ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১২ মিনিট আগে
শিরোনাম

হাতপাখায় স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার

  গাইবান্ধা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ জুলাই ২০২২, ১৭:৩২

হাতপাখায় স্বাবলম্বী শতাধিক পরিবার
ছবি: প্রতিনিধি

বেড়েছে গরম, সেইসাথে হাতপাখার কদর। আর তাই এ পাখা তৈরিতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাইবান্ধার পাখাপল্লীর হস্তশিল্পীরা। তবে পাখা শিল্পে জড়িতদের আক্ষেপ, সম্ভাবনাময় এই কুটির শিল্পে এতোদিনেও সরকারি কিংবা বিদেশি ঋণদান সংস্থা থেকে কোনো ঋণ সহায়তা পাননি তারা।

গাইবান্ধার সাদুল্লাপুর উপজেলা থেকে ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে গেলেই জামালপুর ইউনিয়নের বুজরুক রসুলপুর গ্রাম এবং রসুলপুর ইউনিয়নের আরাজি ছান্দিয়াপুর গ্রাম। দীর্ঘদিন ধরে পাখা তৈরি ও বিক্রি করার কারণে মানুষের কাছে এই দুটি গ্রাম এখন পাখাপল্লী হিসেবেই পরিচিত।

গ্রামের প্রতিটি বাড়িতে ঢুকলেই চোখে পড়বে পাখা তৈরির দৃশ্য। এবার গরমের মাত্রা বেশি হওয়ায় বিক্রিও বেড়েছে কয়েকগুণ। তবে সরকারি বেসরকারি সহযোগিতা না পাওয়ায় মহাজনের কাছে অগ্রিম টাকা নিয়ে পাখা তৈরি করছেন এখানকার নারীরা।

সরেজমিনে গ্রাম দুটি ঘুরে দেখা যায়, বাড়ির উঠানে পাটিতে বসে কেউ সুতা গোছাচ্ছেন, কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে বুননের কাজ করছেন। কেউ করছেন বাঁশ কাটার কাজ। কেউ আবার পাখায় নকশার কাজ করছেন। এভাবেই তৈরি হচ্ছে নানা রঙের আকর্ষণীয় এসব হাতপাখা। কোনো প্রশিক্ষণ নেই, নিজে নিজেই শেখা।

বড়দের দেখে দেখে স্কুল পড়ুয়া মেয়েরাও হাত পাকাচ্ছে এ কাজে। কয়েকদশক থেকে গৃহকর্ম শেষে হাতের কাজ করে পরিবারের আর্থিক সচ্ছলতায় অবদান রাখছেন দুই গ্রামের শতাধিক নারী। ক্রমান্বয়ে বাড়ছে ক্রেতার সমাগম।

রসুলপুর ইউনিয়নের বৈষ্ণবপুর গ্রামের সাদা রানী জানান, এটা তাদের পৈত্রিক পেশা। গত দু'বছরের তুলনায় এবার বিক্রি বেড়েছে। সামনে আরও বাড়বে বলে আশা করছেন তিনি। পাখা তৈরি করতে সরকারি-বেসরকারি কোনো সহযোগিতা পাননি বলে আক্ষেপ প্রকাশ করেন তিনি।

জামালপুর ইউনিয়নের বুজরুক রসুলপুর গ্রামের খালেক মিয়া বলেন, গত দু’বছরের তুলনায় এবার গরমের শুরু থেকেই বিক্রি ভালো। যত দিন যাচ্ছে বিক্রি বাড়ছে। তবে পাখা তৈরির উপকরণ সুতা ও বাঁশের দাম যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে, সেভাবে পাখার দাম বাড়েনি। তবুও আমরা আশা করছি, আগের ক্ষতি পুষিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে পারবো।

বুজরুক রসুলপুর গ্রামের আরেক পাখা কারিগর লাইজু বেগম বলেন, এখনো গরম শেষ হওয়ার তিনমাস বাকি। এখন পর্যন্ত বিক্রি ভালো হচ্ছে। মহাজনেরা অগ্রিম টাকা দিয়ে গেছে। তাদের টাকা দিয়েই পাখা তৈরি করছি। তাই পাখার দাম অনেকটা কম। সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা পেলে এই গ্রামের আরও অনেকেই এই পেশায় কাজ করে স্বাবলম্বী হতে পারতো।

চৈত্র থেকে আশ্বিন মাস পর্যন্ত পাখার বেচাকেনা চলে। প্রতিটি পাখা রকমভেদে ৪০ থেকে ৬০ টাকায় বিক্রি করছেন। পাখা তৈরির পর কেউ গ্রামে আবার কেউ পাইকারের কাছে বিক্রি করেন। পাইকারদের হাত ধরে এই হাতপাখা চলে যায় ঢাকা, রংপুর, বগুড়া, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।

তবে ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটাতে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে বলে জানিয়েছেন গাইবান্ধা বিসিকের সহকারী মহাব্যবস্থাপক রবিন্দ্র চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, আমরা সবসময় এই ধরনের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের প্রসার ঘটাতে কাজ করে যাচ্ছি। পাখা পল্লীর কথা শুনেছি। তারা চাইলে সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা হবে।

পাখাপল্লীর নারীদের দাবি, বিনা শর্তে ঋণ কিংবা শিল্পগ্রাম হিসেবে চিহ্নিত করে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পাওয়া গেলে এই হাতপাখা শিল্পের ব্যাপ্তি আরও বাড়ানো সম্ভব।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত