ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ মিনিট আগে
শিরোনাম

জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে ঘরছাড়া করলো সৎছেলে

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৩ অক্টোবর ২০২২, ১৬:৪৯

জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে ঘরছাড়া করলো সৎছেলে
রহিমন বিবি। ছবি: প্রতিনিধি

স্ত্রী, ছেলে ও তিন মেয়ে নিয়ে ছিল আনসার আলীর সংসার। হঠাৎ স্ত্রী মারা যাওয়ার পর বিয়ে করেন রহিমন নেসাকে (৭০)। দীর্ঘদিন সংসার করার পরও রহিমন নেসার ঘরে কোনো সন্তানের জন্ম হয়নি। সৎ ছেলে ও মেয়েদের নিয়েই ছিল তার সংসার। পনের বছর আগে স্বামী আনসার আলী মারা যান।

মৃত্যুর পর স্বামীর রেখে যাওয়া সম্পদ ছিল তার শেষ ভরসা। সেই শেষ ভরসার সম্পদই বৃদ্ধ বয়সে রহিমনের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পর সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা তার অংশের জমি লিখে নিয়েছে বৃদ্ধ বয়সে দেখভাল করার কথা বলে। কিন্তু দেখভাল তো দূরের কথা; ৬মাস আগে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছে তার সৎ ছেলে ও নাতি। প্রতিবেশিরা রহিমনকে আশ্রয় দিয়েছিল। কিন্তু আশ্রয়দাতাকে হুমকি দেয়ার প্রতিবেশিরাও তাকে ঠাঁই দিচ্ছে না।

এমন অমানবিক ঘটনা ঘটেছে গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামে। ৭৫ বছর বয়সী রহিমন বিবি উপজেলার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের মৃত আনসার আলীর স্ত্রী। তিনি তার সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন (৭২) ও নাতি মোস্তফা কামাল (৫০) এর বিরুদ্ধে জমি লিখে নিয়ে তাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার অভিযোগ এনেছেন।

স্থানীয়রা দীর্ঘদিন ধরে বাবা-ছেলের বর্বর কর্মকাণ্ড দেখে আসলেও তাদের কাছে অসহায়।

ভুক্তভোগী রহিমন বিবি জানান, স্বামী যখন তাকে বিয়ে করে বাড়িতে আনেন তখন ওই সন্তানরা অনেক ছোট। তিনি নিঃসন্তান হওয়ায় আগের ঘরের এক ছেলে ও তিন মেয়েকে নিজ সন্তানের মত করে বড় করেছেন। কিন্তু শেষ বয়সে তার সাথে তারা এমন আচরণ করবে তা তিনি ভাবতেও পারেননি। সৎ ছেলে আফাজ উদ্দিন ও নাতি মোস্তফা বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর এখন বিভিন্ন জনের বাড়িতে রাতযাপন করছেন তিনি। খাওয়া দাওয়া হয় অন্যের দয়ায়।

রোববার বরমী ইউনিয়নের বালিয়াপাড়া গ্রামের সাহিদের দোকানের সামনে কথা রহিমনের সাথে। এসময় তিনি নির্বাক হয়ে পড়েন। চোখ থেকে অঝোরে পানি পরছিলো। সাংবাদিক আসার খবরে সেখানে ভিড় জমান ৩০ থেকে ৪০জন গ্রামবাসী। তাদের একজন ইসমাইল।

তিনি জানান, সম্প্রতি রহিমনকে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠানোর উদ্যোগ নেন সৎ ছেলে আফাজ। এনিয়ে তারা বৃদ্ধাশ্রম কর্তৃপক্ষের সাথে যোগাযোগ করলে জানায়, বৃদ্ধাশ্রমে থাকতে হলে কোভিড সনদ থাকতে হবে। তাই শনিবার আরেক নাতনি শারজিন রিকশাযোগে কোভিড ভ্যাকসিনের টিকা দেয়ার কথা বলে বাড়ি থেকে বের হলে তাদের সন্দেহ হয়। তিনি বলেন, টিকা দেয়ার কথা বলে রহিমনকে অন্য কোথাও ছেড়ে আসতে পারে তারা। তাই আমরা বাধা দিয়েছি। এনিয়ে ছেলে আফাজের সাথে কথা কাটাকাটি ও বাকবিতণ্ড হয়েছে।

বাড়ি থেকে বের করে দেয়ার পর দীর্ঘদিন ছিলেন প্রতিবেশি সাহেরা খাতুনের আশ্রয়ে। সাহেরা খাতুন জানান, রহিমনকে আশ্রয় দেয়ার কারণে প্রায়ই তার সৎ ছেলের পরিবারের লোকজন নানা ধরনের বিদ্রুপাত্মক কথাবার্তা বলতো। আমার স্বামী নাই, তাই রহিমন খালাকে নিয়ে থাকতে চেয়েছিলাম। সেখানেও তার ছেলে-নাতি তাকে আশ্রয় না দিতে হুমকি দিতো।

বরমী ইউনিয়ন পরিষদের ১নং ওয়ার্ড সদস্য আবুল কাশেমের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করে তাকে পাওয়া যায়নি। তবে একই ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য জাকির হোসেন মাস্টার বলেন, জমিজমা ও পারিবারিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই তাদের মধ্যে ঝগড়া বিবাদ হতো। আমি ইউপি সদস্য থাকাকালে বিষয়টি একাধিকবার সমাধান করেছিলাম। এখন কী অবস্থায় আছে তা আমার জানা নেই।

এ বিষয়ে বরমী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন বলেন, বিষয়টি কেউ আমাকে জানায়নি। আমি খোঁজ খবর নিয়ে রহিমনকে সার্বিক সহযোগিতা করবো।

শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. তরিকুল ইসলাম বলেন, জমি লিখে নিয়ে বৃদ্ধাকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়া খুবই অমানবিক। বিষয়টি আমার জানা ছিল না। আমি বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবো। পাশাপাশি বৃদ্ধাকে সরকারি যাবতীয় সুযোগ সুবিধা দেয়া হবে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত