ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা

  নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রকাশ : ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৪৯  
আপডেট :
 ০৭ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০৯:৫৪

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগ, অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা
প্রতীকি ছবি

বাংলাদেশ ছাত্রলীগ ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রধান রাজনৈতিক ছাত্র সংগঠন। ১৯৪৮ সালের ৪ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলের অ্যাসেম্বলি হলে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা করেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

প্রতিষ্ঠার পর থেকে এটি বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের বিভিন্ন অধিকার সংক্রান্ত আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন, শিক্ষার অধিকার, বাঙালির স্বায়ত্তশাসন প্রতিষ্ঠা, গণঅভ্যুত্থান, স্বাধীনতা ও স্বাধিকার আন্দোলন।

যদিও বর্তমান সময়ে ছাত্রলীগের কার্যকলাপ প্রতিনিয়ত বিতর্কের সৃষ্টি করছে। সংগঠনটির সদস্যরা অভিযুক্ত হচ্ছে চাঁদাবাজি, খুন, ধর্ষণসহ নানারকম অপরাধে।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ছাত্রলীগ দেশের প্রায় ৪০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করেছে। বাংলাদেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার সময় থেকেই সেখানে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ ছিলো। যে কারণে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কমিটি গঠন নিয়ে গত কয়েকদিন ধরেই চলছে নানামুখী আলোচনা। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কমিটি ঘোষণা করা বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, নর্থ সাউথ, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, ইস্ট ওয়েস্ট, আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ এআইইউবি, ড্যাফোডিলের মতো বড় এবং নামী বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোও রয়েছে।

এছাড়া গত ৩রা সেপ্টেম্বর সমন্বিত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ নামে একটি সংগঠনের ব্যানারে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একটি সম্মেলনও করেছে সংগঠনটি।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রলীগের সাংগঠনিক কমিটি গঠন নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো বিভিন্নরকম প্রতিক্রিয়াও জানাচ্ছে।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় সমিতির সভাপতি শেখ কবির হোসেন বলেন, "বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইনে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিন্তু আমরা একে সব সময় নিরুৎসাহিত করে এসেছি।"

তিনি আরও জানান, বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা না করার সিদ্ধান্ত প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় নিজেদের মত নিয়েছে এবং বাস্তবায়ন করেছে। আমরা (ছাত্র রাজনীতি) করতে বারণ করি এবং দিই না করতে। সেটা কোনো আইনের মাধ্যমে না। আমরা ছাত্র ভর্তি হওয়ার সময় তাদেরকে বলি যে এটা অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান এবং ছাত্র রাজনীতি এখানে করা যাবে না।"

তিনি মনে করেন, দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্র রাজনীতির কারণে নানা ধরণের মারামারি বা সংঘাত হয়, সেটা তারা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে হতে দিতে চান না।

ছাত্রলীগের কমিটি গঠন সম্পর্কে তিনি বলেন, এক্ষেত্রে প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আলাদা করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নেবে এবং শিক্ষার্থীদের জানাবে।

ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর সহকারী অধ্যাপক রুবানা আহমেদ জানান, তারা ইতিমধ্যে শিক্ষার্থীদের ই-মেইল করে তাদের অবস্থান তুলে ধরেছেন।

শিক্ষার্থীদের ই-মেইলে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়েছে, "ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয় রাজনৈতিকভাবে নিরপেক্ষ একটি প্রতিষ্ঠান এবং কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনের পৃষ্ঠপোষকতা করে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সদস্যদের, নিজেদের ব্যক্তিগত পছন্দ অনুযায়ী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের কোনো ক্লাব বা সংস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত হওয়া কিংবা সংগঠন করতে পারার স্বাধীনতা আছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন বিভাগের অনুমোদন ছাড়া কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রমে কিংবা প্রচারণামূলক কাজে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটির লোগো ব্যবহার করা যাবে না।"

রোববার নিজেদের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে 'জরুরি ঘোষণা' শিরোনামে একটি পোষ্ট দিয়ে কর্তৃপক্ষ বলেছে, এআইইউবি একটি অরাজনৈতিক উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র, শিক্ষক এবং কর্মকর্তাদের এআইইউবির 'কোড অব কন্ডাক্ট' মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছে কর্তৃপক্ষ।

'কোড অব কন্ডাক্ট' হিসেবে ওই পোস্টে তিনটি বিষয় উল্লেখ করা হয়,"বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে কোনো রাজনৈতিক দলে যুক্ত হওয়া বা কর্মকাণ্ডে অংশ নেয়া নিষিদ্ধ। বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে কোনো ধরনের সংগঠন প্রতিষ্ঠার আগে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে পূর্বানুমতি নিতে হবে।

আর বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে বা বাইরে বিনা অনুমতিতে এআইইউবির নাম, লোগো বা স্বাক্ষর ব্যবহার করে কোনো কার্যক্রম বা কর্মসূচি করা নিষিদ্ধ।"

বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব 'কোড অব কন্ডাক্টে'র ব্যত্যয়কে গুরুতর অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হবে এবং তার ফল হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থগিতাদেশ বা বহিষ্কার করা হতে পারে বলেও নোটিসে সতর্ক করা হয়েছে।

একই সঙ্গে স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়মনীতির 'লঙ্ঘন' করলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার অধিকার কর্তৃপক্ষের রয়েছে।

এছাড়া ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটি এবং ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ক্যাম্পাসে কোনো রাজনৈতিক ক্লাব বা সংগঠনকে সমর্থন করে না বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়েছে।

তবে এই দুইটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক কোনো মন্তব্য করতে রাজি হয়নি।

এদিকে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের কমিটি ঘোষণার পর থেকে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মধ্যে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা পরিলক্ষিত হয়েছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড পরিচালনায় ক্ষমতাসীন সরকার ও আওয়ামী লীগের যে সমর্থন আছে, তা বোঝা যায় শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনির বক্তব্য থেকে।

সোমবার শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের উত্তরে বলেছেন, 'বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্র রাজনীতি করতে দেওয়া হবে কি হবে না, সে সিদ্ধান্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নেবে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করার ফলাফল সাধারণত ভালো হয় না। এটা বিবেচনা করা উচিত। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্র রাজনীতির বিষয়ে মানুষের ভিন্ন মত আছে। কিন্তু আমরা যদি গণতান্ত্রিক সমাজ আশা করি, তাহলে রাজনৈতিক চেতনার বিকল্প নেই।'

বাংলাদেশ জার্নাল/রাজু

  • সর্বশেষ
  • পঠিত