ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রাইভেট কারে শিক্ষক দম্পতির লাশ

কিডনিতে-ফুসফুসে জমাট রক্ত, নমুনা সিআইডি ল্যাবে

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ আগস্ট ২০২২, ০০:৫৯  
আপডেট :
 ১৯ আগস্ট ২০২২, ১৪:১৮

কিডনিতে-ফুসফুসে জমাট রক্ত, নমুনা সিআইডি ল্যাবে

গাজীপুরে নিজ প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উদ্ধার হওয়া শিক্ষক দম্পতির লাশের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া গেছে। তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকাস্থ সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

বৃহস্পতিবার শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান মো. শাফি মোহাইমেন জানান, বৃহস্পতিবার বিকেলে লাশ দুইটির ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়েছে। এসময় দুইজনের ফুসফুস ও কিডনিতে প্রায় একই রকম লক্ষণ পাওয়া গেছে। তাদের প্রত্যেকের ফুসফুস ও কিডনিতে জমাট রক্ত পাওয়া। এটা সাধারণত খাবারে বিষক্রিয়া কিংবা অন্যকোন কারণেও হতে পারে। তাই তাদের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ নিশ্চিত হতে নমুনার রাসায়নিক পরীক্ষার জন্য ঢাকাস্থ সিআইডি ল্যাবে পাঠানো হয়েছে।

এর আগে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলির লাশ গাজীপুর মহানগরের গাছার দক্ষিণ খাইলকুরের বগারটেক এলাকায় দাঁড়িয়ে থাকা তাদের প্রাইভেট কারের ভেতর থেকে বৃহস্পতিবার ভোর রাতে উদ্ধার করা হয়।

নিহত একেএম জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ বলেন, ইতিপূর্বে গাজীপুরের কালীগঞ্জের পুনসই হাইস্কুলে প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন জিয়াউর রহমান। সেখান থেকে ২০২০ সালের ১লা সেপ্টেম্বর টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পেয়ে দায়িত্ব পালন করছিলেন। তার স্ত্রী মোসাম্মৎ মাহমুদা আক্তার জলিও টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। তারা স্বপরিবারে গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে থাকতেন।

তিনি বলেন, ব্যক্তিগত গাড়িতে করে তারা দুজনেই স্কুলে যাওয়া আসা করতেন। বুধবার স্কুল শেষে সহকর্মী ও সম্পর্কিত মামাতো ভাই মো. কামরুজ্জামানকে (গনিতের শিক্ষক) গাড়িতে তুলে নিয়ে জিয়াউর যান স্ত্রী জলির স্কুলে। সেখান থেকে স্ত্রী জলিকে গাড়িতে তুলে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা হন এ দম্পতি। পথে কামরুজ্জামানকে নামিয়ে দেন জিয়াউর। এসময় জিয়ার ছেলে মিরাজ বুধবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টা থেকে পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোন দেন। কিন্তু বাবার ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মায়ের ফোনে কল করেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসছেন বলে জানান। কিন্তু মা কথা বলার সময় ক্লান্তির স্বর ভেসে আসছিলো। এরপর থেকে ফোনে তাদের সঙ্গে আর যোগাযোগ করতে পারেননি। পরে তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব ও পশ্চিম থানায় যোগাযোগ করেন। রাতভর তারা বিভিন্ন জায়গায় তাদের খোঁজ করেন।

এ বিষয়ে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মো. নুরুজ্জামান রানা বলেন, প্রধান শিক্ষক একেএম জিয়াউর রহমান ও কামরুজ্জামানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহে। জিয়াউর স্যার গাছা থানার কামারজুরি এলাকায় এবং কামরুজ্জামান টঙ্গীর শিলমুনে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কামরুজ্জামান একই স্কুলের গণিতের সহকারী শিক্ষক। জিয়াউর স্যারও গণিতের শিক্ষক ছিলেন। কামরুজ্জামান হেডস্যারকে মামাতো ভাই বলে সম্বোধন করতেন। তবে স্বামী-স্ত্রী কিংবা স্কুলের সকল শিক্ষকের সঙ্গেই জিয়া স্যারের ভাল সম্পর্ক ছিলো। কারো সঙ্গে কখনও বিরোধ ও খারাপ সম্পর্কের কথা শুনিনি।

সহকারী শিক্ষক কামরুজ্জামান বলেন, স্কুলের পাশে প্রাইভেট পড়ানো শেষ করে বুধবার বিকেল সাড়ে ৬টার দিকে স্কুলে টয়লেট ব্যবহার করতে যাই। টয়লেট সেরে স্কুলের গেইটের কাছে গেলে হেডস্যার বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে স্কুল থেকে বের হন। পরে তিনি পথে নামিয়ে দেবেন বলে তার গাড়িতে উঠতে বলেন। আমাকে নিয়ে তার ম্যাডামকে স্কুল থেকে নিয়ে বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দেন হেড স্যার। হেডস্যার নিজেই গাড়ি চালান। পথে টঙ্গী বিসিকের সাহারা মার্কেট এলাকায় গিয়ে আমাকে সন্ধ্যা পৌনে ৭টার দিকে নামিয়ে দিয়ে তারা চলে গেছেন। এরপর আমার সঙ্গে তাদের আর কথা বা দেখা হয়নি।

নিহত শিক্ষক দম্পত্তির ছেলে একেএম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সাংবাদিকদের জানান, সবশেষ বুধবার সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে বাবার মোবাইলে ফোনে কল করলে তিনি রিসিভ করেননি। তারপর কোন যোগাযোগ করতে না পেরে রাতে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করি। ভোর রাতের দিকে গাছা থানার দক্ষিণ খাইলকুর বগারটেক নামক জায়গায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের উপর তাদের প্রাইভেটকার দেখতে পেয়ে কাছে যান।

এসময় চালকের আসনে বাবা ও পাশেই মাকে নিস্তেজ অবস্থায় পেয়ে তাদের প্রথমে বোর্ডবাজার এলাকার তায়রুন্নেছা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও পরে উত্তরার অপর একটি হাসপাতালে নিলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এসময় ঘটনাটি গাছা থানা পুলিশকেও জানানো হয়। পরে পুলিশ দুটি এ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের লাশ গাছা থানায় নিয়ে যায়।

নিহতের বড় ভাই মো. রিপন সাংবাদিকদের বলেন, এ হত্যাকাণ্ডটি পুরোই ’পরিকল্পিত’। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই খোয়া যায়নি। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত না-ই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেতো। তার কিছুই তারা নেয়নি।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। কি কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে তা এখনও স্পষ্ট নয়।

গাজীপুর মহানগর পুলিশের সহকারী-কমিশনার (মিডিয়া) আবু সায়েম নয়ন জানান, তাদের লাশে সুরুত হাল প্রতিবেদন করা হয়েছে। তবে তাদের লাশে মৃত্যুর কোন আলামত বাহ্যত পাওয়া যায়নি। পাশে একটি খালি বাটি পাওয়া গেছে। তবে তাকে কি ছিল তা পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। ময়নাতদন্তের পর প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

গাছা থানার ওসি নন্দলাল চৌধুরী জানান, লাশ উদ্ধার সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়না তদন্ত প্রতিবেদন ছাড়া কিছু বলা ঠিক হবেনা।

বাংলাদেশ জার্নাল/কেএ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত