ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বইমেলার সময় বাড়লে গুনতে হবে না লোকসান

  ছৈয়দ মোছাদ্দেকুন নবী, ঢাবি প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০২২, ২১:২৪

বইমেলার সময় বাড়লে গুনতে হবে না লোকসান
ছবি: প্রতিনিধি

গত দুইবছর করোনার কারণে প্রায় সব প্রকাশককে লোকসান গুনতে হয়েছিল। এ বছরও মেলা শুরু হওয়া না হওয়া নিয়ে ছিল দোদুল্যমান পরিস্থিতি। তবে এবারের চিত্র ভিন্ন। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসলে দিন বাড়তেই জমে উঠেছে বইমেলা। এভাবে চলতে থাকলে লোকসান পোহাতে হবে না বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

শনিবার অমর একুশে বইমেলা-২০২২ এর দ্বাদশ দিন। শিশুপ্রহর ছিলো বলে মেলা চালু হয় বেলা ১১টায়। নতুন বই প্রকাশিত হয় মোট ১১৯টি। দিনের বেলায় শিশুদের আনাগোনায় মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ। এছাড়াও পালিত হয়েছে নানা শিশুতোষ অনুষ্ঠান।

সন্ধ্যায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মেলা প্রাঙ্গণ জনসমুদ্রে পরিণত হয়েছে। স্টলগুলোতে ভিড়, সমানে চলছে বই বিক্রয়। বিক্রয়কর্মী, সংশ্লিষ্টরা, এবং আগত দর্শক-ক্রেতারাও সন্তুষ্ট মেলা নিয়ে। পরিস্থিতির ভিত্তিতে আশার আলো দেখছেন প্রকাশকরা।

সময় বাড়লে লোকসান হবে না:

অনিন্দ্য প্রকাশনীর বিক্রয়কর্মী ওমর ফারুক বলেন, ‘বইমেলার এই ১২ দিনে বিক্রয় অনেক ভালো হয়েছে। গতবছরও আমরা দেখেছি ছুটির দিন ব্যতীত অন্যান্য দিনে বিক্রয় খুব একটা হয়নি। এ বছর এই চিত্র কিছুটা ভিন্ন। প্রতিদিনই মানুষজন আসছে, বই কিনছে। এভাবে চলতে থাকলে ভালো কিছু আশা করা যায়। আমাদের মেলার সময়টা যদি বাড়ানো হয় তবে গত দুই বছরের ক্ষতিটা পুষিয়ে উঠতে পারবো।’

গ্রন্থকুটির প্রকাশনীর এক বিক্রয়কর্মী বলেন, ‘শিশুদের পাশাপাশি সবার জন্যই আমাদের বইয়ের সংগ্রহ আছে। সকালে শিশুদের বই ভালো বিক্রি হয়েছে। বলা যায় মেলা মোটামুটি ভালোই চলছে। তবে এখনো পুরোপুরি জমে ওঠেনি। প্রতিদিন যেভাবে মানুষ বাড়ছে তা দেখে বোঝা যায় মেলা সামনে আরও জমজমাট হবে। মেলাটা যদি আরও কিছুদিন বাড়ানো যায়, ক্রেতারা যদি আসেন, তাহলে আমারা আশা করি ক্ষতির সম্মুখীন হতে হবে না।’

গত বছরের মেলার তুলনায় এবারের মেলা কেমন, জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘গত বছর কোভিডের কারণে মেলার সময় কম ছিলো। মানুষও কম এসেছে অনেক। এ বছর জনসমাগম এবং ক্রেতার সংখ্যা আশানুরূপ। আগের তুলনায় এবারের মেলা বেশ ভালো যাচ্ছে।’

বাংলাপ্রকাশের বিক্রয়কর্মী তামজিদুল আলামিন বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, ‘গত দুইবছর করোনার কারণে বিক্রয় খুবই কম হয়েছে। এ বছর করোনা পরিস্থিতি অনেকটা নিয়ন্ত্রণে। পাশাপাশি স্কুল কলেজগুলোও খুলে দেয়া হয়েছে। যার কারণে শিক্ষার্থীরা মেলায় বেশি আসছে এবং বই কিনছে। যদি আগামী ১৭ মার্চ পর্যন্ত মেলার সময়টা বাড়িয়ে দেয়া হয় তবে আমরা ভালো কিছু আশা করতে পারি। আর তা না করা হলে বিগত বছরগুলোসহ ক্ষতি রিকভার করা বেশ কষ্টের হয়ে যাবে।’

মেলায় ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সামদানী প্রত্যয়ের সাথে কথা হয় বাংলাদেশ জার্নালের। তিনি বলেন, ‘আমি থ্রিলার বইয়ের ভক্ত। আজকে মনোয়ারুল ইসলামের লেখা ‘অতঃপর কবি মঞ্চে উঠিলেন’ বইটা কিনলাম। এছাড়াও রবিন জামান খান, মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিনসহ আরও কিছু লেখকের মৌলিক থ্রিলার কিনবো সামনে। গত বছর বইমেলার চেয়ে এবারের বইমেলায় লোকসমাগম বেশি। গতবার করোনার আতঙ্ক যতোটা ছিলো এবার দ্রুত ভ্যাকসিন কার্যক্রমের জন্য সেই ভয়টা অনেকাংশেই কম।’

মেলার সময় বাড়ানোর ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘বইমেলায় আসলে বইপোকাদের ভিড়ে অনেক বেশি ভালো লাগে। মেলার সময় বাড়ানো হলে মেলায় বেশিদিন আসা যাবে। পাশাপাশি আমাদের মতো যারা ছাত্র এবং যারা হাতখরচের টাকা জমিয়ে বই কিনি, তাদের জন্য সময় বাড়ালে বেশ সুবিধা হয়। মাসের শেষ হওয়ায় হাতখরচা ফুরিয়ে গেছে। আমি নিজেই অপেক্ষা করছি পরের মাসে টিউশনির টাকা দিয়ে বই কিনবো।’

মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান:

বিকাল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় অমর একুশের সাহিত্য ও সংস্কৃতি শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। মফিদুল হকের সভাপতিত্বে পরিচালিত অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন অধ্যাপক বিশ্বজিৎ ঘোষ। এছাড়াও খালেদ হোসাইন, আহমাদ মোস্তফা কামাল এবং ফারহান ইশরাক আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন।

সভাপতির বক্তব্যে মফিদুল হক বলেন, ‘শিল্পী-সাহিত্যিকরাই একুশের আন্দোলনকে মানুষের চিত্তে গেঁথে দিয়েছিল। আজো একুশের চেতনা নানা মাত্রায় নানাভাবে আমাদের অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছে। আমাদের রাষ্ট্রীয়, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবনে একুশের তাৎপর্য গভীর অনুসন্ধানের দাবি রাখে।’

এছাড়াও আলোচকবৃন্দ বলেন, মহান ভাষা আন্দোলনের বৃহত্তর পটভূমিকে ভিত্তি করে রচিত হয়েছে নানা শিল্পসফল সাহিত্য ও গান। ভাষা আন্দোলনের প্রত্যক্ষ ফল হিসেবেই বাংলাদেশের সাহিত্যে অসাম্প্রদায়িকতা, গণতান্ত্রিক চেতনা, ভাষা সচেতনতা, স্বাধীনতার আকাঙ্খা অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ-বাসনার মতো প্রবণতার বিকাশ ঘটেছে। একুশের চেতনাই বুদ্ধিজীবী, কবি-সাহিত্য, লেখক, শিল্পী ও রাজনীতিবিদদের জাগিয়ে তুলেছিল, যা আমাদের স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রগঠনের মূল প্রেরণা হিসেবে কাজ করছে।

এছাড়াও ‘লেখক বলছি’ অনুষ্ঠানে আলোচনা করেন কবি খালেদ হোসাইন এবং কথাসাহিত্যিক পারভেজ হোসেন। অনুষ্ঠানে কবিতা পাঠ করেন কবি মিনার মনসুর, স্নিগ্ধা বাউল এবং রহমান শেলী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন আবৃত্তিশিল্পী অঞ্চল চৌধুরী, মুজাহিদুল ইসলাম এবং মাসুদুজ্জামান।

পাশাপাশি সাংস্কৃতিক পর্বে ছিল ‘কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর’, ‘উচ্চারক’ এবং ‘নৃত্যাঙ্গন’-এর শিল্পীদের পরিবেশনা। যন্ত্রাণুষঙ্গে ছিলেন সঞ্জয় কুমার দাস (তবলা)।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত