ঢাকা, বুধবার, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : কিছুক্ষণ আগে
শিরোনাম

পান বিক্রি করে হজে যেতে চান নব্বই বছরের ইমান আলী

  গোফরান পলাশ, পটুয়াখালী

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৩, ১৭:৫৪

পান বিক্রি করে হজে যেতে চান নব্বই বছরের ইমান আলী
পান বিক্রি করছেন ইমান আলী। ছবি: প্রতিনিধি

‘পান বিক্রি করে সেই টাকায় এবছর আমি হজ্জ্ব করতে যাবো, কাবা শরীফ দেখবো, এটুকুই আমার এখন শেষ ইচ্ছা। তাই গত ৩ মাস যাবৎ কুয়াকাটা সৈকতে পান বিক্রি করছি’ -একটি বালতির মধ্যে সতেরো আইটেমের মশলা নিয়ে ফেরি করে মিষ্টি পান বিক্রি করছেন আর সবার কাছে তার এই শেষ ইচ্ছার কথা বলছেন পটুয়াখালীর মাদারবুনিয়া ইউনিয়নের বিড়াজোড়া গ্রামের বাসিন্দা ইমান আলী এখমান্দার (৯০)।

এক হাতে পানের বালতি, অন্যহাতে পাসপোর্টের কপি। কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট এলাকায় সবার কাছে পাসপোর্ট দেখিয়ে পান বিক্রি করছেন বৃদ্ধ এখমান্দার। বৃদ্ধের দুই ছেলে পেশায় কাঠমিস্ত্রী। খেয়ে-পরে সংসার টিকিয়ে রাখাই দায় তাদের। যে কারণে বাবার এই আশা পূরণ করতে পারছেন না তারা।

বৃদ্ধ এখমান্দার বলেন, আমি পেশায় একজন কাঠমিস্ত্রী ছিলাম। খেয়ে-পড়ে নিজের থাকার জমিটুকু ছাড়া কিছুই করতে পারিনি। যেটুকু জমি আছে তাতে দুই ছেলে ঘর করে থাকে। আমি পবিত্র কাবাঘরে গিয়ে হযরত মোহাম্মদ (স.)’র কবর জিয়ারত করে সালাম দিবো, মনে খুবই আশা। কিন্তু অর্থের অভাবে পারছি না।

তিনি আরও বলেন, গত কয়েকমাস ধরে কুয়াকাটার একটি মসজিদে থাকি। আর সবার কাছে আমি হজে যাবো, তা বলে সাহায্য চাই। কিন্তু তাতে নাকি হজ হবে না। তাই সবাই পরামর্শ দিলো ব্যবসা করতে। সেই পরামর্শ নিয়ে মাত্র দুই হাজার টাকায় মালামাল কিনে এই পান বিক্রি শুরু করি। কুয়াকাটার স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা আমাকে পান খেয়ে বেশি টাকা দেয়। আবার অনেকে না খেয়েও টাকা দেয়।

ইমান আলী হজের স্বপ্ন চোখে-মুখে নিয়ে বলেন, আমি গত তিনমাসে ৪০ হাজার টাকা জোগাড় করেছি। তা দিয়ে কিছু টাকা ঋণী ছিলাম তা পরিশোধ করেছি। বাকি টাকা জমাচ্ছি। ইচ্ছা আছে এই বয়সে তো হজ করতে পারবো না, তাই ঈদের পরেই ওমরাহ করতে যাবো। এতগুলো টাকা কই পাবেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, আমি কাবাঘর দেখতে চাই। আর যদি কোনো বিত্তবান আমাকে কাবাঘর দেখিয়ে সহযোগিতা করতো তাহলে আমার জীবনটা ধন্য হতো।

কুয়াকাটা সৈকতের ব্যবসায়ী জনি আলমগীর বলেন, এই বৃদ্ধকে গত কয়েকমাস যাবৎ দেখছি। খুব কষ্ট করে হেঁটে হেঁটে প্রত্যেকের কাছে গিয়ে পান কেনার জন্য অনুরোধ করছে। পরে জানতে পারি তিনি হজ করার জন্যই মূলত এই কষ্ট করছেন। এটা জানার পরে স্থানীয়রা তাঁকে খাবার, সাধ্যমত অর্থ দিয়ে সহযোগিতা করছেন।

কুয়াকাটা ট্যুর গাইড এসোসিয়েশনের সভাপতি কেএম বাচ্চু বলেন, আমরা তাঁকে দেখছি বেশ কয়েকদিন, হজ করবে বলে পান বিক্রি করতে নেমেছে। পরে জানতে পারলাম তার ছেলেদের ইনকামে তার ভরনপোষণ চলে, কিন্তু হজ করার সামর্থ্য না থাকায় তিনি এই বয়সে পান বিক্রি করছেন। তিনি সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেন না, বাঁকা হয়ে হাঁটছেন। যদি কারো পক্ষে সম্ভব হয় তাঁকে হজের ব্যবস্থা করে দেয়ার তবে শেষ বয়সের আশাটা তাঁর পূরণ হতো।

ট্যুরিস্ট পুলিশ কুয়াকাটা জোনের পুলিশ পরিদর্শক হাসনাইন পারভেজ বলেন, আমরা এই বৃদ্ধ লোকটাকে প্রথমে সাহায্য উঠাতে দেখি। পরে পান বিক্রি করতে দেখি এবং জানতে পারি তিনি হজে যাওয়ার আশায় এত কষ্ট করছেন। তাঁর ভালো উদ্দেশ্য, তাই তাঁকে সবার সহযোগিতা করা দরকার।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত