পর্যটকদের জনপ্রিয় খাবার কুয়াকাটার বিষমুক্ত শুঁটকি
গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী
প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৩, ১৭:৩৮
কোন ধরনের ক্ষতিকারক কেমিক্যাল মিশ্রণ ছাড়াই শুধুমাত্র লবণ দিয়ে প্রক্রিয়াজাত করা হয় বিষমুক্ত শুঁটকি। আর সমুদ্রপাড়ে খোলা আকাশের নিচে কেবল রোদের আলো এবং বাতাসের সাহায্যে কাঁচা মাছ শুকিয়ে বিক্রি করা হয় ক্রেতাদের কাছে। আর শুঁটকি প্রেমিরাও উন্মুক্ত পরিবেশে প্রাকৃতিকভাবে শুকানো শুঁটকি কিনতে ছুটে আসছেন দূর-দূরান্ত থেকে। বিশেষ করে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় খাবার এখন কুয়াকাটার শুঁটকি।
তবে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা বলছেন, কাঁচা মাছ শুকিয়ে শুঁটকি উৎপাদনে নির্দিষ্ট স্থান না থাকায় ক্রেতাদের চাহিদানুযায়ী সরবরাহ করতে পারছেন না তারা। তাই কুয়াকাটার শুঁটকির ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে স্থায়ী শুঁটকি পল্লি নির্মাণের দাবি উৎপাদনকারীসহ সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের।
কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকত প্রাকৃতিকভাবে দর্শনার্থীদের কাছে বিখ্যাত হলেও বেশ কয়েক বছর ধরে আগন্তুকদের কাছে পর্যটন নগরীর খাদ্য তালিকায় নতুন মাত্রা যোগ করেছে কুয়াকাটার বিষমুক্ত শুঁটকি। যা ইতোমধ্যে অর্থনীতিতে ব্যাপক ভূমিকা রাখছে। তবে শুঁটকি উৎপাদনে সরকারি কিংবা বে-সরকারিভাবে নির্দিষ্ট কোন পল্লি না থাকায় গত কয়েক বছর ধরে শীত মৌসুমে কুয়াকাটা সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে অস্থায়ীভাবে প্রক্রিয়াজাত করছেন উৎপাদনকারীরা।
চলতি মৌসুমেও ভ্রাম্যমাণ অবস্থায় লেম্বুর বন, খাজুরা ও নিজামপুরসহ সৈকতের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে শুকানো হচ্ছে শুঁটকি। শুধুমাত্র লবণ মেখে সৈকতে বাঁশের মাচা বানিয়ে রোদে শুকিয়ে তৈরি করা হচ্ছে পর্যটকদের পছন্দের পোয়া শুঁটকি, সোনাপাতা, মধুফাইস্যা, রূপচাঁদা, শাপলাপাতা, চাপিলা, ফাইস্যা, লইট্টা, চিংড়ি, ছুড়ি, হাঙর, ভোল ও কোড়ালসহ অন্তত ৫০ প্রজাতির সুস্বাদু শুঁটকি মাছ। ফলে প্রতিনিয়ত শুঁটকি পল্লিতে পছন্দের শুঁটকি সংগ্রহে ভিড় জমান পর্যটকসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের ব্যবসায়ীরা।
ঢাকার মিরপুর থেকে আসা পর্যটক নয়নিকা আহমেদ জানান, আমরা দেশের বিভিন্ন এলাকার শুঁটকি খেয়েছি। কিন্তু কুয়াকাটার শুঁটকি অতুলনীয়।
পর্যটক নিলয়-রোদেলা দম্পতি জানান, বহুদিন ধরে অফিস কলিগদের কাছে কুয়াকাটার শুঁটকির কথা শুনেছি। কুয়াকাটা এসে দেখলাম আসলেই প্রাকৃতিকভাবে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাত করা হচ্ছে। তাই লইট্টাসহ কয়েক ধরনের শুঁটকি কিনেছি। পরিবারের পাশাপাশি স্বজনদের গিফট করবো।
এদিকে গঙ্গামতি এলাকার শুঁটকি উৎপাদনকারী হানিফ জানান, সৈকতে প্রায় ৩০ বছর ধরে শুঁটকি মাছের ব্যবসা করছেন তিনি। প্রতিবছরই তাদের বিভিন্ন কারণে স্থান পরিবর্তন করতে হচ্ছে। এতে অনেক সময় লোকসানও গুনতে হয়। একই কথা জানান, কুয়াকাটার একাধিক শুঁটকি দোকানি। তারা বলেন, যারা শুঁটকি তৈরি করে তাদের বার বার স্থানান্তরিত করা হয়। ফলে দোকানগুলোতে ক্রেতাদের ব্যাপক চাহিদা থাকলেও অনেক সময়ই পছন্দের শুঁটকির অভাবে ক্রেতাদের তা দেয়া যায় না। তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে শুঁটকি প্রক্রিয়াজাতকরণের লক্ষে একটি স্থায়ী পল্লি নির্ধারণের দাবি সংশ্লিষ্ট সবার।
কলাপাড়া ইউএনও শংকর চন্দ্র বৈদ্য জানান, স্থায়ী শুঁটকি পল্লি নির্মাণের লক্ষ্যে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে শুঁটকি ব্যবসায়ীদের এ সমস্যার সমাধান হবে।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি
