ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

তাকওয়া বাসে নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, মিলেছে আলামত

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৬:৫২  
আপডেট :
 ০৭ আগস্ট ২০২২, ১৮:৪৩

তাকওয়া বাসে নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণ, মিলেছে আলামত

গাজীপুরে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে শনিবার ভোররাতে চলন্ত অবস্থায় এক নারী যাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় ভুক্তভোগীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। পরীক্ষায় ধর্ষণের আলামত মিলেছে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

রোববার সকালে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন হয়েছে। ফরেনসিক বিভাগের ডা. এ এন এম আল মামুন ও ডা. সানজিদা হক ওই নারীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

চিকিৎসক আল মামুন জানান, প্রাথমিকভাবে পরীক্ষায় ভুক্তভোগীকে ধর্ষণের আলামত পাওয়া গেছে। তারপরও বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার জন্য ডিএনএ পরীক্ষাত জন্য ভুক্তভোগীর আলামত পাঠানো হয়েছে এবং কপালে একটি আঘাতের চিহ্ন থাকায় মাথার এক্সরে করার জন্য পরামর্শ দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা ভিকটিমের জবানবন্দি গ্রহণ করেছি। জবানবন্দিতে তিনি বলেছেন, তারা নওগাঁয় আত্মীয়ের বাড়ি বেড়ানো শেষ করে শনিবার রাত তিনটার দিকে মহানগরের প্রোগ্রাম বাইপাস এলাকায় এসে নামেন। পরবর্তীতে তারা ভালুকার মাস্টার বাড়ি এলাকায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে বোকরা এলাকা থেকে তাকওয়া পরিবহনের একটি যাত্রীবাহী বাসে ওঠেন।

ভিকটিমের বরাত দিয়ে ডা. আল মামুন আরও বলেন, বাসটি শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় গিয়ে বাসের চাল হেলপার এবং তার অন্য অজ্ঞাতনামা সহযোগীরা ভুক্তভোগীর স্বামীকে মারধর করে বাস থেকে ফেলে দেয় এবং পুনরায় গাড়িটি গাজীপুর আসার পথে অজ্ঞাতনামা পাঁচজন তার হাত মুখ বেঁধে তাকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে। পরে তাকে তারা ঢাকা ময়মনসিংহ মহাসড়কের রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ১০০ টাকা দিয়ে বাস থেকে নামিয়ে দেয়। পরে ভুক্তভোগী জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানান এবং তার স্বামীর সাথে যোগাযোগ হয়।

এর আগে গত শনিবার রাতে ওই নারীকে ডাক্তারি পরীক্ষার জন্য শহীদ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। কিন্তু বেশি রাত হয়ে যাওয়ায় ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন না করে তাকে হাসপাতালে মহিলা ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়।

এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর স্বামী বাদী হয়ে গাজীপুরের শ্রীপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে এবং লুণ্ঠিত মালামাল উদ্ধার করেছে।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন, নারায়নগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলার দরিপাড়া গ্রামের আলী আকবরের ছেলে রাকিব মোল্লা (২৩), নেত্রকোনা সদর উপজেলার গুপিরঝুপা গ্রামের মৃত সানোয়ার হোসেনের ছেলে সুমন খান (২০), ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার কাঁঠালকাচারি গ্রামের মৃত কফিল উদ্দিনের ছেলে মো. সজিব (২৩), একই জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার বিলডোলা গ্রামের তুলা মিয়ার ছেলে শাহীন মিয়া (১৯) এবং খুলনার রূপসা উপজেলার খান মোহাম্মদপুর এলাকার মৃত নূর আলমের ছেলে সুমন হাসান (২২)।

গাজীপুর জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানান, নওগাঁয় আত্মীয়র বাড়ি বেড়ানোর শেষে ওই নারী স্বামীর সাথে বাসে করে এসে শনিবার রাত সাড়ে ৩টার দিকে গাজীপুর মহানগরীর ভোগড়া বাইপাসে এসে নামেন। পরে তিনি মাওনা যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্বামীকে নিয়ে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন। বাসটি গাজীপুর মহানগরী অতিক্রম করে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে শ্রীপুরের মাওনা এলাকায় পৌঁছে বাসের চালক ও হেলপার এবং অন্যরা মিলে তার স্বামীকে জোর করে বাস থেকে নামিয়ে দেন।

পরে চলন্ত বাসে ওই নারীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ করা হয় এবং তার সাথে থাকা ব্যাগ এবং নগদ টাকা পয়সা ছিনিয়ে নেয়া হয়। ধর্ষণের পর ওই নারীকে মাওনা থেকে গাজীপুরের দিকে আসার পথে হোতাপাড়া এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের নির্জন স্থানে নামিয়ে দেয়া হয়। পরে তিনি হোতাপাড়া এলাকায় অবস্থিত জয়দেবপুর থানায় গিয়ে ঘটনা পুলিশকে জানাযন। এরপর জয়দেবপুর থানা পুলিশ বিষয়টি উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও শ্রীপুর থানা পুলিশকে অবহিত করে। এ দম্পতি ময়মনসিংহ জেলার ভালুকা থানাধীন স্কয়ার মাস্টার বাড়ি এলাকায় ভাড়া বাসায় বসবাস করেন।

অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সানোয়ার হোসেন জানান, এ ঘটনার ছয় ঘণ্টার মধ্যে জেলা পুলিশের একাধিক টিম বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ধর্ষণের সাথে জড়িত ৫ জনকে গ্রেপ্তার করতে সক্ষম হয়েছে এবং লুণ্ঠিত সকল মালামাল উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া মালামালের মধ্যে রয়েছে একটি বাটন মোবাইল, ভেনিটি ব্যাগ, ৪ হাজার টাকা, ট্রাভেল ব্যাগ ২টি, চাল ২ কেজি, ১/২ কেজি ভুট্টা, ২৫০ গ্রাম পোলার চাল, এটিএম কার্ড ১টি ও এক বয়াম আমের আচার। গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অপরাধের কথা স্বীকার করেছে।

তিনি আরও জানান, আসামিদের আদালতে পাঠানো হয়েছে। আদালতে তোলার পর স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে তাদেরকে আদালতে নির্দেশনা অনুযায়ী কারাগারে পাঠানো হবে, অন্যথায় ১০ দিনে রিমান্ড আবেদন করা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত