ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২১:৫৮

প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি
সংগৃহীত ছবি

মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী (৪৬)। তিনি শত কোটি টাকার বিদেশি জাহাজকে বাড়ির বাইসাইকেল মনে করে অন্যের কাছে বিক্রি করা আবার অন্যের জমি নিজের বলে ভুয়া দলিল দেখিয়েও একাধিক লোকের কাছে বিক্রি করতো। এমনকি নিজেকে বিভিন্ন মন্ত্রীর আত্মীয় বলেও পরিচয় দিতো। এভাবে তিনি প্রতারণা করে গত কয়েক বছরে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে হাতিয়ে নিয়েছে কয়েক’শ কোটি টাকা।

নিজেকে বিশ্বাসযোগ্য ও ব্যবসায় আগ্রহী করতে ওই প্রতারক মাসিক বেতনে সহযোগী হিসেবে নিয়োগ দেন ২০ থেকে ২৫ জনের একটি দল। তাদের কাজ ছিলো ব্যবসায়ীদের কাছে প্রতারক মেজবাহ উদ্দিনের ব্যবসার সুনাম ও সাফাই গাওয়া।

এখানেই শেষ নয়, বাজেয়াপ্ত একটি কন্টেইনারের ভেতরে ৫০০ কোটি টাকা মূল্যের স্বর্ণ পেয়েছে বলে বিভিন্ন ব্যবসায়ীদের মনযোগ আকর্ষণ করে। কিন্তু এসব টাকা বাংলাদেশ ব্যাংক জব্দ করেছে বলে ব্যবসায়ীদের আস্থা অর্জন করে। এছাড়া দুই হাজার কোটি টাকা মূল্যের পাওয়া পাঁচটি ডায়মন্ড বিক্রির টাকা ফেরতে পেতে বিভিন্ন মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের উৎকোচ দিতে হবে বলেও গুঞ্জন ছড়ায়। এক্ষেত্রে ভুক্তভোগীদের বিশ্বাস অর্জন করাতে মন্ত্রী ও উচ্চ পর্দস্থ কর্মকর্তাদের কণ্ঠ নকল করে মোবাইলের রের্কডও বানিয়ে শুনিয়েছে ওই প্রতারক।

আজ সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) চটগ্রাম নগরীর চান্দগাঁও ক্যাম্পে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

এরআগে রোববার নগরীতে অভিযান চালিয়ে এই প্রতারক মেজবাহকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব। গ্রেপ্তার মেজবাহ হাটহাজারীর কাটিয়াহাট এলাকার আবু তাহের চৌধুরীর ছেলে।

র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ২০১৫ সালে সীতাকুণ্ডের কুমিরায় স্ক্র্যাপ হিসেবে বিক্রির জন্য শত কোটি টাকার একটি পুরোনো জাহাজ আনে খাজা শিপইয়ার্ড। এই জাহাজটিসহ এরকম আরও কয়েকটি জাহাজ আনার প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন ব্যক্তিকে ব্যবসার অংশীদারীত্বের প্রস্তাব দেয় প্রতারক মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী। কেউ খবর নিতে গেলে যেন তার পক্ষে তথ্য দেয় এমন ২০/২৫ জন লোককে মাসিক বেতন দিয়ে নিয়োগ দেয় মেজবাহ। তার দেওয়া তথ্য যাচাই করতে গেলে নিয়োগপ্রাপ্ত লোকেরা তার ব্যবসার সব তথ্য ঠিক বলে তথ্য দিত। এভাবে সে আব্দুল হাকিমের কাছ থেকে ২ কোটি ২০ লাখ টাকা, আজগর আলীর কাছ থেকে ৭০ লাখ টাকা, মো. রেজওয়ানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা, ইব্রাহিমের কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা, মো. রুমনের কাছ থেকে ৬৩ লাখ টাকা, শহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৯০ লাখ টাকা, জাহিদুল ইসলামের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, আসাদের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা, বেলালের কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা এবং শাহজাহানের কাছ থেকে ২ কোটি টাকাসহ অসংখ্য মানুষের কাছ থেকে প্রতারণার মাধ্যমে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

কর্নেল ইউসুফ আরও বলেন, মেজবাহ বাজেয়াপ্ত কন্টেইনার দেখিয়ে প্রচার করে একটি কন্টেইনারে সে প্রচুর পরিমাণ স্বর্ণ পেয়েছে যা প্রায় ৫০০ কোটি টাকায় বিদেশে বিক্রি করেছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক সেই টাকা জব্দ করেছে। এছাড়াও সে ৫টি ডায়মন্ড পেয়েছে যার প্রতিটির মূল্য ২ হাজার কোটি টাকা। ডায়মন্ডগুলোর বিক্রির টাকা পেতে হলে বিভিন্ন মন্ত্রী মহোদয় এবং উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের ভাগ দিতে হবে। বিশ্বাস অর্জনের জন্য বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং মন্ত্রীর কণ্ঠস্বর নকল করে কথোপকথনের রেকর্ড শোনাত। এছাড়া একই জমি বিক্রির কথা বলে বিভিন্ন লোকের কাছ থেকে টাকা আদায় করত। শুধুমাত্র চট্টগ্রাম নগরীর বাড়াইপাড়া এলাকায় একটি জমির ভুয়া দলিল দেখিয়ে অন্তত ১০ জনের কাছে বিক্রির অভিযোগ পাওয়া গেছে।

তিনি আরও বলেন, ভুক্তভোগীরা তার কাছে পাওনা টাকা চাইতে গেলে সে ভুক্তভোগীদের আগে থেকে রাখা স্বাক্ষর জালিয়াতির মাধ্যমে বিভিন্ন ভুয়া দলিল দস্তাবেজ তৈরি করে তাদেরকেই উল্টো মিথ্যে মামলার ভয় ও মামলা দিয়ে নাজেহাল করতো। মিথ্যে মামলার ভয়ে অনেক ভুক্তভোগীই পাওনা টাকার বিষয়ে মুখ খোলার সাহস করতো না।’

এম এ ইউসুফ আরও বলেন, এমন অভিযোগের খবর পেয়ে র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গোপন সংবাদের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাত পৌনে ১০টায় নগরীর পাঁচলাইশের হামজারবাগ এলাকায় অভিযান চালিয়ে একটি বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।

র‌্যাব-৭ সিনিয়র সহকারী পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নূরুল আবছার জানান, প্রতারণার পর ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে পালিয়ে বাঁচতে নিজ এলাকায় অবস্থান না করে ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপনে থাকতো। এছাড়া যোগাযোগ এড়ানোর জন্য ঘনঘন মোবাইল ও সিম বদল করতো। বর্তমানে আইনশৃঙ্লা বাহিনীর চোখ এড়ানোর কৌশল হিসেবে হেয়ার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট করেছে।

তিনি বলেন, গ্রেপ্তার মেজবাহ উদ্দিনের বিরুদ্ধে হাটহাজারী ও কোতোয়ালি থানায় বিভিন্ন প্রতারণার দায়ে ২২টি মামলা রয়েছে। এর মধ্যে ১১টিতে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা ও অর্থদণ্ড দেয়া হয়েছে। অন্য মামলাগুলো আদালতে বিচারাধীন রয়েছে। গ্রেপ্তারের পর তাকে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত