ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

বকশিসের টাকার ভাগাভাগি, প্রতিশোধ নিতে খুন

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ ডিসেম্বর ২০২২, ২০:০৬

বকশিসের টাকার ভাগাভাগি, প্রতিশোধ নিতে খুন
আটককৃতরা। ছবি: প্রতিনিধি

বকশিসের টাকা ভাগাভাগি নিয়ে কথা কাটাকাটি। অতপর প্রতিশোধ নিতে খুন করা হন সিএনজি অটোরিকশা চালক হেলান উদ্দিন। সোমবার রাতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে হত্যার ঘটনায় জড়িত তিনজনকে আটক করা হয়।

মঙ্গলবার র‌্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ এসব তথ্য জানান।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- উপজেলার পশ্চিম শাকপুরা এলাকার মো.মনু মিয়ার ছেলে মোহাম্মদ বখতিয়ার (২৭), একই এলাকার মো. শফিকের ছেলে মো. ইলিয়াস (৩৫) ও মধ্যম শাকপুরার মৃত আহমেদ ছফার ছেলে মনির আহম্মদ প্রকাশ মেহেরাজ (২৬)।

লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, নিহত সিএনজি অটোরিকশা চালক হেলালের বাড়ি নেত্রকোণা জেলার পূর্বধূলার নিজহোগলা গ্রামে। হেলাল দীর্ঘদিন ধরে চট্টগ্রামের বোয়ালখালীর জামদারহাট এলাকায় পরিবার নিয়ে ভাড়া বাসায় বসবাস করতো। গাড়ি চালানোর সুবাধে ইলিয়াস নামের এক ব্যক্তির সাথে তার পরিচয় হয়। ইলিয়াস পেশায় একজন সিএনজি অটোরিকশা গ্যারেজের মিস্ত্রি। চার মাস আগে ইলিয়াসের মামাতো ভাইয়ের একটি সিএনজি বিক্রির বিষয়ে নিহত হেলালের সহযোগিতা চায় ইলিয়াস। সিএনজিটি বিক্রি করে দিতে পারলে দুজন ৫ হাজার টাকা বকশিস পাবে বলে জানায় ইলিয়াস। পরে ১ লাখ ৫৫ হাজার টাকায় তারা সিএনজি অটোরিকশাটি বিক্রি করে। এতে ইলিয়াসের মামাতো ভাই খুশি হয়ে ইলিয়াসকে বকশিস দেয়। সেই টাকা থেকে ইলিয়াস কিছু টাকা রেখে বাকি ১ হাজার টাকা হেলাল উদ্দিনকে দেয়। টাকা কম দেয়া নিয়ে দু’জনের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এক পর্যায়ে উভয়ের মধ্যে হাতাহাতিসহ মারপিটও হয়। পরে ইলিয়াস প্রতিহিংসাপরায়ণ হয়ে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য সুযোগ খুঁজতে থাকে।

অধিনায়ক লে. কর্নেল এম এ ইউসুফ বলেন, ইলিয়াস তার পরিচিত সিএনজি অটোরিকশা চালক বখতিয়ার ও মনির আহম্মদ ওরফে মেহেরাজ নামে দুজনকে ভাড়া করে হেলাল উদ্দিনকে হত্যা করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা অনুযায়ী ২৯ নভেম্বর সন্ধ্যায় ইলিয়াস হেলাল উদ্দিনকে তার সিএনজি কেনাবেচার উদ্দেশ্যে কথা বলার জন্য বোয়ালখালী পৌরসভার সিও অফিসসংলগ্ন একটি সিএনজি স্টেশনে আসতে বলে। হেলাল উদ্দিন ওই জায়গায় ইলিয়াসের সাথে দেখা করে। ইলিয়াস হেলালের সিএনজিসহ তাকে নিয়ে সিএনজি কেনার কথা বলে উপজেলার আমুচিয়া ইউনিয়নের পোস্ট অফিস সড়ক থেকে একটু ভেতরে দুর্গম এলাকার একটি খালি জায়গায় নিয়ে যায়। আরও একটি সিএনজি নিয়ে তার অপর সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ হেলাল উদ্দিনের সিএনজির পেছন পেছন তাদের কাছে উপস্থিত হয়। এরপর মিস্ত্রী ইলিয়াস হেলালকে কিল-ঘুষি ও লাথি মারতে থাকে। বখতিয়ার কাঠের লাঠি দিয়ে হেলাল উদ্দিনের মাথায় আঘাত করে ও মেহেরাজ তাৎক্ষণিকভাবে তার সাথে থাকা ছুরি দিয়ে পিঠে ছুরিকাঘাত করে। এতেও ক্ষান্ত না হয়ে ইলিয়াস সিএনজি থেকে হাতুড়ি নিয়ে এসে হেলালের মাথায় উপুর্যপরি আঘাত করে এবং মৃত্যু নিশ্চিত করে ইলিয়াস হেলালের সিএনজি নিয়ে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে ইলিয়াসের দুই সহযোগী বখতিয়ার ও মেহেরাজ মিলে লাশটি পাশের একটি ধানি জমির ওপর রেখে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করে।

তিনি আরও বলেন, এ ঘটনায় ৪ ডিসেম্বর নিহত হেলালের স্ত্রী বাদী হয়ে ৫ জনকে এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা তিন চারজনকে আসামিকে করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এদিনই আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য তার স্ত্রী র‌্যাবের কাছে একটি লিখিত আবেদন করেন। এ ঘটনায় র‌্যাব গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। গতকাল রাতে নগরীর শাহ আমানত ব্রিজ এলাকা থেকে মোহাম্মদ বখতিয়ারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এরপর চাকতাই এলাকা থেকে হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. ইলিয়াসকে এবং বোয়ালখালী পৌরসদরের মীরপাড়া থেকে মনির আহম্মদ প্রকাশ মেহেরাজকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তার আসামিরা হেলালকে হত্যার সাথে সরাসরি জড়িত থাকার কথা স্বীকার করে। গ্রেপ্তার আসামিদের সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত