ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

বিজিবি-বিজিপি ৮ম সীমান্ত সম্মেলন সমাপ্ত

  নিজস্ব প্রতি‌বেদক

প্রকাশ : ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৫১  
আপডেট :
 ২৯ নভেম্বর ২০২২, ১৫:৫৭

বিজিবি-বিজিপি ৮ম সীমান্ত সম্মেলন সমাপ্ত
বিজিবি-বিজিপি সীমান্ত সম্মেলন। সংগৃহীত ছবি

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও মিয়ানমার বর্ডার গার্ড পুলিশের (বিজিপি) মধ্যে মিয়ানমারের রাজধানী নেপিদোতে আয়োজিত ৮ম সীমান্ত সম্মেলন শেষ হ‌য়ে‌ছে। ২৪ নভেম্বর সকালে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয়ে ২৭ নভেম্বর এ সম্মেলন শেষ হয়।

বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল সাকিল আহমেদের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ও অন্যান্য সংস্থার প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভুক্ত ছিলেন।

অপরদিকে ডেপুটি চিফ অব মিয়ানমার পুলিশ ফো‌র্সের (এমপিএফ) পুলিশ মেজর জেনারেল অং নেইং থু'র নেতৃত্বে ১৫ সদস্যের মিয়ানমার প্রতিনিধিদল সম্মেলনে অংশ নেয়। মিয়ানমার প্রতিনিধিদলে বিজিপির উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছাড়াও সে দেশের প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র, পররাষ্ট্র এবং অভিবাসন ও জনসংখ্যা বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরাও অন্তর্ভূক্ত ছিলেন।

সম্মেলনের সূচনা বক্তব্যে মিয়ানমার পুলিশ ফোর্সের ডেপুটি চিফ বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলকে উষ্ণ ও আন্তরিক অভ্যর্থনা জানান। তিনি বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ ও ভ্রাতৃত্বপূর্ণ মনোভাব বজায় রেখে এবং একে অপরের মধ্যে যাতে কোন মতানৈক্য সৃষ্টি না হয় সেজন্য সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও কর্তৃপক্ষের পরামর্শক্রমে সীমান্ত সমস্যাগুলো সমাধানের সদিচ্ছা প্রকাশ করেন।

তিনি ‘বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত চুক্তি-১৯৮০’-এর প্রতি মিয়ানমারের অটল অবস্থানের কথা ব্যক্ত করে অবৈধ মাদক পাচার ও সীমান্ত পারাপার রোধসহ বিচ্ছিন্নতাবাদী সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সম্ভাব্য হুমকি ও চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পুনরায় উভয় বাহিনীর মধ্যে সমন্বিত টহল শুরু করার বিষয়ে তাগিদ দেন।

বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের মহাপরিচালক তার সূচনা বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ ও উদার আতিথেয়তার জন্য মিয়ানমার সরকার এবং বিজিপি’র প্রতি ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি সম্মেলনের আয়োজনে অত্যন্ত সন্তুষ্টি প্রকাশ করে সম্মেলনটিকে বিজিবি এবং বিজিপি'র (এমপিএফ) মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মাইলফলক অর্জন বলে অভিহিত করেন।

তিনি সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চলমান সংঘাতের কারণে সীমান্তে সৃষ্ট উত্তেজনাকর অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিরসনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য বিজিপি’র প্রতি আহ্বান জানান।

বি‌জি‌বি মহাপ‌রিচালক মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে মাদকের প্রবাহ রোধ এবং অবৈধ অনুপ্রবেশসহ বিভিন্ন ধরনের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ মোকাবিলায় উভয় বাহিনীর যৌথ প্রচেষ্টার প্রয়োজনীয়তার কথা তুলে ধরে বিজিপি’র অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করেন।

এছাড়াও বিজিবি মহাপরিচালক বাংলাদেশে আশ্রয়প্রাপ্ত মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের বিষয়ে জাতীয় উদ্বেগের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন এবং মিয়ানমারের পক্ষ থেকে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণের জন্য অনুরোধ করেন।

এবারের সম্মেলনে গৃহিত সিদ্ধান্তসমূহ

সীমান্ত এলাকায় শান্তি-শৃঙ্খলা বজায় রাখতে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজনীতার কথা স্বীকার করে উভয় পক্ষই বিভিন্ন পর্যায়ে নির্ধারিত ফোকাল পয়েন্ট ব্যক্তির মধ্যে বিভিন্ন উপায়ে যোগাযোগ ও তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষই প্রতি দুই মাসে একবার ব্যাটালিয়ন কমান্ডার পর্যায়ের সমন্বয় সভা/পতাকা বৈঠক, বছরে দুইবার রিজিয়ন কমান্ডার পর্যায়ে এবং বছরে দুইবার বিজিবি এবং বিজিপি'র (এমপিএফ) মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের সীমান্ত সম্মেলনের আয়োজন করতে সম্মত হয়েছে। এছাড়া প্রতিমাসে/পরিস্থিতি বিবেচনায় বিওপি/কোম্পানী কমান্ডার পর্যায়ের বৈঠক করার কথাও বলা হয়েছে।

উভয় পক্ষ বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী/সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে একযোগে কাজ করার বিষয়ে একমত হয়। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির বিষয়টি গুরুত্বারোপ করে।

উভয় পক্ষ অবৈধ অনুপ্রবেশ/সীমান্ত পারাপার রোধে কার্যকরভাবে একে অপরকে সহযোগিতা করতে সম্মত হয়েছে।

সীমান্তের দুইপাশে আন্তঃসীমান্ত অপরাধীচক্র/সন্ত্রাসগোষ্ঠীর অবস্থান পরিলক্ষিত হলে তাদের অপতৎপরতা রোধকল্পে তাৎক্ষণিক তথ্য আদান-প্রদানসহ একে অপরকে কার্যকরভাবে সহযোগিতা করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।

মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে অবৈধভাবে ইয়াবা ও ক্রিস্টাল মেথ আইসসহ বিভিন্ন ধরনের মাদক পাচার রোধে মিয়ানমার সে দেশের জাতীয় মাদক নিয়ন্ত্রণ নীতি অনুসরণ করে মাদক বিরোধী কর্মকান্ড পরিচালনা করবে। উভয় পক্ষই মাদকের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে সীমান্তবর্তী জনগণের মধ্যে জনসচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করতে সম্মত হয়েছে।

পারস্পরিক তথ্য আদান-প্রদান এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অবগত করার মাধ্যমে চলমান সীমান্ত পরিস্থিতির উন্নয়ন এবং স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ সীমান্ত প্রতিষ্ঠায় উভয় পক্ষ যৌথভাবে কাজ করতে সম্মত হয়েছে।

উভয় পক্ষ ব্যাটালিয়ন পর্যায়ে পতাকা বৈঠক/এডহক বৈঠকের মাধ্যমে নিজ নিজ দেশের প্রচলিত আইন অনুসরণ করে দুই দেশের কারাগারে আটক নাগরিকদের কারাবাসের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আনুষ্ঠানিকভাবে হস্তান্তর/গ্রহণের বিষয়ে একমত হয়।

উভয় পক্ষই সীমান্ত সম্পর্কিত প্রচলিত আইন ও অনুশাসন মেনে চলতে সম্মত হয়েছে। দুই সীমান্তরক্ষী বাহিনী ও সীমান্তবর্তী শান্তিপ্রিয় জনগণের মধ্যে ভূল বোঝাবুঝি এবং বিভ্রান্তি এড়াতে মিয়ানমার ড্রোন/হেলিকপ্টার/বিমান চলাচলের আগাম তথ্যসহ সীমান্তে গোলাগুলি/বিস্ফোরণ ও নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযান পরিচালনা সংক্রান্ত তথ্য আদান-প্রদান করতে সম্মত হয়েছে। সীমান্ত কাঁটাতারে ই‌লে‌ক্ট্রিফি‌কেশন এবং ল্যান্ড মাইন স্থাপনের বিষয়ে বিজিবি গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করলে বিজিপি বিষয়টিকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করবে বলে আশ্বস্ত করে।

উভয় পক্ষই খেলাধুলা, প্রশিক্ষণ কর্মকান্ড বিনিময় এবং বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে শুভেচ্ছা সফরসহ বিভিন্ন আস্থা বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণে সম্মত হয়েছে।

বিজিবি ও বিজিপির মধ্যে পরবর্তী ৯ম সীমান্ত সম্মেলন আগামী বছ‌রের মে/জুন মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হওয়ার ব্যাপারে উভয় পক্ষ পারস্পরিক সম্মতি জানিয়েছে।

সম্মেলনের বাইরে বিজিবি মহাপরিচালক মিয়ানমারের উপ-স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং ইউনিয়ন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সাথেও আলাদাভাবে সাক্ষাত করেন। এ সময় তিনি বলপূর্বক বাস্তুচ্যূত মিয়ানমার নাগরিকদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের পাশাপাশি দুই বাহিনীর পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় এবং অন্যান্য দ্বিপাক্ষিক বিষয়াদি নিয়ে আলোচনা করেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত