ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

মুক্তিযুদ্ধে এই দিনে কুষ্টিয়ায় হয়েছিল সর্ববৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ

  কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১২:৫৫  
আপডেট :
 ২৬ নভেম্বর ২০২২, ১৩:০৬

মুক্তিযুদ্ধে এই দিনে কুষ্টিয়ায় হয়েছিল সর্ববৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ
মুক্তিযুদ্ধ। ফাইল ছবি

১৯৭১ সালের ২৬ নভেম্বর কুষ্টিয়ায় সর্ববৃহৎ গেরিলা যুদ্ধ সংঘটিত হয়েছিল জেলার দৌলতপুর উপজেলার পিয়ারপুর ইউনিয়নের শেরপুর গ্রামের মঙ্গলপুর মাঠে। এ যুদ্ধে নেতৃত্ব দেন তৎকালীন কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার ও মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ও সাবেক সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) জলিলুর রহমান।

২৫ নভেম্বর রাতে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান প্রায় ১০০ জন সুসজ্জিত মুক্তিবাহিনীর একটি দল নিয়ে শেরপুরে সেনপাড়ায় অবস্থান করেন। বিষয়টি পাকবাহিনীরা আঁচ করতে পেরে মধ্যরাতে শেরপুরে আগুন ধরিয়ে দিয়ে বেপরোয়াভাবে গুলিবর্ষণ করে। মুক্তিবাহিনী পাকবাহিনীর অবস্থান জানতে পেরে মিরপুর ও দৌলতপুর থানার মধ্যবর্তী স্থান সাগরখালী নদীর তীরে তারা অবস্থান করেন। রাত ৩টায় তারা পাকবাহিনীর মোকাবিলার জন্য ক্রমান্বয়ে অগ্রসর হতে থাকে। ২৬ নভেম্বর ভোর ৫টায় উভয় পক্ষ পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৬ ঘণ্টাব্যাপী তুমুল যুদ্ধের পর পাকবাহিনী পিছু হটতে বাধ্য হয়। এ যুদ্ধে ৬০ জন পাকসৈন্য নিহত এবং শেরপুর গ্রামের মৃত হাজ্বী মেহের আলীর ছেলে হাবিবুর রহমান নামে এক মুক্তিযোদ্ধা শহিদ হন। এ ছাড়াও একই গ্রামের মৃত পঁচা বিশ্বাসের ছেলে হিরা ও মৃত আবুল হোসেন বিশ্বাসের ছেলে আজিজুল নামের দুই মুক্তিযোদ্ধা গুরুতর আহত হন।

কুষ্টিয়া ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার ও মিরপুর উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান

কুষ্টিয়া জেলায় সংঘটিত সর্ববৃহৎ এ গেরিলা যুদ্ধে পাক হানাদার বাহিনীর পরাজয় এবং ক্ষয়-ক্ষতির কারণে দৌলতপুর ও মিরপুর থানার একটা বিরাট এলাকা মুক্তিবাহিনীর অবস্থান আরও সুদৃঢ় হয়। এর ফলে মুজিব বাহিনীর কমান্ডার নাজমুল করিম সুফি, গ্রুপ কমান্ডার হাবিবুর রহমান ও ইদ্রিস আলীর সহযোগিতায় পাহাড়পুর পুরাতন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মুক্তিবাহিনীর একটি শক্তিশালী ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। কুষ্টিয়া সাব সেক্টর কমান্ডার তৎকালীন লে. খন্দকার নুরুন্নবী এই ক্যাম্প সরেজমিনে পরিদর্শন করে অনুমোদন প্রদান করেন। শেরপুর যুদ্ধের পরে এলাকায় প্রচার ছিল সংশ্লিষ্ট এলাকায় ১ হাজার মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান করছে। ৭ ডিসেম্বর ভোরে আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর সদস্য আমলাকে মুক্ত করেন এবং ওই দিন সন্ধ্যার পর আফতাব উদ্দিন খানের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা সুলতানপুর গ্রামের জিকে ক্যানালের পশ্চিমপাশে মৃত আবুল হোসেন জোয়ার্দ্দারের বাড়িসংলগ্ন স্থানে অবস্থান গ্রহণ করেন।

তৎকালীন মিরপুর থানা কাউন্সিল বর্তমান উপজেলা পরিষদ ভবন এলাকায় ভারী অস্ত্রে সজ্জিত ২৫০ জন পাকবাহিনীর একটি শক্তিশালী ঘাঁটি ছিল। পাকবাহিনীর এ ঘাঁটি থেকে মুক্তিবাহিনীর অবস্থান ছিল খুব কাছে। মুক্তিবাহিনীর অবস্থানের বিষয়টি জানতে পেরে পাকবাহিনী রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে থাকে। পালিয়ে যাওয়ার সময় মিরপুর থানার (পুলিশ ফাঁড়ি) সমস্ত কাগজপত্র পুড়িয়ে দেয়। যার ফলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে ই-৯ এর গ্রুপ কমান্ডার আফতাব উদ্দিন খান ১৭০ জন মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে মিরপুর থানায় স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা গান-স্যালুটের মাধ্যমে উত্তোলন করেন। এরপর ৬৫ জন পাকহানাদার বাহিনীর দোসর ও রাজাকার পাহাড়পুর মুক্তিবাহিনীর ক্যাম্পে আত্মসমর্পণ করেন। এ ভাবেই কুষ্টিয়া জেলার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিজয় সুচিত হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত