ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৩ আগস্ট ২০২২, ২১:৫৩

গাজীপুরে ভুল চিকিৎসায় প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

গাজীপুরের কালীগঞ্জে জনসেবা জেনারেল হাসপাতাল এন্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারে ভুল চিকিৎসায় শিরিন বেগম (৩২) নামের এক প্রসূতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। রক্তশূন্য প্রসূতি রোগীর 'এবি-পজেটিভ' রক্তের প্রয়োজন থাকলেও তাকে পুশ করা হয় 'বি-পজেটিভ' রক্ত।

মঙ্গলবার কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি ডাক্তার সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক করে গঠন করা হয়েছে ৩ সদস্যের এই তদন্ত কমিটি। নিহত প্রসূতি শিরিন বেগম উপজেলার তুমলিয়া ইউনিয়নের দক্ষিণ চুয়ারিয়াখোলা গ্রামের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী।

নিহত শিরিন বেগমের স্বামী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, রোববার সকাল থেকে বিভিন্ন হাসপাতাল ঘুরে জনসেবা হাসপাতালে যাই। সেখানে ডাক্তার না থাকলেও হাসপাতালের এক নার্স রোগীর কাগজপত্র দেখে বলেন 'সিজার হবে আপনি রোগী নিয়ে আসেন'। এরপর মাসুদ মিয়া নামের এক ডাক্তারকে মোবাইলে ডেকে আনেন। তিনি সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত দুই ঘণ্টা সময় ধরে সিজার করেন।

এ সময় রোগীর 'এবি পজেটিভ' রক্তের প্রয়োজনে রক্ত সংগ্রহ করতে বলা হয়। ডাক্তারের কথা মতো দুইজন রক্তদাতা সংগ্রহ করা হয়। এর মধ্যে আমার একজন শ্যালক ও একজন ভাগনে। শুরুতে শ্যালকের কাছ থেকে এক ব্যাগ রক্ত সংগ্রহ করে রোগীর শরীরে পুশ করা হয়। আরো এক ব্যাগ রক্তের প্রয়োজনে ভাগনের কাছ থেকে রক্ত সংগ্রহ করতে তাকে হাসপাতালের বেডে শোয়ানো হয়। কিন্তু ওই হাসপাতালের নার্স শামীমা 'বি পজেটিভ' রক্ত পুশ করেন। রক্ত চলা অবস্থায় রোগীর শুরু হয় খিঁচুনি।

শিরিন বেগমের স্বামী আরও বলেন, এ সময় ছুটে গিয়ে দেখি রোগীর রক্ত চলতে। কিন্তু ওইদিকে রক্তদাতা ভাগনে রক্ত দিতে বেডে শুয়ে আছে। 'বি পজেটিভ' রক্ত চলার কারণ জানতে চাইলে হাসপাতালের ল্যাব সহকারী শাওন মিয়া ছুটে এসে বলেন কোনো সমস্যা নাই। পরে আস্তে আস্তে রোগীর অবস্থা আরো খারাপ হতে থাকে। রোগীর অবস্থা খারাপ দেখে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তড়িঘড়ি করে অ্যাম্বুলেন্সে ঢাকার উত্তরার একটি হাসপাতালে পাঠায়। রাতে ওই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসক অ্যাম্বুলেন্সের কাছে এসে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে জানান, রোগীকে মৃত অবস্থায় এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। তারপরও আরও নিশ্চিত হতে ভালো করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। সেখানেও জানানো হয় রোগীকে মৃত অবস্থায় এখানে আনা হয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসাসেবা চালিয়ে যাচ্ছিল জনসেবা হাসপাতাল। ডাক্তার মাসুদুর রহমান মাসুদ একজন অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক। কিন্তু তিনি নিজেই করেছেন রোগীর সিজার। শুধু জনসেবা হাসপাতাল নয় স্থানীয় অনেক প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে তিনি গিয়ে এ কাজ করে থাকেন।

জানা গেছে, অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক মাসুদের স্ত্রী শামীমা জাহান নূপুর একজন গাইনি ডাক্তার। আর রোগীকে কাগজপত্রে সিজারিয়ান চিকিৎসক হিসেবে ব্যবহার করা হয় অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক মাসুদের স্ত্রীর নাম। আর অ্যানেস্থেসিয়া চিকিৎসক হিসেবে মাসুদুর রহমানের নাম।

তবে হাসপাতালে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোনদিনও এই হাসপাতালে সিজার করতে আসেননি গাইনি ডাক্তার শামীমা জাহান। অন্যদিকে, আলট্রাস্নো করার যোগ্যতা না থাকা সত্ত্বেও ঘটনার দিন তা করেছেন হাসপাতালের সহকারী আশিকুর রহমান। শুধু তাই নয়, তিনি নিয়মিতই এ হাসপতালে আলট্রাস্নো করেন।

স্থানীয়রা বলছেন, কিছুদিন আগে হাইকোর্টের নির্দেশ দেশের সকল স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানে অভিযান পরিচালিত হয়। তারপরও কেনো জনসেবা হাসপাতাল মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। এটা দেখার দায়িত্ব কার? সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি হিসেবে বিষয়টি উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার (ইউএইচএফও) দেখার কথা ছিল।

ঘটনার দুইদিন পর মঙ্গলবার দুপুর দেড়টায় সরেজমিনে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির মালিক ও চিকিৎসক বা দায়িত্বপ্রাপ্ত কাউকে পাওয়া যায়নি। বক্তব্য নিতে তাদের ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধীকবার ফোন দিয়ে তা বন্ধ পাওয়া গেছে।

কালীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আনিসুর রহমান বলেন, এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত কোনো অভিযোগ কেউ নিয়ে আসেনি। অভিযোগ পেলে তদন্ত স্বাপেক্ষে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মনজুর-ই-এলাহী বলেন, এ ব্যাপারে ৩ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের গাইনি বিভাগের চিকিৎসক সানজিদা পারভীনকে আহ্বায়ক ও ডা. মুনমুন আক্তার, অ্যানেস্থেসিয়া মো. এমরানকে সদস্য করে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই তদন্ত কমিটিকে আগামী ৩ কর্মদিবসের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) আসসাদিকজামান বলেন, তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রতিবেদন হাতে পেলে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত