ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স-এনআইডি করতে নিত ১০ হাজার টাকা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২২, ১৫:২৩  
আপডেট :
 ২২ মার্চ ২০২২, ১৭:৩০

ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স-এনআইডি করতে নিত ১০ হাজার টাকা
ছবি: নিজস্ব

ভুয়া এনআইডি কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স ও বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডর জাল সার্টিফিকেট তৈরি এবং জালিয়াতি চক্রের মূলহোতা গোলাম মোস্তফাসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব।

র‍্যাব বলছে, ফেইক আইডির মাধ্যমে চক্রটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করত। দ্রুত সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও এনআইডি কার্ড করে দেয়ার ক্ষেত্র বিশেষে তারা ৮-১০ হাজার টাকা দাবি করত। এক্ষেত্রে তারা বাইক রাইডার, লাইসেন্স বিহীন বিভিন্ন গাড়ির চালক যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি পেতে আগ্রহী অথবা যারা অবৈধভাবে লাইসেন্স/এনআইডি প্রত্যাশী তাদের টার্গেট করে থাকে। এছাড়াও রোহিঙ্গা, জঙ্গি সদস্য, দীর্ঘদিনের পলাতক আসামিরা নিজেদেরকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর চোখ ফাঁকি দেয়ার জন্য ভিন্ন নামে ভুয়া এনআইডি কার্ড, পাসপোর্ট তৈরি করে পালিয়ে বিভিন্ন দেশে গমন করে আত্মগোপনে থাকতো৷

সোমবার রাতে রাজধানীর মালিবাগ, বাসাবো, শাহজাহানপুর ও কোতয়ালী থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে এই প্রতারণা চক্রের মূলহোতা মো. গোলাম মোস্তফা (৬০), মো. জালাল বাশার (৫৪), মো. মুসলিম উদ্দিন (৬৫), মো. মিনারুল ইসলাম (মিন্নি) (২২), এবং মো. তারেক মৃধাদের (২১) গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৩।

অভিযানের সময় উদ্ধার করা হয় ২টি কম্পিউটার, ২ হাজার ৪৬০টি বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের জাল প্রাপ্তি স্বীকার রশিদ, ২৬টি ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র, ১টি ল্যাপটপ, ১টি ডিজিটাল ক্যামেরা, ১৮টি ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, ৮০টি সাদা রঙের প্লাস্টিকের ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র ও ড্রাইভিং লাইসেন্স তৈরির ব্লাঙ্ক কার্ড, ৫০টি স্বচ্ছ কার্ড হোল্ডার, ২ রিল সিকিউরিটি লেমিনেটিং পেপার যা দিয়ে জাল ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করা যায়, ১টি কার্ড প্রিন্টার, ৪টি সফ্টওয়্যারের সিডি, ৪টি পেনড্রাইভ, ৫টি মোবাইল ফোন এবং নগদ ২ হাজার ৮০০টাকা।

মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‌্যাব সদরদপ্তরের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তারদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় , তারা ৫-৭ জনের একটি চক্র গত ০৮-১০ বছর ধরে ভুয়া এনআইডি কার্ড, ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জাল সার্টিফিকেট ও অন্যান্য জাল নথিপত্র তৈরি করে আসছে।

খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মোস্তফা এই চক্রের মূলহোতা ও বাকীরা তার সহযোগী। এই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন নির্বাচন অফিস ও বিআরটিএ অফিসের সামনে অবস্থান করে গ্রাহকদের টার্গেট করত। পরবর্তীতে তাদেরকে দ্রুততম সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স ও জাতীয় পরিচয়পত্র প্রাপ্তির নিশ্চয়তা দিয়ে প্রতারণা করত। বিশ্বাস যোগ্যতা অর্জনে তারা হুবহু জাল প্রাপ্তি স্বীকার পত্র ও মানি রিসিটটি বিআরটিএ ও বিভিন্ন ব্যাংকসহ ভুয়া সীল ও স্বাক্ষর ব্যবহার করে গ্রাহককে দিতো।

র‍্যাব জানায়, একইভাবে তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন গ্রুপে চটকদার বিজ্ঞাপন পোস্ট করত। পরবর্তীতে কোন গ্রাহক তাদের সাথে এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য যোগাযোগ করলে তারা তাদের মধ্যে কেউ গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ করে দ্রুততম সময়ে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি প্রাপ্তির অফার দিত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করার ক্ষেত্রে তার ফেইক আইডি ব্যবহার করত।

র‍্যাব মুখপাত্র বলেন, চক্রটি প্রতিটি ড্রাইভিং লাইসেন্স এর জন্য গ্রাহকদের কাছে ৩-৪ হাজার টাকা দাবি করত। এছাড়া দ্রুত এনআইডি/ড্রাইভিং লাইসেন্স প্রদানের জন্য ক্ষেত্র বিশেষে তারা ৮-১০ হাজার টাকা দাবি করত। এক্ষেত্রে তারা বাইক রাইডার, লাইসেন্স বিহীন বিভিন্ন গাড়ির চালক যারা দ্রুত সময়ের মধ্যে ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি পেতে আগ্রহী অথবা যারা অবৈধভাবে লাইসেন্স/এনআইডি প্রত্যাশী তাদের টার্গেট করে থাকে।

খন্দকার মঈন বলেন, গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তারা সাধারণত বিভিন্ন বিআরটিএ অফিস, নির্বাচন কমিশন অফিস বা সংশ্লিষ্ট অফিসের আশেপাশে দেখা করত। পরবর্তীতে তারা ৩-৭ দিনের মধ্যে ভুয়া ড্রাইভিং লাইসেন্স/এনআইডি সরবরাহ করে। জরুরি ক্ষেত্রে অতিরিক্ত অর্থের বিনিময়ে তারা একদিনের মধ্যেই সরবরাহ করে থাকে। তারা মোবাইল ব্যাংকিং বা সরাসরি অর্থ লেনদেন করে থাকে।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার গোলাম মোস্তফা উক্ত চক্রের মূলহোতা। সে এইচএসসি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছে। ৩০ বছর আগে সে ঢাকায় আসে। ঢাকায় এসে সে ডেন্টাল মেডিকেল কলেজ থেকে এক্সরে মেশিন টেকনিশিয়ান এর ১ বছরের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। পরবর্তীতে সে একটি ক্লিনিকে ৫-৭ বছর এক্সরে মেশিন টেকনিশিয়ান হিসেবে চাকরি করে। আনুমানিক ২০০০ সালে সে নিজে একটি এক্সরে মেশিন নিয়ে ছোট দোকান দেয়। ২০১০ সালে তিনি প্রতারণার সাথে জড়িত হয়। তার একাধিক লেগুনা গাড়ি রয়েছে। একই ধরণের প্রতারণায় তার বিরুদ্ধে একাধিক মামলা রয়েছে এবং একাধিকবার তিনি জেল খেটেছেন।

র‍্যাব কর্মকর্তা মঈন বলেন, গ্রেপ্তার মিনারুল ২০২০ সালে জামালপুরের একটি সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকে টেক্সটাইল ডিপ্লোমা সম্পন্ন করে। সে গত ১ বছর ধরে এই চক্রের সাথে কাজ করছে। সে কম্পিউটার এক্সপার্ট এবং ভুয়া এনআইডি কার্ড ও ড্রাইভিং লাইসেন্সসহ জাল সার্টিফিকের তৈরির ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স ও ডিজাইনের কাজ করত।

র‍্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার মুসলিম জন্ম থেকেই ঢাকায় বসবাস করছে। তিনি প্রাথমিকভাবে লেগুনাসহ বিভিন্ন সিএনজি এর চালক হিসেবে কাজ করছে। গত ০৮-১০ বছর ধরে সে পুরাতন মটর সাইকেল কেনা বেচাসহ বিআরটিএ ও নির্বাচন অফিসের সামনে থেকে গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করত।

তিনি আরও বলেন, গ্রেপ্তার জালাল গত ১৫ বছর ধরে ঢাকায় বসবাস করছে। সে প্রথমে প্রেসে কাজ করত। পরবর্তীতে আদালতের সামনে দালালি করত। গত ৫-৭ বছর সে এই প্রতারণার সাথে যুক্ত হয়। গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করত।

গ্রেপ্তার তারেক পেশায় গত ১ বছর ধরে এই চক্রের সাথে জড়িত। আগে সে ২-৩ বছর বিভিন্ন চিপস্ কোম্পানির মার্কেটিং এর কাজ করেছে। গ্রাহক সংগ্রহ, যোগাযোগ ও কার্ড তৈরির পর সরবরাহসহ বিভিন্ন প্রতারণার কাজ করত বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত