ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৮ মিনিট আগে
শিরোনাম

এলসি কমে যাওয়ায় কমেছে আমদানি

  মনির ফয়সাল, চট্টগ্রাম থেকে

প্রকাশ : ২৭ ডিসেম্বর ২০২২, ১২:৫২

এলসি কমে যাওয়ায় কমেছে আমদানি
এলসি কমে যাওয়ায় কমেছে আমদানি। ছবি: বাংলাদেশ জার্নাল

বিশ্বজুড়ে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা কমছে। এতে আন্তর্জাতিক বাজারে সব ধরনের ভোগ্যপণ্যের দামে ধস নেমেছে। এছাড়া দেশের ভোগ্যপণ্যের বৃহৎ পাইকারি বাজার চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে রমজানের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে।

রমজানের বাজার ধরার জন্য ব্যবসায়ীরা দুই আড়াই মাস আগে থেকে পণ্য গুদামজাতকরণ শুরু করেন। পরবর্তীতে সেইসব পণ্য ক্রেতাদের অর্ডার অনুযায়ী দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করবেন তারা। তবে এবারের চিত্রটা ভিন্ন বলছেন ব্যবসায়ীরা। ডলার সংকটের অজুহাত দেখিয়ে অনেক ব্যাংক আগের মতো এলসি (ঋণপত্র) খুলছেন না। যার ফলে রমজানের পণ্য আমদানিতে কিছুটা বিঘ্ন ঘটছে। তাই স্বাভাবিকভাবে রমজানের পণ্য সরবরাহ নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন ব্যবসায়ীরা।

এদিকে আগামী মার্চে রমজান মাস শুরু হচ্ছে। সাধারণত রমজানের একমাস আগেই আমদানি করা পণ্য দেশে চলে আসে। আর এলসি খোলা থেকে আমদানিকৃত পণ্য গুদামজাতের পর সরবরাহ পর্যন্ত প্রায় আড়াই মাস সময় লাগে। এই হিসেবে ব্যবসায়ীদের হাতে আর তিনমাসের মতো সময় আছে। এই সময়ে মধ্যে যদি চলমান সংকটের সমাধান না হয় তাহলে আসন্ন রমজানে ভোগাবে ভোক্তাদের।

খাতুনগঞ্জের আড়তদাররা জানান, রমজান এলে শরবতের চাহিদা বেড়ে যায়। তাই চিনির ব্যবহারও বাড়ে কয়েক গুণ। বর্তমানে বাজারে চিনির দাম চড়া হলেও সরবরাহে কোনো ঘাটতি নেই। এছাড়া সারা দেশে প্রায় ৮০ হাজার টন ছোলার চাহিদা থাকে। তবে এখন পর্যন্ত ছোলার সরবরাহ স্বাভাবিক রয়েছে। অন্যদিকে রমজানে খেজুরের আলাদা চাহিদা থাকে। সাধারণত খেজুর আমদানি হয় ইরান, তিউনিসিয়া, দুবাই ও সৌদি আরব থেকে।

ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ডলার সংকটের কথা বলে মাঝারি ও ছোট আমদানিকারকদের এলসি খুলতে অনীহা প্রকাশ করছে ব্যাংক। এমনকি ভোগ্যপণ্য আমদানির ক্ষেত্রে কেন্দ্রিয় ব্যাংকের নানা নির্দেশনা থাকলেও ভোগ্যপণ্য আমদানির জন্য এলসি নিচ্ছে না বলে খাতুনগঞ্জের আমদানিকারকরা অভিযোগ করেছেন। অথচ এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে ম্যানেজ করে গুটিকয়েক ব্যবসায়ী কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়াকড়ির কারণে অর্থবছরের প্রথম দুই-তিন মাস (জুন-আগস্ট) কম প্রয়োজনীয় পণ্যের আমদানি কিছুটা কমলেও, পরে তা আবার বেড়ে যায়। বিলাসপণ্যের আমদানি বৃদ্ধি ডলার সংকটকে আরও ত্বরান্বিত করেছে বলে মন্তব্য করেছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

চট্টগ্রাম কাস্টমসের তথ্য মতে, আগস্ট মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ৯টি স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে। কিন্তু সেপ্টেম্বরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ১২টিতে। এমনকি ডলার সংকট বাড়ার পরও গত অক্টোবর স্ক্র্যাপ জাহাজ আমদানি হয়েছে ১৩টি।

স্ক্র্যাপ জাহাজের মতো ফল আমদানিও জুলাইয়ের পর থেকে বেড়েছে। জুলাই মাসে চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে ২১ হাজার ৫৭১ মেট্রিক টন কমলা, মাল্টা, আপেল, আঙ্গুর ও নাশপতি আসে। আগস্টে তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৩ হাজার ৪৫৪ মেট্রিক টনে। আর সেপ্টেম্বরে আমদানি হয় ৩৪ হাজার ১৯০ টন। আগের মাসের চেয়ে প্রায় ৮ হাজার টন বেড়ে সর্বশেষ অক্টোবর মাসে আমদানি দাঁড়িয়েছে ৪২ হাজার ৮৮ টন।

পাইকারী বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বর্তমানে ছোলা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৭৮ টাকায়। এছাড়া সাদা মটর ৫৯ টাকা, মটর ডাল ৬০ টাকা, মসুর ডাল (চিকন) ১৩০ টাকা, (মোটা) ৯০ টাকা এবং ভারতীয় গম বিক্রি হচ্ছে প্রতিমণ ১ হাজার ৬৫০ টাকায়। অন্যদিকে সয়াবিন তেল প্রতিমণ বিক্রি হচ্ছে ৬ হাজার ৬৮০ টাকা এবং পাম তেল বিক্রি হচ্ছে ৪ হাজার ৬০০ টাকায়। চিনি প্রতিমণ ৩ হাজার ৯৫০ টাকা, ভারতীয় মরিচ কেজি ৪৬৯ টাকা, হলুদ ১১০ টাকা, রসুন ৯৫ টাকা, আদা ১২০ টাকা এবং পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩৫ টাকায়। অপরদিকে এলাচ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ২০০ টাকা, লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৮০ টাকা এবং দারচিনি বিক্রি হচ্ছে ৪৭০ টাকায়।

চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার সাধারণ ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন বলেন, রমজানের তিন চার মাস আগে থেকে খাতুনগঞ্জের ব্যবসায়ীরা পণ্য আমদানির কাজ শুরু করেন। তবে এবছর আমরা ভিন্ন চিত্র দেখতে পারছি। এলসি খুলতে ব্যবসায়ীদের ভালোই বিপাকে পড়তে হচ্ছে। ডলার সংকটের কথা বলা হলেও কেউ কেউ ব্যাংক ম্যানেজ করে কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করছে। অথচ বাংলাদেশ মুক্ত অর্থনীতির দেশ। এখানে ছোট-বড় সবার সমান সুযোগ থাকা দরকার। তা না হলে ব্যবসায়ীদের বৃহৎ একটি অংশ দেউলিয়া হয়ে যাবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ব্যাংক ডলারের সংকটের কথা বলছে। এ কারণে ব্যবসায়ীদের এলসি নেয়া হচ্ছে না। তবে এই ফাঁকে কেউ কেউ কম প্রয়োজনীয় পণ্য আমদানি করছে। আমি এই বিষয়টি উচ্চপর্যায়ে অবহিত করেছি।

প্রসঙ্গত, আগামী মার্চে শুরু হতে যাওয়া রমজানে চাহিদা মেটাতে সাতটি ভোগ্যপণ্য আমদানিতে ২.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় করতে হবে বলে জানিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। দেশে নিত্যপণ্যের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখতে ব্যবসায়ীদের এলসি খুলতে যাতে কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য ‘ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেল’ গঠন করার কথা বলে বাংলাদেশ ব্যাংক।

আমদানি-রপ্তানিসহ দেশের সার্বিক ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি নিয়ে একটি সভায় বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষের প্রেজেন্টেশনে বলা হয়েছে, চলতি ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের মার্চ পর্যন্ত সময়ে ছোলা, মসুর ডাল, খেজুর, অপরিশোধিত সয়াবিন ও পাম তেল, চিনি ও গম আমদানিতে ২.৫ বিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। আগামী মার্চে শুরু হতে যাওয়া রমজানে বাজার স্বাভাবিক রাখতে এ পরিমাণ পণ্য আমদানি প্রয়োজন বলে মনে করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে ৮১২ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ২২ দশমিস ১৯ লাখ টন গম, ৯৭৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয়ে ৭ লাখ টন ভোজ্যতেল এবং ৮ লাখ টন চিনি আমদানিতে ৩৮৫ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে। এছাড়া ছোলা আমদানিতে ১৩৪ দশমিক ৪৯ মিলিয়ন ডলার, খেজুর আমদানিতে ৫২ দশমিক ৬৭ মিলিয়ন ডলার এবং মসুর ডাল আমদানিতে ১৪০ দশমিক ৬৪ মিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে বলে জানান বাণিজ্য সচিব।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত