যার কথা জানালেন আব্দুস সাত্তার
ছবি: প্রতিনিধি

নাটোর শহরের চৌকিরপাড় এলাকায় পারিবারিক কলহের জের ধরে স্ত্রী মাসুরা বেগম (২০) ও শিশু কন্যা মাহমুদাকে (৩) শ্বাসরোধ করে হত্যা করেছেন আব্দুস সাত্তার। ঘটনার পর আব্দুস সাত্তারকে আটক করেছে পুলিশ।

রোববার দুপুরে শহরের উত্তর চৌকিরপাড় এলাকায় এই জোড়া খুনের ঘটনাটি ঘটে। আটককৃত আব্দুস সাত্তার একই এলাকার মৃত হযরত আলীর ছেলে। সে পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী।

পুলিশ ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৫/৬ বছর আগে সদর উপজেলার গোয়ালডাঙ্গা গ্রামের মাসুরা খাতুনের সাথে শহরের উত্তর চৌকিরপাড় এলাকার পুরাতন কাপড়ের ব্যবসায়ী আব্দুস সাত্তারের বিয়ে হয়। বিয়ের পর তাদের সংসারে একটি ছেলে ও একটি মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। তাদের নিয়ে আব্দুস সাত্তার টিনের ছাউনির আধাপাকা বাড়িতে বসবাস করতেন।

আরও পড়ুন: নাটোরে স্ত্রী-কন্যাকে গলাটিপে হত্যা করলো স্বামী

আব্দুস সাত্তার ও মাসুরা বেগমের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরেই পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে মাঝে মাঝেই দ্বন্দ্ব হতো। এক পর্যায়ে শনিবার রাতের কোনো এক সময় আব্দুস সাত্তার স্ত্রী মাসুরা বেগম ও কন্যা মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যার পর গলায় রশি দিয়ে ঝুলিয়ে রাখেন। সকালে ঘরে তালা ঝুলিয়ে তিনি বাড়ির বাহিরে যায়।

দুপুরে বাড়ি ফিরে আসার পর ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন। লাশ দুটি গুম করার উদ্দেশ্যে বস্তাবন্দি করার সময় প্রতিবেশী ও সজনদের সন্দেহ হলে তারা আব্দুস সাত্তার ও তার স্ত্রীর নাম ধরে ডাকাডাকি শুরু করে। কিন্তু ঘরের দরজা না খুলে আব্দুস সাত্তার চিৎকার করে বলতে থাকেন তিনি তার স্ত্রী ও কন্যাকে হত্যা করেছেন। এ কথা শোনার পর প্রতিবেশীসহ স্বজনরা দরজা ভেঙে ভেতরে ঢুকে মা ও মেয়েকে মৃত অবস্থায় দেখতে পায়।

পরে খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে ঘাতক স্বামী আব্দুস সাত্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। মা ও শিশু কন্যার মৃতদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য নাটোর সদর হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারিক জুবায়েরসহ অন্য পুলিশ কর্মকর্তারা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।

এদিকে মেয়ে ও নাতনিকে খুন করে মেরে ফেলার খবর পেয়ে নানা মেছের আলী ও নানি আছিয়া বেগম গোয়ালডাঙ্গা গ্রাম থেকে ছুটে যান। এ সময় তারা বিলাপ করতে থাকেন এবং হত্যাকারীর ফাঁসি দাবি করেন।

নিহত মাসুরার মা আলেয়া বেগম জানান, বিয়ে দেয়ার পর থেকে তার মেয়েকে নির্যাতন করতে থাকে জামাতা, শাশুড়ি ও ননদসহ ওই পরিবারের সদস্যরা। জামাতা সাত্তার মাঝে-মধ্যেই যৌতুকের টাকা দাবি করতো। প্রতিবেশীদের সাথে তার মেয়েকে কথা বলতে দিত না। তিনি তার মেয়ে ও নাতনির হত্যাকারীদের ফাঁসির দাবি জানান।

এলাকাবসীরা জানান, দীর্ঘ কয়েক বছর সংসার জীবন কাটালেও প্রতিবেশীদের কেউ মাসুরা নাম জানতে পারেননি। সাত্তার তার বউকে কারো সাথে কথা বলতে বা মিশতে দিতেন না। সবাই জানতেন সাত্তারের বউ খুব পর্দানশীল।

ঘাতক আব্দুস সাত্তার হত্যাকাণ্ডার কথা প্রকাশ্যে স্বীকার করে চিৎকার করে বলেন, তিনি নিজে স্ত্রী ও তার কন্যা সন্তানকে হত্যা করেছেন। শনিবার রাতে তাদের মেরে ফেলেছেন। স্ত্রীকে হত্যার পর তার কন্যা খুব কান্নাকাটি করছিল। তখন কান্না থামানোর জন্য শিশু কন্যা মাহমুদাকে আছড়িয়েছেন। পরে গলা টিপে মেরে ফেলেছেন।

নাটোর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মনছুর রহমান জানান, বিয়ের পর থেকেই যৌতুকের টাকার জন্য স্ত্রী মাসুরা বেগমের সাথে স্বামী আব্দুস সাত্তারের পারিবারিক বিরোধ চলে আসছিল। এ নিয়ে তাদের মধ্যে ঝগড়া-বিবাদ লেগেই থাকতো। শনিবার রাতে খাওয়া শেষে আব্দুস সাত্তার স্ত্রী ও ছেলে মেয়েকে নিয়ে ঘরে ঘুমাতে যায়। রাতের কোনো এক সময় আব্দুস সাত্তার তার স্ত্রী মাসুরা বেগম ও কন্যা সন্তান মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখে।

এ সময় সাত্তার তার ছেলেকেও মারধর করে ঘরের মধ্যে আটকে রাখে। পরে দুপুরে মরদেহ দুইটি গুম করতে জন্য বস্তাবন্দি করার সময় পরিবারের অন্য সদস্যরা দেখতে পেয়ে পুািলশে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে মরদেহ দুইটি উদ্ধার ও ঘটনাস্থল থেকে সাত্তারকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। প্রাথমিক তদন্তে মা ও মেয়েকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করা হয়েছে বলে প্রতিয়মান হচ্ছে। এ ব্যাপারে পরিবারের অন্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান ওসি।

নাটোরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার তারেক জুবায়ের জানান, ‘২২ জানুয়ারি রাতে আব্দুস সাত্তার তার স্ত্রী মাছুরাকে এবং শিশুকন্যা মাহমুদাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। অবস্থাদৃষ্টে মনে হয় আব্দুস সত্তার অত্যন্ত ধুরন্ধর প্রকৃতির লোক। সে পরিবারের অন্যদের সহযোগিতায় মরদেহ দুটি সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করে। পুলিশ বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে।

প্রতিবেশীদের অভিযোগ, পাঁচ বছর আগে আব্দুস সাত্তার বিয়ে করলেও তার স্ত্রীকে পাশের প্রতিবেশীদের নারী-পুরুষ কেউই দেখেননি। আব্দুস সাত্তার তার স্ত্রী-সন্তানকে ঘরের মধ্যে তালাবদ্ধ করে বাইরে যেত। তার স্ত্রীকে বাইরে বের হতে দিত না। এই হত্যার ঘটনায় এলাকাবাসী ফুঁসে উঠেছে। তারা আবদুস সাত্তারের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চান।

উল্লেখ্য, আব্দুস সাত্তার এর আগেও একটি বিয়ে করেছিলেন। সেই স্ত্রী নির্যাতনের কারণে পালিয়ে যান।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত