ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

সীমার মালিকের কোমরে দড়ি, পুলিশ সদস্যকে শোকজ

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৫ মার্চ ২০২৩, ২১:২৯

সীমার মালিকের কোমরে দড়ি,  পুলিশ সদস্যকে শোকজ
ছবি: প্রতিনিধি

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে সীমা অক্সিজেন লিমিটেডে বিস্ফোরণের ঘটনায় কারখানাটির পরিচালক পারভেজ হোসেনের (৪৮) একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। তবে এই ব্যবসায়ীকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে নিয়ে যাওয়ার একটি ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ছবিটি রীতিমতো ‘টক অব দ্য চট্টগ্রামে’ পরিণত হয়।

এদিকে আদালতে হাজির করার সময় হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বাঁধার ঘটনায় দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যকে শোকজ করা হয়েছে।

বুধবার দুপুরে চট্টগ্রাম জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট বেগম নাজমুন নাহারের আদালতে হাজির করার সময় হাতে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বাঁধা হয় পারভেজ হোসেন সান্টুর।

ফেসবুকে পারভেজ হোসেন সান্টুর প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে একের পর এক পোস্ট দিতে থাকেন শিক্ষক, আইনজীবী, সমাজসেবক, রাজনীতিবিদ, গণমাধ্যমকর্মীসহ নানা শ্রেণিপেশার মানুষ। সবারই এক কথা, অক্সিজেন প্ল্যান্টে বিস্ফোরণে ৭ জন নিহত হওয়ার পর যদি মালিককে গ্রেপ্তার করে কোমরে দড়ি বাঁধা হয় তাহলে প্রশাসনের যারা তদারকি করেননি, তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না কেন?

পারভেজ হোসেন সান্টুকে আদালতে হাজির করার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) অরুণ কান্তিকে শোকজ করা হয়। চট্টগ্রাম শিল্প পুলিশের এসপি মোহাম্মদ সুলাইমান বিষয়টি নিশ্চিত করেন।

তিনি বলেন, সীমা অক্সিজেন লিমিটেডের পরিচালক পারভেজকে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করার সময় দায়িত্ব থাকা উপপরিদর্শক (এসআই) অরুণ কান্তিকে শোকজ করা হয়েছে। মূল দায়িত্ব ছিলেন অরুণ কান্তি, সে হিসেবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) মো. আবদুর রশীদ বলেন, ব্যবসায়ী পারভেজ হোসেনকে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে হাজির করাটা অন্যায় ও বেআইনি আচরণ করেছেন। নিরাপত্তার জন্য যা করার সেটা করবে কিন্তু একজন ব্যবসায়ীকে হাতে হাতকড়া ও কোমরে দড়ি বেঁধে দেয়া কাজটা ঠিক হয়নি। যারা এই কাজ করেছেন তারা ঠিক করেনি।

কৃষ্ণ চন্দ্র দাশ নামে একজন লিখেছেন, কোমরে এ দড়ি মানে দেশের হাজারো শিল্প প্রতিষ্ঠানের কোমরে দড়ি। তিনি একজন উদ্যোক্তা। এ হিসেবে হাজারো উদ্যোক্তার কোমড়ে দড়ি। যেহেতু তিনি মামলায় আজহার নামীয় আসামি, তাকে দাগি আসামির মতো দড়ি বেঁধে না নিয়ে ভিন্নভাবে নেয়া যেত।

সান্টুকে গ্রেপ্তারের তীব্র নিন্দা জানিয়ে সীতাকুণ্ডের নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের সদস্য সচিব গিয়াস উদ্দিন তার ফেসবুকে লিখেছেন, বিএম ডিপো নামক ভাসুরের কথা মুখে আনলে পাপ, আর সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের ৯০ শতাংশ শ্রমিক সীতাকুণ্ডের। এটাই তার অপরাধ। তাই ওকেই ধরতে হবে।

মহিউদ্দিন বাবলু নামে একজন রাজনীতিবিদ লিখেছেন, দুর্ঘটনা হতেই পারে। সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টের মালিক দেশের একজন শিল্পপতি ও সম্মানিত নাগরিক। তাকে এভাবে কোমরে দড়ি বেঁধে আদালতে তোলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। এটি অত্যন্ত অমানবিক এবং দুঃখজনক। যা শিল্প পুলিশের বাড়াবাড়ি। একটি বিশেষ মহল দ্বারা সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করার ষড়যন্ত্র।

বুধবার চট্টগ্রাম চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট কামরুন নাহার রুমীর আদালতে পারভেজ হোসেনর একদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।

এর আগে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় নগরের জিইসি মোড় থেকে পারভেজ হোসেনকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ চট্টগ্রাম ইউনিট। গত ৬ মার্চ রাত সাড়ে ১১টায় বিস্ফোরণে নিহত আবদুল কাদেরের স্ত্রী রোকেয়া বেগম বাদী হয়ে সীমা অক্সিজেন প্লান্টের ৩ মালিকসহ (পারভেজ উদ্দিন সান্টু, মামুন উদ্দিন, আশরাফ উদ্দিন) ১৬ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন।

মামলায় অন্য যাদের অভিযুক্ত করা হয়েছে তারা হলেন, প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার আব্দুল আলীম (৪৫), প্ল্যান্ট অপারেটর ইনচার্জ সামসুজ্জামান শিকদার (৬২), প্ল্যান্ট অপারেটর খুরশিদ আলম (৫০), প্ল্যান্ট অপারেটর সেলিম জাহান (৫৮), এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর মো. কামাল উদ্দিন, প্রশাসনিক কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়া, কর্মকর্তা সামিউল, শান্তনু রায়, ইদ্রিস আলী, সানা উল্লাহ, সিরাজ উদ-দৌলা, রাকিবুল ও রাজীব।

তবে মামলা দায়েরের এক সপ্তাহ পরও আসামিরা কেউ আটক হয়নি। ৮ম দিনে নগরী থেকে ২নং আসামি সীমা গ্রুপের মালিক পারভেজ উদ্দিন সান্টুকে গ্রেপ্তার করে শিল্প পুলিশ।

প্রসঙ্গত, গত ৪ মার্চ বিকেল সাড়ে ৪টায় সীতাকুণ্ড উপজেলার সোনাইছড়ি ইউনিয়নের কদমরসুল এলাকার কেশবপুর গ্রামে সীমা অক্সিজেন প্ল্যান্টে ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে সাতজন নিহত হন। আহত হন ৩০ জন। এ ঘটনায় কারও উড়ে গেছে হাত, কারও পা। বহু মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছেন। এখনও অনেকে হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

এ ঘটনায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। মঙ্গলবার জেলা প্রশাসকের কাছে তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি। তদন্ত প্রতিবেদনের বিস্তারিত প্রকাশ করা না হলেও প্রতিবেদনে এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ৯টি সুপারিশ পেশ করা হয়েছে। এবং তদন্তে কারখানা পরিচালনায় মালিকপক্ষে অবহেলার প্রমাণ পেয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত