ঢাকা, শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে জানতে পারেন চাকরির নিয়োগপত্রটি ভুয়া

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ১৮:৪০

সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে জানতে পারেন চাকরির নিয়োগপত্রটি ভুয়া
ছবি: নিজস্ব

বিভিন্ন দপ্তরে চাকরি দেয়ার নাম করে ভুয়া প্রশ্নপত্র ও নিয়োগপত্র প্রদান করতো একটি চক্র। এর জন্য ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকরি প্রত্যাশীদের ‘কিউ আর কোর্ড জেনারেটর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঠিকানা সম্বলিত একটি ‘কিউ আর কোর্ড’ তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করে। ‘কিউ আর কোর্ড স্কানার’ দিয়ে চাকরি প্রাথীকে নিয়োগপত্রটি সঠিক কিনা যাচাই করতে বলা হলে প্রার্থী তার মোবাইলের ‘কিউ আর কোর্ড স্কানার’ দিয়ে চেক করে তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখায় এবং প্রার্থী চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে এই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া।

প্রতারণা করে লাখ লাখ টাকা আত্মসাৎকারী প্রতারক চক্রের দুইজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) এর ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগ। গ্রেপ্তাররা হলেন- মো. মোশারফ হোসেন ও মো. জিয়া উদ্দিন।

সোমবার রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে ঢাকা মহানগরীর দারুস সালাম থানার আনন্দ নগর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার ডিবি সাইবারের অর্গানাইজড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম।

গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন, ৭টি সিম কার্ড, বিভিন্ন চাকরি ভুয়া প্রশ্নপত্র, ভুয়া প্রবেশপত্র ও ভুয়া নিয়োগপত্র জব্দ করা হয়।

মঙ্গলবার দুপুরে মিন্টো রোডে গোয়েন্দা কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এ বিষয়ে বিস্তারিত জানান ডিবি-সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার মোহাম্মদ তারেক বিন রশিদ।

তিনি বলেন, গত ১৫ মে রাতে ভুক্তভোগী একজনের অভিযোগের ভিত্তিতে বনানী থানায় একটি মামলা হয়। মামলাটির ছায়া তদন্ত শুরু করে ডিবি সাইবারের অর্গানাইজ্ড ক্রাইম ইনভেস্টিগেশন টিম। এক পর্যায়ে তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ ও প্রযুক্তির সহায়তায় ১৬ মে রাতে দারুস সালামের আনন্দনগর এলাকা থেকে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়।

গ্রেপ্তারদের প্রতারণার কৌশল সম্পর্কে তারেক বিন রশিদ বলেন, প্রতারক চক্রটি বিভিন্ন দপ্তরের বিভিন্ন পদের চাকরি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিগুলো তাদের সংগ্রহে রাখে। পরবর্তীতে বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সাধারণ চাকরিপ্রার্থী ও তাদের অভিভাবকদের কাছে নিজেকে সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা হিসেবে পরিচয় দেয় এবং বিভিন্ন পদে চাকরি পাইয়ে দিবে বলে আশ্বস্ত করে।

গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রথমে চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে ই-মেইলের মাধ্যমে চাকরিপ্রত্যাশীর জীবন বৃত্তান্ত, পাসপোর্ট সাইজ ছবি, স্বাক্ষরের স্ক্যান কপি ও অন্যান্য সকল ডকুমেন্ট ইত্যাদি সংগ্রহ করে। পরে উক্ত তথ্যের মাধ্যমে একটি ভুয়া প্রবেশপত্র তৈরি করে প্রার্থীর ইমেইলে পাঠায়। এরপর বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে টাকা নিয়ে ভাইভার জন্য মনোনীত হয়েছেন বলেও জানান।

তিনি বলেন, কিছুদিন পরে ভুয়া নিবন্ধিত সিম কার্ড এর মাধ্যমে অপর এক ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা পরিচয় দিয়ে পুনরায় কল করে মেডিকেল ও অন্যান্য খরচ বাবদ কিছু টাকা বিকাশ/রকেটের মাধ্যমে দিতে বলে। টাকা পাওয়ার পর প্রতারক চক্ররা একটি ভুয়া নিয়োগপত্র তৈরি করে। বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য চাকরি প্রত্যাশীদের ‘কিউ আর কোর্ড জেনারেটর’ সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রার্থীর নাম ঠিকানা সম্বলিত একটি ‘কিউ আর কোর্ড’ তৈরি করে ভুয়া নিয়োগপত্রে সেটি স্থাপন করে।

পরবর্তীতে প্রার্থীকে বলা হয়, ‘কিউ আর কোর্ড স্কানার’ দিয়ে আপনার নিয়োগপত্রটি সঠিক কিনা যাচাই করুন। প্রার্থী যখন তার মোবাইলের ‘কিউ আর কোর্ড স্কানার’ দিয়ে চেক করে তখন সেখানে নিজের তথ্য দেখায় এবং প্রার্থী চুক্তির সম্পূর্ণ টাকা পরিশোধ করেন। পরবর্তীতে এই নিয়োগপত্র নিয়ে চাকরিপ্রত্যাশীরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গেলে জানতে পারেন নিয়োগপত্রটি ভুয়া। এর মধ্যে তারা ব্যবহৃত ফোনগুলো বন্ধ করে ফেলে।

তিনি আরও বলেন, চক্রের অন্য সদস্যদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা অব্যাহত আছে। গ্রেপ্তারদের পাঁচ দিনের পুলিশ রিমান্ডের আবেদনসহ আদালতে পাঠানো হয়েছে।

চাকরির পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র কোনোভাবেই আগে পাওয়ার সুযোগ নেই উল্লেখ করে বলেন, কোন ধরনের অবৈধ/অনৈতিক পন্থায় তা সংগ্রহের চেষ্টা না করে কেউ প্রশ্নপত্র দেয়ার প্রস্তাব দিলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীকে তা জানানোর পরামর্শ দেন সাইবার এই পুলিশ কর্মকর্তা।

বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/এমএস

  • সর্বশেষ
  • পঠিত