ঢাকা, মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১১ মিনিট আগে
শিরোনাম

ঢেলে সাজানো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৯ সেপ্টেম্বর ২০২২, ১৯:৩৬

ঢেলে সাজানো হচ্ছে ক্ষতিগ্রস্ত বিএম ডিপোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা
বিএম ডিপো ফটক। ছবি: প্রতিনিধি

অগ্নিকাণ্ড ও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্ত চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোর পুনর্গঠনের কাজ শুরু করেছে কর্তৃপক্ষ। নিরাপত্তার বিষয়কে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে নতুন করে তৈরি করা হচ্ছে ডিপো। ১৫০ কোটি টাকা ব্যয়ে ফায়ার সিস্টেমে ব্যাপক পরিবর্তন আনার পাশাপাশি অবকাঠামোগত উন্নয়ন, নতুন নতুন যন্ত্রপাতি স্থাপনের মাধ্যমে এটি আরও অত্যাধুনিক করার কাজ এগিয়ে চলেছে। কনটেইনার ডিপোর ভেতরেই ফায়ার পাম্প স্থাপন করা হয়েছে। যেখানে ১৯ মিনিটের মধ্যেই পুরো ডিপো ফোম সিস্টেমের আওতায় আনা হচ্ছে। যার ফলে অগ্নি দুর্ঘটনা ঘটলেও খুব সহজেই আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে।

এছাড়া অগ্নি দুর্ঘটনাটা এড়াতে ডিজেল ফায়ার পাম্প, ইলেকট্রনিক ফায়ার পাম্প ও জকি পাম্প স্থাপনের কাজও প্রায় শেষের দিকে। ইতোমধ্যে ডিপো চালুর জন্য নয়টি লাইসেন্সও নেয়া হয়েছে। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি সময়ে ডিপোটি চালুর আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরের ৪ জুন উপজেলার শীতলপুর এলাকায় অবস্থিত বিএম কন্টেইনার ডিপোতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ৫১ জন মানুষের মৃত্যু হয়। এ ঘটনা দেশজুড়ে আলোচিত হয়। সে ঘটনার পর কর্তৃপক্ষ ডিপোটির কার্যক্রম বন্ধ রাখলেও ডিপোটির অগ্নি নির্বাপক ব্যবস্থাসহ অন্যান্য অবস্থার পরিবর্তনের গুরুত্ব উপলব্ধি করে এর জন্য ১৫০ কোটি টাকা বরাদ্দ করে উন্নয়ন কাজ শুরু করে।

গতকাল ডিপো ঘুরে দেখা যায়, নতুন লে-আউটের অধীনে একটি তিনতলা অফিস কক্ষ নির্মাণ করা হচ্ছে। স্বয়ংক্রিয়ভাবে আগুন নিয়ন্ত্রণে তিন লক্ষ গ্যালন রিজার্ভ পানির ট্যাংক বসানো হচ্ছে। চালু হচ্ছে তিনটি ফায়ার পাম্পের সমন্বয়ে ফায়ার সিস্টেম। দুর্ঘটনায় অক্ষত শেডটির পাশাপাশি আগুনে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া শেডটি নতুন আঙ্গিকে দ্বিতল করা হচ্ছে। ভোগ্যপণ্য রাখার জন্য আলাদা শেড তৈরি করা হচ্ছে। ভবিষ্যতের বিষয় মাথায় রেখে ১২ হাজার স্কয়ার ফিটের ডেঞ্জারস গুডসের জন্য বিশেষ শেড বানানো হচ্ছে। নির্মাণাধীন ফায়ার ফোম সিস্টেমটি আগুন লাগার খবরে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিগন্যাল দেবে।

এছাড়া সীমানা প্রাচীরের নিরাপত্তায় লাইন ক্রসিং ডিটেকশন সিস্টেম চালু করা হচ্ছে। এই সিস্টেমে কেউ সীমানা প্রাচীর পার হতে চাইলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে বার্তা পৌঁছে যাবে। এছাড়াও কন্টেইনার ও কার্গো ট্রাকিং সিস্টেম চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে সিস্টেম চালু হলে কন্টেইনার কার্গো যেখানেই থাকবে তার তথ্য ডিপোতে সংরক্ষিত থাকবে। এমনকি কন্টেইনার মধ্যসাগরে থাকলেও এই সিস্টেমে তথ্য জানা যাবে।

দুর্ঘটনার পর পুরো ডিপোটিকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখার উদ্যোগ হিসেবে পরিচালনা টিমে পরিবর্তন, কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ, ফায়ার ফাইটিং প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ইতোমধ্যে প্রায় ১২০ জন কর্মচারীকে ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে অগ্নিনির্বাপনের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে সার্বক্ষণিক অ্যাম্বুলেন্স সেবাও চালু করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে কর্মচারীদের নিয়মিত বেতন প্রদানের পাশাপাশি নতুন করে সুযোগ-সুবিধা বাড়ানো হয়েছে বলে জানিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ।

এদিকে বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) বিএম কনটেইনার ডিপো পরিদর্শনে যান আন্তর্জাতিক কনটেইনার শিপিং সংস্থা মার্স্ক ও সুইডেনের কোম্পানি এইচ এন্ড এমের উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধিদল। ডিপোর সার্বিক কার্যক্রমে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন তারা।

প্রতিনিধিদলে ছিলেন এইচঅ্যান্ডএমের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ম্যাটস স্যামুয়েলসন, সুইডেন থেকে এইচঅ্যান্ডএমের বিজর্ন ব্লোমেগ্রেন, বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার জিয়াউর রহমান, বাংলাদেশের পাবলিক অ্যাফেয়ার্স ক্যালেবো অ্যানেলি, গুলশান আরা মুন্নি, ফ্রান্সিস গোমেজ এবং মার্স্ক লাইনের গ্লোবাল ভাইস প্রেসিডেন্ট ক্লাউস কোয়েলার্ট প্যাগ, সুইডেন থেকে সোফিয়া পার্টোভি, নেদারল্যান্ড থেকে কার্লিন ভ্যান ডের মার্ক, অ্যাক্তা কোহলি, মানব মেহতা, অভিজিৎ পাল, রাশেদুজ্জামান রানা প্রমুখ।

বিএম কনটেইনার ডিপো লিমিটেডের এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ক্যাপ্টেন মাইনুল আহসান বলেন, নতুন ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার বিষয়টি সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। দুর্ঘটনায় নিহত ও আহতদের পরিবারের পাশে আছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্তদের মাঝে ১৮ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। আহত তিন কর্মীকে চিকিৎসার জন্য ভারতে পাঠানো হয়েছে।

তিনি বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের পরিবারের দায়িত্বের পাশাপাশি তাদের ছেলেমেয়েদের অনার্স পর্যন্ত পড়াশোনার দায়িত্ব নিয়েছে ডিপো কর্তৃপক্ষ। পড়ালেখা শেষ করে তারা চাইলে ডিপোতে চাকরি করতে পারবে। তিন মাস ধরে কোম্পানির প্রফিট নেই। তবুও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন দিয়ে দেয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের বিএম ডিপোটি ২৪ একর জায়গার উপর অবস্থিত। এই ডিপোটি ২০২১ সালে প্রায় ৬০ হাজার টিইউএস রপ্তানি কন্টেইনটার হ্যান্ডেলিং করেছে, আমদানি করেছে ২২ হাজার টিইউএস এবং খালি কন্টেইনার হ্যান্ডেলিং করেছে ৪০ হাজার।

বাংলাদেশ জার্নাল/এসকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত