ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ১ ঘন্টা আগে
শিরোনাম

জনসচেতনতা বাড়াতে প্রস্তুত বিশেষ অ্যাপ

মাদক নিয়ন্ত্রণে এবার শুরু হলো সামাজিক আন্দোলন

  সুজন কৈরী

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৩, ১৮:৫০  
আপডেট :
 ২২ মার্চ ২০২৩, ১৮:৫৪

মাদক নিয়ন্ত্রণে এবার শুরু হলো সামাজিক আন্দোলন
ফাইল ছবি

মাদকের সরবরাহ বন্ধ, চাহিদা রোধ ও ক্ষতি কমানো বা নিরাময়ে শুরু হয়েছে সামাজিক আন্দোলন। সেজন্যে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর (ডিএনসি) হাতে নিয়েছে কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যান (সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা)। ইউনিয়ন থেকে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত চালানো হচ্ছে এই সমন্বিত কার্যক্রম। এই সামাজিক আন্দোলন মাদক নিয়ন্ত্রণে বিশেষ ভুমিকা রাখবে বলে আশা করছেন ডিএনসির কর্মকর্তারা।

সমন্বিত কর্মপরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০২২ সালের ২৮ মার্চ থেকে দেশব্যাপী কর্মশালা করে প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে। সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সহযোগিতায় মাদকের সরবরাহ ও কারবার প্রতিরোধে ইতোমধ্যেই তৈরি করা হয়েছে ড্যাম-অ্যামস (ডিএনসি অ্যাওয়ারনেস অ্যান্ড মোটিভিশনাল অ্যাক্টিভিটি মনিটরিং সিস্টেম) নামের বিশেষ অ্যাপ। সেইসঙ্গে তালিকা করা হয়েছে এক লাখ মাদকাসক্তের। যাদের চিকিৎসার মাধ্যমে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনা হবে।

ডিএনসি সূত্র জানায়, কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যান শুরুর চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে গত ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাবনা জমা দেয়া হয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই আনুষ্ঠানিকভাবে সারাদেশে একযোগে কার্যক্রম শুরু করা হবে। এজন্য যাবতীয় প্রস্তুতি সম্পন্ন করা হয়েছে। এ পরিকল্পনা সফল করতে উপজেলা থেকে শুরু করে জাতীয় পর্যায় পর্যন্ত ডিএনসি ছাড়াও স্বাস্থ্য কর্মী ও পরিবার পরিকল্পনা কার্যক্রমে নিয়োজিত কর্মীসহ সরাকারি বেসরকারি বিভিন্ন সামাজিক উন্নয় সংগঠনকে যুক্ত করার কাজ চলছে।

সচতেনতায় ড্যাম-অ্যামস অ্যাপ

সমন্বিত কর্মপরিকল্পনা কর্মসূচি বা কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যানের অংশ হিসেবে তৈরি করা বিশেষ এই অ্যাপের মাধ্যমে সব শ্রেণি-পেশার মানুষ জানতে পারবেন, মাদক নিয়ন্ত্রণে কোন জেলা, উপজেলা ও এলাকায় কী ধরনের সচেতনতামূলক কর্মশালা করা হয়েছে। আরও জানাতে পারবেন, কোন এলাকায় কী ধরনের কর্মশালা করা উচিত। অধিদপ্তরও অ্যাপের মাধ্যমে কর্মশালা বাস্তবায়নের তথ্য নিতে পারবে।

এছাড়া সারাদেশের মাদক কারবারিদের নাম-ঠিকানা, কোথায় মাদক মজুত আছে এবং কোথাও কারবার চলছে কিনা-সে বিষয়েও তথ্য দেয়া যাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। এক্ষেত্রে তথ্য সরবরাহকারীর পরিচয় গোপন রাখা হবে। তথ্য পাওয়ার পর ডিএনসির আভিযানিক দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।

অধিদপ্তরের কর্মকতারা জানান, মাদকবিরোধী নতুন এ অভিযানে মাদকের সরবরাহ, চাহিদা ও নিরাময় নিয়ে কাজ করা হবে। যারা এরই মধ্যে মাদকাসক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের চিহ্নিত করে সুপথে ফিরিয়ে আনতে নেয়া হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। সারাদেশে ৭০ লাখ মাদকাসক্ত থাকলেও কার্যক্রম শুরুর জন্য এক লাখ মাদকাসক্তের তালিকা করা হয়েছে। পর্যায়ক্রমে চিকিৎসা ও পুনর্বাসনের আওতায় আনা হবে অন্যদেরও। এজন্য স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় কমিউনিটি, প্রাইমারি, সেকেন্ডারি ও টারশিয়ারি কার্যক্রম পরিচালনার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

ডিএনসি বলছে, কমিউনিটি পর্যায়ে ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকর্মীরাই মাদকাসক্তদের চিকিৎসা দেবেন, কমিউনিটি পর্যায়ে সম্ভব না হলে প্রাইমারি পর্যায়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হবে। তাতেও না হলে সেকেন্ডারি অর্থ্যাৎ জেলা পর্যায়ের হাসপাতালে পাঠানো হবে। যদি জেলাতেও না হয়, তাহলে ঢাকায় কেন্দ্রীয় মাদক নিরাময় কেন্দ্রে অথবা পাবনার মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসা দেয়া হবে। এ কার্যক্রমের সঙ্গে যেসব চিকিৎসক ও নার্সরা সম্পৃক্ত থাকবেন, তাদেরও বিশেষ প্রশিক্ষণ দেবে ডিএনসি। প্রত্যেক উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে মাদক নিরাময়ের জন্য আলাদা ওয়ার্ড খোলার পরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।

অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা জানান, কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যান শুরু হওয়ার আগে জনসাধারণকে এ বিষয়ে জানানো সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই বিবেচনায় ২০২২ সালের ২৮ মার্চ থেকে সারাদেশের ৮টি বিভাগ, ৬৪ জেলা ও ৪২৬টি উপজেলায় সচেতনতামূলক কর্মশালা করা হয়েছে। এতে ব্যাপক সাড়াও মিলেছে। আমাদের পরিকল্পনাগুলো সবার সঙ্গে শেয়ার করার পর সংশ্লিষ্টরা বেশ কিছু বিষয় যুক্ত করার অনুরোধ করেছেন। জনসাধারণের কাছ থেকে পাওয়া সেসব সুপারিশের যেগুলো আমাদের কাছে যৌক্তিক মনে হয়েছে, সে বিষয়গুলো চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে সুপারিশসহ পাঠানো হয়েছে।

ড্যাম-অ্যামস অ্যাপটি যাতে সবাই যথার্থভাবে ব্যবহার করতে পারেন, সেজন্য ডিএনসির জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এই বিশেষ অ্যাপের তথ্য মনিটরিংয়ের (পর্যবেক্ষণ) জন্য অধিদপ্তরে মনিটরিং সেল গঠনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যানের অনুমোদন পাওয়ার পর গুগল প্লে-স্টোর ও অ্যাপল স্টোর থেকে অ্যাপটি ইন্সটল করা যাবে। এ বিষয়ে ডিএনসির উপপরিচালক (নিরোধ শিক্ষা) মো. মানজুরুল ইসলাম বলেন, শুধু ধরপাকড় করে মাদক নির্মূল সম্ভব নয়। এজন্যই কম্প্রিহেনসিভ অ্যাকশন প্ল্যান হাতে নেয়া হয়েছে। আমরা আশা করছি, এই কার্যক্রম শুরু হলে মাদক নিয়ন্ত্রণে আনা যাবে। ইতোমধ্যে অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। কিছু পরিকল্পনা আলোচনা পর্যায়ে রয়েছে। তবে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিলেই আমরা আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/সুজন/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত