ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা

  মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

প্রকাশ : ৩০ আগস্ট ২০২২, ১৩:১৯  
আপডেট :
 ৩০ আগস্ট ২০২২, ১৩:২৪

চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে ইউপি সদস্যদের অনাস্থা
ছবি- প্রতিনিধি

মৌলভীবাজারের কুলাউড়া উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওয়াদুদ বখ্শ’র বিরুদ্ধে অনাস্থা দিয়েছেন ৭ ইউপি সদস্য।

সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, স্বেচ্ছাচারিতা, অনিয়ম, দুর্নীতি, ইউনিয়নের নির্বাচিত সদস্যদের সাথে খারাপ আচরণ ও ক্ষমতার অপব্যবহারের কারণে পরিষদের ইউপি সদস্যরা জেলা প্রশাসক বরাবরে একটি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গত রোববার (২৮ আগস্ট) দুপুরে জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছে ইউপি সদস্যরা স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে লিখিত অভিযোগ জমা দিয়েছেন। যার অনুলিপি দেয়া হয়েছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের সচিব, সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক), (হবিগঞ্জ-মৌলভীবাজার) এর উপ-পরিচালক, উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবরে।

অভিযোগকারীরা হলেন- হাজীপুর ইউনিয়ন পরিষদের ৬ নং ওয়ার্ড সদস্য ও প্যানেল চেয়ারম্যান (১) নুর আহমদ চৌধুরী বুলবুল, প্যানেল চেয়ারম্যান (২) আব্দুল মজিদ, প্যানেল চেয়ারম্যান ১,২ ও ৩নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য সেলিনা আক্তার, ২নং ওয়ার্ড সদস্য শাইস্তা মিয়া, ৭নং ওয়ার্ড সদস্য আব্দুল মুনিম, ৩ নং ওয়ার্ড সদস্য মো. মোস্তাফিজুর রহমান, ৭, ৮ ও ৯ নং ওয়ার্ডের সংরক্ষিত সদস্য সেলিনা আক্তার।

অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করেন, ইউপি চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে তিনি অত্যন্ত বেপরোয়া হয়ে উঠেন। তিনি এলাকার সকল প্রকার অনৈতিক ও অপরাধজনক কর্মকাণ্ডের সাথে ইতোপূর্বেও জড়িত ছিলেন এবং বর্তমানেও আছেন। তার বিরুদ্ধে ইতোপূর্বে সন্ত্রাসীমূলক কার্যকলাপ, চাঁদাবাজিসহ অন্য অপরাধের অভিযোগ রয়েছে।

ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত সদস্যদের সাথে তিনি কোন স্বমন্বয়, পরামর্শ ছাড়া টিআর/কাবিখা/কাবিটা প্রকল্প গ্রহণ করে সম্পূর্ণ মনগড়াভাবে ইচ্ছামাফিক প্রকল্প চেয়ারম্যান নিয়োগ করে প্রকল্পের কাজ না করেই তিনি টাকা আত্মসাৎ করেন এবং ইউনিয়ন পরিষদের সভায় গৃহিত সিদ্ধান্ত ও প্রকল্প স্কীম পরিবর্তন, পরিবর্ধন করে তার মনগড়াভাবে তৈরি করেন।

সাধারণ জনগণের সহিত দুর্ব্যবহার, ইউনিয়ন পরিষদ কর্তৃক প্রদত্ত বিভিন্ন সনদ প্রদানে সরকার কর্তৃক নির্ধারিত ফি ছাড়াও অতিরিক্ত টাকা আদায়, সরকারি সম্পদ আত্মসাৎ, বিভিন্ন প্রকল্পের কাজ না করিয়ে অর্থ উত্তোলন করা ইউনিয়ন পরিষদের নিজস্ব একাউন্টে টাকা জমা না রেখে বেশিরভাগ অংশের টাকা তিনি ভোগ করে আসতেছেন। পরিষদের দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এখন পর্যন্ত কোন অর্থ পরিষদের তহবিলে জমা দেননি।

এছাড়াও সরকার কর্তৃক নির্ধারিত বিভিন্ন সনদের ফি সংক্রান্ত তালিকা জনসাধারণের জ্ঞাতার্থে প্রদর্শনের বিধান থাকা সত্ত্বে ও চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ তা প্রদর্শন না করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করেন।

চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ নানা অনিয়ম হিসেবে অভিযোগ পত্রে উল্লেখ করা হয়, অনিয়ম, অপকর্ম, দুর্নীতি, স্বেচ্ছাচারিতার বিষয় নিয়ে ৭ ইউপি সদস্যগণ গত ১৬ আগস্ট এক সভার করে তার ওপর অনাস্থা প্রস্তাব গ্রহণ করেন।

অভিযোগকারী এক ইউপি সদস্য বলেন- জন্ম নিবন্ধন সরকার নির্ধারিত ৫০ টাকা থাকলেও চেয়ারম্যান নিজেই বাংলা সনদে ২০০ টাকা, ইংরেজী সনদে পৃথক ২০০ নিয়ে থাকেন। এমন দুর্নীতির প্রতিবাদ করলে চেয়ারম্যান নিজেই ইউপি সদস্যদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন।

আরেক ইউপি সদস্য বলেন, চেয়ারম্যান যা চাইবেন তা জনগণ দিতে বাধ্য। নাগরিকত্ব সনদে ২০০ টাকা, উত্তরাধিকারী সনদে ৫০০ টাকা, ব্রিক্স ফিল্ডের জন্য ট্রেড লাইসেন্স ২৩ হাজার টাকা, বিভিন্ন ধরনের ট্রেড লাইসেন্স ৫শত থেকে ৫ হাজার টাকা আদায় করছেন। এলজিএসপি’র প্রকল্প তিনি একক সিদ্ধান্তে গ্রহণ করেন এবং লোক দেখানোর জন্য সামান্য কাজ করিয়ে দুই তৃতীয়াংশ অর্থ আত্মসাৎ করেন।

অভিযুক্ত হাজীপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ওয়াদুদ বখ্শ তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি স্বচ্ছ আছি, আমার কোন সমস্যা নেই। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হওয়ার পর আমি সুতা পরিমাণ কোন অনিয়ম করিনি। স্বার্থের কারণে যারা অভিযোগ দিয়েছেন তদন্ত হলে একটি অভিযোগেরও প্রমাণ তারা দেখাতে পারবে না। আমি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তারা বিভিন্নভাবে আমার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করে আসছে। জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ হাসান বলেন, অভিযোগ পত্রটি স্থানীয় সরকার বিভাগের (মৌলভীবাজার) উপ-পরিচালকের মাধ্যমে তদন্ত করা হবে। তদন্ত শেষে অভিযোগের সত্যতা পেলে অভিযুক্তের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখার জন্য বলেছি।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত