চোরে চোরে মিলেমিশে তারা ভয়ংকর ডাকাত দল
নিজস্ব প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৫:৩৮
মহাসড়কে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানার ঝাঁজর এলাকা থেকে আন্তঃজেলা ডাকাত চক্রের ৯ সক্রিয় সদস্যকে দেশি-বিদেশি অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-১। রোববার (৩ জুলাই) রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র্যাব-১ গোপন সংবাদের ভিত্তিতে তাদের গ্রেপ্তার করে।
র্যাব জানায়, ডাকাত চক্রের সদস্যরা আগে চুরি, ছিনতাই এর কাজ করতো। এসব অপরাধে বিভিন্ন সময়ে কারাগারে গিয়ে তাদের মধ্যে পরিচয় ও সখ্যতা হয়। এভাবে তারা চোর চক্র থেকে ডাকাতে দলে পরিণত হয়। সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর ও গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতিও করে তারা। চক্রের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জন। ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র ডাকাতি করার পরিকল্পনাও করে তারা।
আটক ব্যক্তিরা হলেন- মো. শহিদুল ইসলাম (৩৪), মো. আয়নাল মিয়া ওরফে আয়নাল হক ওরফে আয়নাল (৩৯), মো. আন্ডু মিয়া (৫৭), মো. আজিজুল ইসলাম ওরফে আইনুল (৩২), উজ্জল চন্দ্র মহন্ত (২৭), মো. শাহিন ওরফে সজিব (৩৩), মো. শহিদ (৩৮), মো. রনি সরকার (২৪) ও মো. আব্দুল হাকিম ওরফে গাটু ওরফে আব্দুল গাটু মিয়া (৪০)।
এসময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ওয়ান শুটারগান, একটি ম্যাগাজিন, দুই রাউন্ড পিস্তলের গুলি, দুটি ওয়ান শুটার গানের গুলি, দুটি ছোড়া, একটি রামদা, একটি দা, পাঁচটি গামছা জব্দ করা হয়।
সোমবার দুপুরে কারওয়ান বাজার র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক লেফট্যান্ট কর্নেল আব্দুল্লাহ আল মোমেন।
সংবাদ সম্মেলনে আব্দুল্লাহ আল মোমেন বলেন, গ্রেপ্তাররা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত চক্রের সদস্য। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা আনুমানিক ১০ থেকে ১২ জন। এ ডাকাত চক্রের সর্দার শহিদুল ইসলাম। তার অন্যতম সহযোগী আন্ডু মিয়া ও আয়নাল মিয়া, যারা ডাকাতির পরিকল্পনা ও অন্যান্য ডাকাতদের সংঘবদ্ধ করে থাকেন। তারা গত পাঁচ বছর ধরে একই সঙ্গে সংঘবদ্ধ হয়ে রংপুর এবং গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে আসছিলো। প্রথমে তারা চুরি ও ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত থাকলেও বিভিন্ন দফায় জেলে থাকার কারণে গত কয়েক বছর যাবত ডাকাতির পেশায় প্রত্যক্ষভাবে জড়িয়ে পড়েন।
গ্রেপ্তার শহিদুল ইসলামকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব জানায়, তিনি ডাকাত চক্রের মূলহোতা। তিনি আগে রিকশা চালাতেন। পরবর্তী সময়ে সহজলভ্য ও বেশি অর্থের লোভে ডাকাতির পেশায় জড়িয়ে পড়েন। তারা সাধারণত প্রতিমাসে দুই থেকে তিনবার ৬ থেকে ৯ জন দলে সংগঠিত হয়ে প্রথম দিকে রংপুর ও পরবর্তীসময়ে গাজীপুরের বিভিন্ন এলাকায় সড়ক ও মহাসড়কে ডাকাতি করতেন।
ডাকাতির কৌশল হিসেবে সংবাদ সম্মেলনে র্যাব জানায়, তারা সড়কগুলোর নির্জন স্থানে রাতের আধারে গাছ কেটে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতেন। পরে তারা ইজিবাইক, অটোরিকশা, সিএনজি, মোটরসাইকেল বা ছোট পিকআপসহ ছোট আকারের যানবাহনকে টার্গেট করে অস্ত্রের মুখে ভিকটিমদের জিম্মি করে ডাকাতি করতেন। গ্রেপ্তার শহিদুলের বিরুদ্ধে ডাকাতি, ডাকাতির প্রস্তুতি, ধর্ষণসহ ছয়টি মামলা রয়েছে।
গ্রেপ্তার আয়নালকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র্যাব কর্মকর্তা মোমেন জানায়, তিনি এ ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও ডাকাতি দলের জন্য গাজীপুরের জেলার গাছা থানার ঝাঁজর এলাকায় একটি অস্থায়ী আবাসস্থল ঠিক করেছিলেন। তিনি দীর্ঘ পাঁচ বছর ধরে চুরি ও ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। আগে পেশায় একজন অটোরিকশাচালক ছিলেন। আইনাল মিয়ার মূল দায়িত্ব ছিলো জায়গা নির্ধারণ ও অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের সংঘবদ্ধ করা।
এছাড়া ডাকাতির স্থান এবং সময় নির্ধারিত হলে অন্যান্য ডাকাত সদস্যদের নিজ এলাকা থেকে নিয়ে এসে তার আবাসস্থলে অবস্থান করান। সাধারণত ডাকাতির পর লুণ্ঠিত মালামাল তিনি ডাকাত সর্দারের নির্দেশে অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করতেন। এছাড়াও তিনি ছোট ছোট মাদক চোরাচালানের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন। আইনালের বিরুদ্ধে চুরি ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক বলেন, গ্রেপ্তার আন্ডু মিয়া ডাকাত সর্দারের অন্যতম সহযোগী ও পরামর্শদাতা। তিনি ১৯৯৫ সাল থেকে চুরি ও ডাকাতির চক্রের সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি পেশায় একজন চা দোকানি ছিলো। দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতির পেশায় জড়িত থাকায় তিনি সাধারণত এই ডাকাত চক্রের পরামর্শদাতা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তার বিরুদ্ধে হত্যা ও ডাকাতিসহ চারটি মামলা রয়েছে।
র্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেপ্তার শহিদ পেশায় অটোরিকশাচালক হলেও নিজ এলাকায় কুখ্যাত চোর হিসেবে পরিচিত। ওই ডাকাত চক্রে সে ডাকাতির পর পলায়ন পরিকল্পনাকারী ও পলায়নে সহায়তার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করতেন। তার বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা ও চুরিসহ ১২টি মামলা রয়েছে।
এছাড়াও ডাকাত চক্রের সদস্যদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় বিভিন্ন আইনে মামলা রয়েছে বলেও জানান র্যাব-১ এর অধিনায়ক।
বাংলাদেশ জার্নাল/এফজেড/রাজু
