ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

বানের জলে ডুবছে সিলেট, বিপর্যস্ত লাখ লাখ মানুষ

  সৈয়দ রাসেল, সিলেট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৭ মে ২০২২, ২০:৩৫

বানের জলে ডুবছে সিলেট, বিপর্যস্ত লাখ লাখ মানুষ
ছবি: প্রতিনিধি

সিলেটে বন্যার অন্যতম কারণ উজানের বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢল। যে বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেট নগরীর ৬টি ওয়ার্ডের বিস্তির্ণ এলাকা। প্লাবিত হয়েছে সিলেটের প্রায় সবকটি উপজেলার নিম্নাঞ্চল। পানিবন্দি হয়ে পড়েছে নগরীসহ ১৩ উপজেলার কয়েক লাখ মানুষ।

সিলেট সিটি কর্পোরেশন ও জেলা প্রশাসন বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ালেও সময়ে সময়ে খাদ্যনিরাপত্তা ও খাবার পানির সংকট ভাবিয়ে তুলছে এসব বানভাসি মানুষদের।

এদিকে পরিবেশবাদীরা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে খনন না করায় বৃষ্টির পানি ধারণে অক্ষম নদী থেকেই ঘটছে এমন প্রাকৃতিক বিপর্যয়।

বিগত কয়েক বছরে এমন ভয়াবহ বন্যা দেখেনি সিলেটবাসী। প্রতি মুহূর্তে আগ্রাসী হওয়া এমন বন্যার সাক্ষী এখন সিলেটের কয়েক লাখ মানুষ। গতকাল (সোমবার) পর্যন্ত সিলেটের জকিগঞ্জ, কানাইঘাট, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, কোম্পানীগঞ্জ এবং সিলেট সদর উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হলেও ওইদিন বিকেল থেকে সিলেট নগরীতে পানি প্রবেশ করতে শুরু করে। এরপর মাত্র কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে নগরীর ৬টি ওয়ার্ডের বিস্তির্ণ এলাকা পানির নিচে তলিয়ে যায়। প্রতি মুহূর্তে পানির এমন আগ্রাসী ভূমিকায় নগরবাসীর মধ্যে আতঙ্ক দেখা দেয়।

শুধু তাই নয়, পানির সাথে সাথে বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন হয়ে যায় বিভিন্ন এলাকা। সেইসাথে গ্যাস লাইনও বন্ধ করে দেয়া হয়। একদিকে মোটর বন্ধ, অন্যদিকে বন্ধ গ্যাসলাইন। এমন বাস্তবতায় খাদ্যনিরাপত্তা ও খাবার পানির সংকট ভাবিয়ে তুলছে বানভাসিদের।

মঙ্গলবার সকাল থেকেই সিলেট নগরীর গুরুত্বপূর্ণ তালতলা পয়েন্ট, শেখঘাট, শামিমাবাদ, কানিশাইল, উপশহর, যতরপুর, তোপখানা, মাছিমপুর ও কলাপাড়া এলাকার রাস্তাঘাট হাঁটু থেকে কোমর পানি পর্যন্ত তলিয়ে যেতে দেখা যায়। হাঁটু থেকে কোমর পানি মাড়িয়ে বা বিকল্প রাস্তা দিয়ে নিজ নিজ কাজে যোগ দেন সাধারণ মানুষ।

এদিকে আগ্রাসী বন্যায় তলিয়ে গেছে সিলেটের ১৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল। প্রতি মুহূর্তে পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কের মধ্যে দিনানিপাত করছেন বানভাসি মানুষেরা।

সিলেটের জেলা প্রশাসক মো. মজিবর রহমান জানান, বন্যা দুর্গতদের মাঝে এরই মধ্যে ১২৯ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। এছাড়া প্রতি উপজেলায় আরও ৫ লাখ টাকার শুকনো খাবার বিতরণের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। মানুষের দুর্দশা লাঘবে জেলা প্রশাসনের সার্বিক প্রস্তুতি রয়েছে।

এদিকে প্রাকৃতিক বিপর্যয় প্রকৃতিগত হলেও কিছু প্রশ্ন ঘুরেফিরে আসে। পরিবেশবাদীরা বলছেন, দীর্ঘদিন থেকে সুরমা নদী খনন না করায় সেটি বৃষ্টির পানি ধারণে অক্ষম হয়ে আছে। ঘটছে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। এমন বাস্তবতায় নগর মহাপরিকল্পনায় সুরমা খননের সুপারিশ থাকলেও সংশ্লিষ্টদের ভিন্নমতে উপেক্ষিত থাকছে বিষয়টি।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, নগরীর মহাপরিকল্পনায় সুরমা খননের সুপারিশ করা হয়েছে একাধিকবার। যদিও এর উত্তরে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, শহরের পার্শ্ববর্তী সুরমা নদী খননের উপযোগী নয়। এর থেকে বিপর্যয় ঘটতে পারে বলে নগর কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।

অপর এক প্রশ্নে বিধায়ক রায় চৌধুরী জানান, বন্যা দুর্গত মানুষদেরকে অস্থায়ী আশ্রয়কেন্দ্রে নেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া শুক্ন খাবার বিতরণ ও তাদের চিকিৎসায় দুটি মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে।

অপরদিকে সিলেটের উজানে ভারতের চেরাপুঞ্জিতে গত ৫ দিনে ১ হাজার ২৩৮ মিলিলিটার বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেট। যে কারণে সৃষ্ট ঢলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সিলেটের তিন উপজেলার অনেক বেড়িবাঁধ।

তবে সার্বিক বিষয় নজরদারিতে রয়েছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ড সিলেটের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী এ. কে. এম. নিলয় পাশা।

এদিকে আগামী ২৩ মে পর্যন্ত সিলেটের হালকা এবং মাঝারি বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেষ্ঠ্য আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত