ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ জুন ২০২২, ২৩:৫২

হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে

মৌলভীবাজারের প্রধান খড় স্রোতা মনু নদীর ভাঙন রোধে এবং বন্যার স্থায়ী সমাধানে একনেকে হাজার কোটি টাকার ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ প্রকল্পের হাজার কোটি টাকা ভাসছে নদীর স্রোতে।

প্রকল্পে নিয়োগপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান টাস্কফোর্সের গণনাকৃত জিও ব্যাগ কখনও প্রকাশ্যে আবার কখনও রাতের আধারে নদীতে ভাসিয়ে দিচ্ছে। জিও ব্যাগের মুখ কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ পুনরায় ব্যবহারের জন্য সংরক্ষণ করে রাখছে। স্থানীয়রা হাতেনাতে এমন অনিয়ম ধরেছেন।

জনপ্রতিনিধি ও নদী তীরে বসবাসকারীদের অভিযোগ পানি উন্নয়ন বোর্ডের যোগসাজশে এমনটি হচ্ছে। জনপ্রতিনিধি ও সচেতন মহল বলছেন, সারাদেশের মানুষ যখন বন্যা মোকাবেলায় হিমশিম খাচ্ছেন তখনই মৌলভীবাজার পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী হরিলুটে ব্যস্ত।

এক প্রশ্নের জবাবে রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, ওয়ার্ক অর্ডারে জিও ব্যাগ নদীর কিনারে ফালানোর কথা থাকলেও ব্যাগ নদীর মধ্যখানে ফেলা হচ্ছে। আমাদের ধারণা নির্বাহী প্রকৌশলীর নির্দেশেই এমনটি হচ্ছে। এখানে নির্বাহী প্রকৌশলী যা বলছেন তাই হচ্ছে।

এদিকে সোমবার সন্ধ্যার পর থেকে মনু নদীর পানি বিপদ সীমার উপর দিয়ে অতিবাহিত হওয়ায় ঝুঁকিতে রয়েছেন কয়েক লক্ষ বাসিন্দা। যার ফলে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে সবকটি পয়েন্ট। কিন্তু পানি উন্নয়ন বোর্ডের ভূমিকা নিয়ে হতাশ স্থানীয়রা।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা যায়, ‘মনু নদের ভাঙন থেকে কুলাউড়া, রাজনগর ও মৌলভীবাজার সদর রক্ষা’ নামে ওই প্রকল্প ২০২০ সালের জুন মাসে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় অনুমোদন লাভ করে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে ৯’শ ৯৬ কোটি ২৮ লক্ষ টাকা। ২০২৩ সালের জুনে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। কিন্তু ২ বছরে মাত্র ২৩ শতাংশ কাজ হয়েছে। এর মধ্যেও বেশির ভাগ ভেসে যাচ্ছে নদীর স্রোতে।

সরেজমিন গেলে স্থানীয়রা বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহযোগিতায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান নদীতে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে জিও ব্যাগ না ফেলে রাতের আধারে টাস্কফোর্সের গণনাকৃত হাজারের উপরে জিও ব্যাগ মনু নদীর স্রোতের সঙ্গে ভাসিয়ে দিয়েছেন।

সর্বশেষ রোববার রাতে এলাকার সুন্দর চৌধুরী ও সাবেক ইউপি সদস্য মাহমুদুর রহমানসহ অনেকেই দেখতে পান নদীর মধ্য স্থানে শ্রমিকরা জিও ব্যাগ ফালাচ্ছে।

এদিকে নদীর পানি প্রতিরক্ষা বাঁধে ছুঁই ছুঁই অবস্থায়। অথচ পানি উন্নয়ন বোর্ড কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় স্থানীয়রা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজারের কাছে যান কিছু জিও ব্যাগের জন্য। স্বেচ্ছাশ্রমে ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে ফালাবেন এমন চিন্তা করে। কিন্তু ম্যানেজার জিও ব্যাগ নেই বলে তাদের তাড়িয়ে দেন।

তখন এলাকাবাসী বালির গর্তের ভেতর থেকে আড়াই মাস পূর্বের টাস্কফোর্সের গণনাকৃত জিও ব্যাগ উদ্ধার করেন। এসময় পাশের একটি পরিত্যক্ত কক্ষে কয়েক হাজার টাস্কফোর্সের গণনাকৃত খালি জিও ব্যাগ দেখতে পান।

তাৎক্ষণিকভাবে এলাকাবাসী স্থানীয় ইউপি সদস্য, ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের অবগত করেন। তারা সরজমিনে এসে ঘটনার সত্যতা পান এবং ছিড়া ও খালি ব্যাগ জব্দ করেন।

আদনাবাদ গ্রামের শামীম মিয়া ও মছদ্দর চৌধরীসহ অনেকেই জানান, জিও ব্যাগ ভাঙন ও ঝুঁকিপূর্ণ স্থানে না ফেলে ঠিকাদারের লোকজন রাতের বেলা নদীতে কখন বালু ভর্তি জিও ব্যাগ আবার কখনও ব্যাগের মুখ ব্লেড দিয়ে কেটে নদীতে বালি ফেলে ব্যাগ সংরক্ষণ করে রাখেন। ঠিকাদারের লোকজন পানি উন্নয়ন বোর্ডর সহযোগিতায় এমনটি করছে।

ইউপি সদস্য আব্দুল মন্নান বলেন, আমার সামনে জিও ব্যাগ পানিতে ফেলতে দেখেছি। তাদের ওই সব অন্যায়ের বিরুদ্ধে কথা বললে উপর মহলের ভয় দেখায়।

এম এম বিল্ডার্স-এর ম্যানেজার মো. সুহান আলী খালি জিও ব্যাগ ঘরে রাখার কথা স্বীকার করে বলেন, এগুলোর গুণগতমান নষ্ট হয়ে যাওয়ায় খুলে রেখেছি।

রাজনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান মিলন বখত বলেন, আমার এলাকার মানুষ সবসময় বলে আসছে কাজের অনিয়মের কথা। এখানে এসে দেখলাম এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্য। আমরা প্রায় ১’শ মানুষের সামনে নদীর স্রোতে জিও ব্যাগ ফেলতে দেখলাম। এর চেয়ে সত্য আর কি হতে পারে।

এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের রাজনগর উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী ইফতেখার মাহমুদ বলেন, সাধারণ মানুষের অভিযোগ সঠিক। কোন অসাধু এরকম কাজ করল বুঝে উঠতে পারছিনা।

ভারপ্রাপ্ত উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বাবলু সূত্র ধর বলেন, অভিযোগের সত্যতা পাওয়া গেছে। ছিড়া ব্যাগ জব্দ করেছি। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত