ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৩২ মিনিট আগে
শিরোনাম

চুরির অপবাদে পুরুষাঙ্গে শিক ঢুকিয়ে, ড্রিল মেশিনে পা ছিদ্র করে হত্যা

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১২:৩০

চুরির অপবাদে পুরুষাঙ্গে শিক ঢুকিয়ে, ড্রিল মেশিনে পা ছিদ্র করে হত্যা
রানা হত্যার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করছেন এলাকাবাসী। ছবি: প্রতিনিধি

“আমার রানার কি অপরাধ ছিল? আমার ছেলে তাদের এমন কি ক্ষতি করেছিল? আমার ছেলে কোন অন্যায় করেনি, আমার ছেলেকে ওরা পিটাইয়া মাইরা ফালাইছে, ওরা আমার ছেলেকে বাঁচতে দিল না ক্যান? আমি খুনিদের ন্যায্যবিচার চাই, আমার মতো আর যেন কোন মায়ের বুক খালি না হয়” এমনি আকুতি জানিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছিলেন চুরির অপবাদে পিটিয়ে খুন হওয়া গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা গ্রামের রানার মা রেহেনা আকতার।

নিহত যুবক রানা মিয়া (২২) উপজেলার তেলিহাটি ইউনিয়নের মুলাইদ গ্রামের মো. আমিনুল ইসলামের ছেলে। গত শুক্রবার (২৩ সেপ্টেম্বর) রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে চুরির অপবাদে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে।

এ ঘটনায় তার বাবা ২৫ সেপ্টেম্বর বাদি হয়ে শ্রীপুর থানায় স্থানীয় কেওয়া পশ্চিম খন্ড গ্রামের আব্দুল করিমের বড় ছেলে শিপন (২৭) ও ছোট ছেলে আকাশ (২৫), একই গ্রামের খোকা মেকারের ছেলে উজ্জল (৪৫), সিরাজুল ইসলামের ছেলে শওকত (৩০), আবুল কাশেমের ছেলে ইমন (৩০), মৃত ওদর আলী বাইদ্যার ছেলে মোশারফসহ (৫০) অজ্ঞাত ৪/৫জনের বিরুদ্ধে শ্রীপুর থানায় মামলা দায়ের করেন।

নিহত রানা ও চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বাবা আমিনুল ইসলাম জানান, রানা মারা যাওয়ার আগে অভিযুক্তদের নাম ও নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য জানিয়েছে। অভিযুক্তরা নিহত রানাকে শুক্রবার রাত ১১টার দিকে বাড়ি থেকে ডেকে নেয়। পরে চুরির অপাবদ দিয়ে শিপনের ভাঙ্গারী দোকানের সামনে রাস্তায় ফেলে রাতভর তার ওপর পৈশাচিক নির্যাতন চালায়।

তারা রানার মুখে কাগজ গুজে দিয়ে শরীরের বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার বৈদ্যুতিক শক দেয়। এছাড়াও পুরুষাঙ্গের ভেতর রড ঢুকিয়ে দেয়। সে চিৎকার শুরু করলে মুখে কাগজের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া হয়। পরে ড্রিল মেশিন দিয়ে পা ছিদ্র করে ফেলে। হাতুড়ি দিয়ে পিটিয়ে বুকের পাজর দুই হাত, পা ভেঙে দেয়। সন্তানের নির্মম নির্যাতনের কথা শুনে কান্নায় ভেঙে পড়েন রানার বাবা আমিনুল ইসলাম ও মা রেহেনা আক্তার।

নির্মম এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ফুসে উঠেছে এলাকার সাধারণ মানুষ। রোববার রাতে ময়নাতদন্ত শেষে রানার মরদেহ বাড়িতে আনা হলে বিক্ষোভে ফুসে উঠে গ্রামের মানুষ। তাৎক্ষণিক তারা বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করে। মানববন্ধন থেকে ঘাতকদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানানো হয়।

মানববন্ধনের পর এলাকাবাসী অভিযোগ করেন, ভাঙ্গারী ব্যবসার আড়ালে এলাকায় বড় একটি চোরের সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করে শিপন। তার এ সিন্ডিকেট আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় দিনে রাতে চুরি করে থাকে। প্রকাশ্যে রানাকে মারধর করা হলেও তাদের ভয়ে কেউ রানাকে উদ্ধার করতে সাহস পায়নি। গ্রামবাসীরা ২৪ ঘণ্টার মধ্যে রানার খুনিদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

রানার মা রেহেনা আকতার জানান, শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সকাল ৬টার দিকে রানাকে ঘরে পাওয়া যায়নি। এসময় খবর পান, তার ছেলেকে মারধর করছে। রানার বাবাকে নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে গিয়ে ছেলেকে উদ্ধার করতে যান। এসময় শিপনসহ অন্যরা তাদের বাধা দিলে তারা তাদের কাছে কাকুতি-মিনতি করেন, হাত-পায়ে ধরেন। তবুও শিপনের মন গলাতে পারেননি বলে জানান। হঠাৎ এসময় শিপনের সাথে তার ভাই আকাশ চুলের মুঠি ধরে আমাকে মারপিট শুরু করেন, এতে আমার মাথার চুল ছিড়ে যায়। তার স্বামী বাধা দিলে তাকে মারপিট করে। পরে নানা শর্তে একাধিক সাদা কাগজে টিপসই নেয়।

তিনি আরও জানান, উদ্ধারের পরপর রানাকে নিয়ে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওনা হলেও শিপনের লোকজন আমাদের হাসপাতালে যেতে বাধা দেন। পরে স্থানীয় নেতাদের সহযোগিতা নিয়ে রানাকে হাসপাতালে নেয়া হয়।

রানার বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, আমি বারবার আকুতি মিনতি করলেও আমার ছেলেকে তারা ছাড়লো না, আমি তাদের পায়ে পর্যন্ত ধরেছি। তবুও তারা আমার কথা শুনলো না। সবশেষ আমার ছেলেকে মেরেই ফেললো। আমার ছেলেকে তুলে নিয়ে দফায় দফায় নির্যাতন করে বুকের পাজর, দুই হাত ও পা ভেঙে দেয়। আমার ছেলের শরীরের এক ইঞ্চি পরিমাণ জায়গা নেই যে ওই স্থানে আঘাত করেনি। আমার ছেলেকে হত্যা করা হয়েছে, আমি হত্যাকারীদের বিচার চাই।

শ্রীপুর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান জানান, ঘাতকদের গ্রেপ্তারে পুলিশের একাধিক টিম কাজ করছে। দ্রুতই ঘাতকদের গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় আনা হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত