ঢাকা, মঙ্গলবার, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৬ মিনিট আগে
শিরোনাম

কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ বন্ধ করায় শিক্ষকদের বিক্ষোভ, শিক্ষা কর্মকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা

  সাতক্ষীরা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৪ জানুয়ারি ২০২৩, ২১:১৭

কোরআন তেলাওয়াত ও গীতাপাঠ বন্ধ করায় শিক্ষকদের বিক্ষোভ, শিক্ষা কর্মকর্তার ক্ষমা প্রার্থনা
শিক্ষকদের বিক্ষোভ ও অভিযুক্ত শিক্ষা কর্মকর্তা (ইনসেটে)। ছবি: প্রতিনিধি

সাতক্ষীরার তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে কারিকুলাম রুপরেখা ২০২৩ বাস্তবায়নে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা। প্রশিক্ষণ বন্ধ রেখে বিক্ষুব্ধ শিক্ষকরা ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও তার অপসারণে জন্য নানা ধরনের স্লোগান দেন। একপর্যায়ে তালা উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা সেখানে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রর্থনা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

শনিবার দুপুর ১টায় কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের নতুন পাঠ্যসূচির সাথে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য অনুষ্ঠিত কারিকুলাম প্রশিক্ষণে এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, গত ৬ জানুয়ারি থেকে তালা উপজেলার ৮৫৬ জন শিক্ষক নিয়ে কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ে কারিকুলামের উপর শিক্ষক প্রশিক্ষণ কর্মশালা শুরু হয়।

ওই দিন স্কুলের রাশিদা রহমান ভবনের ১০২ নম্বর কক্ষে তথ্য যোগাযোগ প্রযুক্তি আইসিটি বিষয়ে শিক্ষকদের উদ্বোধনী কর্মশালায় প্রশিক্ষক মো. রিপন হোসেনের আহবানে শুরুতে মানিকহার মাদ্রসার সহকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলামকে কোরআন তেলোওয়াত করতে বলা হয়। এসময় সুজনশাহা মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের অপর সহকারী শিক্ষক স্বপ্না দাশকে গীতা পাঠ করার জন্য প্রস্তুত থাকতে বলেন। শিক্ষক খায়রুল ইসলাম কোরআন তেলোয়াত শুরু করলে হন্তদন্ত হয়ে তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ওই কক্ষে উপস্থিত হয়ে কেন কোরআন তেলোয়াত ও গীতা পাঠ করা হচ্ছে এজন্য প্রশিক্ষক রিপনসহ অন্যদের ধমক দেন। উত্তেজিত হয়ে রুঢ় ভাষায় কোরান তেলওয়াত বন্ধ করতে বলেন।

এঘটনায় প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকদের মধ্যে উত্তেজনা ও বিরুপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। শিক্ষা কর্মকর্তার এমন আচরণের বিষয়টি অন্যান্য শিক্ষকদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়লে উত্তেজনা দেখা দেয়। প্রশিক্ষণের চতুর্থদিনে শনিবার (১৪ জানুয়ারি) দুপুর ১টার দিকে অংশগ্রহণকারী শিক্ষকরা প্রশিক্ষণ ছেড়ে কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করে ওই শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নানা ধরনের স্লোগান দেন। তার অপসারণ দাবি করেন। পরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে ক্ষমা প্রর্থনা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সজিবুদৌল্লার শিক্ষকদের প্রশিক্ষণে কক্ষে ফিরে যাওয়ার অনুরোধ করলে শিক্ষকরা পুনরায় বিকেল সাড়ে ৩ টায় প্রশিক্ষণে অংশ নেন।

এসময় সাংবাদিকরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলে শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান, তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জগদিশ হালদার, সাধারণ সম্পাদক সজিব উদৌল্লাহ ও কুমিরা পাইলট মাধ্যমিক বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকসহ অন্যান্য শিক্ষকরা ১০২ নম্বর কক্ষে উপস্থিত হন।

এসময় কোরআন তেলাওয়াতকারী শিক্ষক খায়রুল ইসলাম তার বক্তবে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাকে বলেন স্যার ওই দিনের পর থেকে জাতীয় সঙ্গীত, কোরআন পাঠ,গীতা পাঠ কিছুই হয় না। যে কোনো কারণে হয়ত আপনার ভুল হয়েছে। কোরআন তেলাওয়াত বন্ধ করা আপনার ভুল হয়েছে। আপনার অনুতপ্ত ও ভুল স্বীকার করা উচিত। এসময় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও সভাপতি শিক্ষা কর্মকর্তার পক্ষ থেকে অনুতপ্ত হন ও ভুল স্বীকার করেন।

এবিষয়ে তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান বলেন, শিক্ষকদের কারিকুলামের উপর উপজেলার ৮৫৬ জন মাধ্যমিক শিক্ষকদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে। প্রথম দিনে আইসিটির প্রশিক্ষণ কক্ষে ভুলবোঝি হয় শিক্ষকদের সাথে। হঠাৎ শিক্ষকরা কেন বিক্ষোভ করলেন সেটা আমার জানা ছিল না। তবে বিষয়টি নিয়ে ভুলবোঝাবুঝির অবসান হয়েছে।

তালা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষক সমিতির সভাপতি জগদিশ হালদার ও সাধারণ সম্পাদক সজিব-উদ-দৌল্লাহ জানান, প্রশিক্ষণের প্রথম দিনে কোরআন তেলাওয়াত ও গীতা পাঠ নিয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার আচরণে শিক্ষকদের মধ্যে ক্ষোভ সষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে সাধারণ শিক্ষকরা বিক্ষোভ করলে শিক্ষা কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে এসে দুঃখ প্রকাশ ও ক্ষমা প্রর্থনা করলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত