ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৩ মিনিট আগে
শিরোনাম

পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর মহাদেবপুর

  মনোরমা স্মৃতি

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:০৫  
আপডেট :
 ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ১৬:০৯

পরিযায়ী পাখির কলতানে মুখর মহাদেবপুর
সংগৃহীত ছবি

শীতের হিমেল হাওয়ায় হাজার হাজার মাইল দূর থেকে উড়ে আসা হাজারো অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখরিত নওগাঁর মহাদেবপুর উপজেলা সদরের মধুবন, কলোনিপাড়া, কুঞ্জবন ও রামচন্দ্রপুর। এসব এলাকায় আত্রাই নদের বুকে বালিহাঁস, রাঙা ময়ূরী, ছোট স্বরালী নামক পরিয়াযী পাখির দেখা মিলছে। এসব পরিযায়ী পাখি নদীর স্বচ্ছ জরের সঙ্গে মিতালী করে দিনভর খুনসুটিতে মেতে থাকে।

চলতি শীত মৌসুমে অন্তত ১০ প্রজাতির কয়েক লাখ পরিযায়ী পাখি এসেছে আত্রাই নদীতে, বলছেন বিশেষজ্ঞরা।

জলে পাতি সরালি আর বালিহাঁসসহ নানা প্রজাতির পাখির অবাধ বিচরণ। মাঝেমধ্যেই মুক্ত আকাশে ডানা মেলে ওড়াউড়ি করছে হাজারো পাখি। নদের তীরের গাছের ডালেও বসছে এসব পাখি।

জানা যায়, সারা বছরই এসব এলাকায় আত্রাই নদীতে নানা ধরনের পরিযায়ী ও দেশীয় প্রজাতির পাখির বিচরণ থাকে। তবে শীতকালে পরিযায়ী পাখির দেখা মেলে বেশি। এ বছর নভেম্বর মাসের শুরু থেকে নানা জাতের পরিযায়ী পাখির কলরবে মুখর হতে থাকে নদীর বুক ও আশপাশের এলাকা।

নদীর তীরের পশ্চিম পাশে নদের পাশ দিয়ে পাকা বাঁধের রাস্তার দুই পাশে সারি সারি গাছ। পাখিদের কিচিরমিচিরে মুখর পুরো এলাকা।

সরেজমিনে দেখা যায়, মৌসুমি পাখিদের আরামে বসে থাকার জন্য আত্রাই নদীর পানিতে বেশ কিছু বাঁশ বেঁধে দেয়া হয়েছে। ঝাঁকে ঝাঁকে পাখি উড়ে এসে পানিতে পড়ছে। কেউ গা ভাসিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। কেউ গা পরিস্কার করছে। আবার কেউ বাঁশের উপর বসে আরাম করছে। পাখিদের কিচির মিচির শব্দে মুখরিত হয়ে উঠছে নদীর দু’পাড়। বালিহাঁস, সরালি হাঁস, পানকৌড়ি, রাতচোরা, বক, মাছরাঙ্গাসহ বিভিন্ন প্রজাতির হাজারো পাখির বিচরণ। মনোরম এ পরিবেশ যে কাউকে মুগ্ধ করবে।

স্থানীয়রা জানান, ১০-১২ বছর ধরে এসব জায়গায় পরিযায়ী পাখি আসছে। বেশ কয়েক প্রজাতির পাখির মধ্যে বালিহাঁস ও পাতি সরালির সংখ্যাই বেশি। পরিযায়ী পাখি ছাড়াও দেশি প্রজাতির শামুকখোল, পানকৌড়ি, ছন্নিহাঁস ও বক নদের ওই এলাকা মুখর করে রাখে।

রামচন্দ্রপুর এলাকার এক শিক্ষার্থী বলেন, নিজের এলাকায় এত পাখি দেখে ভালো লাগে। আত্রাই নদের ওপর নির্মিত একটি নতুন সেতুর ওপর দাঁড়িয়ে অনেকেই আসা-যাওয়ার পথে পাখি দেখতে দাঁড়িয়ে যান। বাড়িতে থাকাকালে পাখিদের আনাগোনা দেখে মন উৎফুল্ল হয়ে যায়।

মহাদেবপুর উপজেলার পরিবেশবাদীরা জানান, শুরুতে এলাকার কিছু মানুষ পরিযায়ী পাখি অবাধে শিকার করত। ২০১২ সালে পাখি ও বন্য প্রাণী রক্ষার আন্দোলনের অংশ হিসেবে এলাকার কিছু তরুণ ও যুবক এক জোট হয়ে প্রাণ ও প্রকৃতি নামের সংগঠন গড়ে তোলেন। সংগঠনের কর্মীরা স্থানীয় ব্যক্তিদের সচেতন করার পাশাপাশি পাখি হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছেন।

তারা আরও জানান, আগে আত্রাই নদীর মধুবন ও কুঞ্জবন এলাকায় ড্রেজার মেশিন দিয়ে বালু তোলা হতো। আন্দোলনের ফলে প্রশাসন ওই এলাকায় বালু উত্তোলন বন্ধ করে দিয়েছে। পাখিরা এখন নিরাপদে আছে।

মহাদেবপুর কলেজ পাড়ার অ্যাডভোকেট সামাউন নবী সামিম বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, মহাদেবপুর উপজেলায় শুধু আত্রাই নদীতে নয়, বিভিন্ন জায়গায় এমন দেশি-বিদেশি পাখি সারা বছর জুড়েই থাকে। পাখির জন্য এই এলাকা খুব নিরাপদ। তবে নদীতে বালু উত্তোলন বন্ধ করে কিছু এলাকা পাখিদের জন্য অভায়ারণ্য ঘোষণা করলে আরও ভালো হতো।

নওগাঁর মহাদেবপুরের সাংবাদিক মো. গোলাম রসুল বাবু বলেন, পাখি ও জীববৈচিত্র্য বাঁচলে পরিবেশ বাঁচবে, পরিবেশ বাঁচলে মানুষ বাঁচবে। আমাদের উচিত এসব পখির জন্য নিরাপদ আশ্রয়স্থল তৈরি করে দেয়া।

মহাদেবপুর উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা একেএম জামান বাংলাদেশ জার্নালকে জানান, আত্রাই নদীর পূর্ব-পশ্চিম দুপাশেই মাছের অভয়াশ্রম গড়ে তোলায় দেশি মাছের উৎপাদন যেমন বাড়ছে, পাশাপাশি পরিযায়ী পাখির বিচরণেও সুবিধা হচ্ছে।

মহাদেবপুর উপজেলা বন কর্মকর্তা আহসান হাবিব বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, পাখির অভয়াশ্রম গড়ে তুলতে স্থানীয় পাখিপ্রেমী যুবকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। এছাড়া অবাধে কেউ যেন পাখি শিকার করতে না পারে সে বিষয়টিও দেখা হচ্ছে। পাখির অভয়াশ্রম গড়ে ওঠায় এ উপজেলাটি বেশ প্রশংসিত।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত