ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

চট্টগ্রাম বন্দরে শুরু হয়েছে বড় জাহাজের বার্থিং

  চট্টগ্রাম প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২০ মার্চ ২০২৩, ১১:৫২

চট্টগ্রাম বন্দরে শুরু হয়েছে বড় জাহাজের বার্থিং
ছবি - সংগৃহীত

প্রতিষ্ঠার ১৩৫ বছর পর চট্টগ্রাম বন্দরে বড় জাহাজ ভিড়ানোর কার্যক্রম শুরু হলো। দুটি ট্রায়াল বার্থিং দেয়ার পর সবকিছু ঠিক থাকায় ২শ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের বড় জাহাজ ভিড়ানোর সার্কুলার জারি করা হয়। ইতিমধ্যে বন্দরে যে বড় জাহাজ বার্থিং দেয়া যায় এই তথ্য পৃথিবীর সব বন্দর এবং জাহাজ মালিকসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে পৌঁছে গেছে। এই উদ্যোগের মাধ্যমে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্যে পরিবহন খরচ কমে যাওয়ার পাশাপাশি গতি আসবে।

জানা যায়, ২০০ মিটার দৈর্ঘ্যের জাহাজ ভেড়ানোর ফলে আকার ভেদে কন্টেইনার জাহাজের ক্ষেত্রে এক হাজার থেকে এক হাজার একশ টিইইউএস কন্টেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। একইভাবে, বাল্ক কার্গো জাহাজে ১৫ থেকে ২০ হাজার মেট্রিক টন খোলা পণ্য বেশি পরিবহন করা সম্ভব হবে। ফলে কন্টেইনার পরিবহন খরচ এবং টার্নঅ্যারান্ডের সময়, উভয়ই কমে আসবে।

বন্দর সংশ্লিষ্টরা জানান, সর্বোচ্চ সাড়ে নয় মিটার গভীরতা ও ১৯০ মিটার দীর্ঘ জাহাজে মাত্র ১৮০০ থেকে ২৪০০ কনটেইনার বহনের সুযোগ থাকে। বড়ো ড্রাফটের জাহাজগুলোকে বর্হিনোঙ্গরে এসে অপেক্ষায় থাকতে হয়। লাইটারেজ জাহাজ গিয়ে পণ্য খালাস করে জেটিতে আনার পর আবার সেই পণ্য খালাস করতে হয়। রপ্তানি পণ্যও একই পদ্ধতিতে জাহাজীকরণ করতে হয়। প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রায়ই বহির্নোঙ্গরে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে যায়।

১০ মিটার ড্রাফট ও ২০০ মিটার লম্বা জাহাজ ভেড়ানোর পর প্রতিটিতে আরও ১০০০ থেকে ১১০০ কনটেইনার বেশি পরিবহন করা যাবে। এতে বন্দরে কনটেইনার হ্যান্ডলিং বাড়বে, কমবে কনটেইনারে করে আনা-নেয়া করা পণ্যের পরিবহন ব্যয়। এছাড়া ছোটখাট প্রাকৃতিক দুর্যোগে পণ্য খালাস বন্ধ হয়ে জাহাজগুলোকে আর বর্হিনোঙ্গরে অলস বসে থাকতে হবে না।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক পরামর্শক প্রতিষ্ঠান এইচআর ওয়েলিংফোর্ডের সমীক্ষা রিপোর্টের পর বন্দরে বড় জাহাজ বার্থিং দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। তাদের রিপোর্ট পাওয়ার পর চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ বড় জাহাজ ভিড়ানোর প্রক্রিয়া শুরু হয়। ইতোমধ্যে দুই দফায় ট্রায়াল রান পরিচালিত হয়। প্রথম জাহাজ এমভি কমন এটলাস বার্থিং দেয়া হয় গত ১৫ জানুয়ারি বন্দরের সিসিটি জেটিতে। দ্বিতীয় জাহাজ এমভি মেঘনা ভিক্টোরি গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বার্থিং দেয়া হয় পিসিটি। ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ দুটির ট্রায়াল রান সম্পন্ন হওয়ার পর বন্দর কর্তৃপক্ষ চূড়ান্তভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে বড় জাহাজ ভিড়ানোর সার্কুলার জারি করে। গতকাল রোববার বন্দরের মেরিন ডিপার্টমেন্ট থেকে জারি করা ০৯/২০২৩ সার্কুলারমূলে এখন থেকে ২০০ মিটার লম্বা ও ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর ব্যাপারটি নিশ্চিত করা হয়েছে। এর আগে বন্দরের বোর্ড সভায় বড় জাহাজ ভিড়ানোর ব্যাপারটি অনুমোদিত হয়।

চট্টগ্রাম বন্দরের তথ্য অনুযায়ী ২০২১ সালের তুলনায় ২০২২ সালে ১৩৫টি জাহাজ বেশি এসেছে। ২০২১ সালে বন্দরে জাহাজ আসে ৪২০৯টি। ২০২২ সালে জাহাজ আসে ৪৩৪৪টি। একইভাবে ২০২২ সালে কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে ২.২৮ শতাংশ এবং জাহাজ হ্যান্ডলিংয়ে ৩.২১ শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন করে। তবে কন্টেইনার হ্যান্ডলিংয়ের ক্ষেত্রে প্রবৃদ্ধি কমে যায় ২.৬০ শতাংশ। এছাড়া ২০২১ সালে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং হয় ৩২,১৪,৫৪৮ টিইইউ। ২০২২ সালে হ্যান্ডলিং হয় ৩১ লাখ ৩৩ হাজার ২০ টিইইউ।

চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মোহাম্মদ ওমর ফারুক বলেন, এই উদ্যোগ দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য তথা কন্টেনার হ্যান্ডলিং কার্যক্রমে প্রত্যাশিত গতি আনবে। পণ্য পরিবহন খরচ সাশ্রয় হবে। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতিদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও উপকৃত হবেন।

প্রসঙ্গত, ১৮৮৮ সালের ২৫ এপ্রিল যাত্রা করা চট্টগ্রাম বন্দরের বয়স ইতোমধ্যে ১৩৫ বছর গত হয়েছে। মাত্র দুটি মুরিং টাইপের জেটি নিয়ে যে কার্যক্রম শুরু হয়েছিল দিনে দিনে তা বিশাল কর্মযজ্ঞে পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশের আমদানি–রপ্তানি বাণিজ্য তথা শিপিং বাণিজ্যের সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ করে চট্টগ্রাম বন্দর। বছরে চার হাজারের বেশি জাহাজ আনাগোনা করে এই বন্দরে। গত বছর ৩২ লাখ টিইইউএসের বেশি কন্টেনার হ্যান্ডলিং হয়েছে।

বড় জাহাজ বার্থিং দেয়ার সুযোগ থাকলেও দুর্ঘটনা এড়াতে ড্রাফট ও ল্যান্থের ব্যাপারে সতর্ক থেকে জাহাজ বার্থিং অনুমোদন দিত বন্দর কর্তৃপক্ষ। সত্তরের দশকে চট্টগ্রাম বন্দরে ১৬০ মিটার লম্বা ও ৭.৫ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানো হতো। ১৯৮০ সালে এসে প্রথম ১৭০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া হয়। ১৯৯০ সালে ড্রাফট না বাড়িয়ে ল্যান্থ বাড়িয়ে ১৮০ মিটার লম্বা এবং সাড়ে ৮ মিটার ড্রাফটের জাহাজ বার্থিং দেয়া শুরু হয়। ১৯৯৫ সালে এসে শুরু হয় ১৮৬ মিটার লম্বা এবং ৯.২ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। ২০১৪ সালে বার্থিং দেয়া হয় ১৯০ মিটার লম্বা এবং ৯ মিটার ড্রাফটের জাহাজ। প্রায় দশ বছর পর নতুন করে ২০০ মিটার লম্বা এবং ১০ মিটার ড্রাফটের জাহাজ ভিড়ানোর অনুমোদন দেয়া হলো।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত