বাবাকে ছোয়া হলো না ছোট্ট আমেনার
মোহাম্মদ শরীফ, কুমিল্লা প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ মার্চ ২০২৩, ২০:০৩

জন্মের পর বাবাকে দেখেনি ৬ বছরের শিশু আমেনা। সৌদি প্রবাসী বাবা একটি বারের জন্য কোলে তুলে করেননি আদর। কথা ছিল আসছে শনিবার দেশে ফিরবেন বাবা গিয়াস উদ্দিন। সৌদি থেকে হয়তো গিয়াস উদ্দিন ফিরবেন, তবে প্রাণহীন নিথর দেহ নিয়ে। দীর্ঘ ছয় বছর শেষে সন্তানদের স্নেহ করা ও পরিবারের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া হবে না তার।
গত সোমবার (২৭ মার্চ) ওমরা করতে যাওয়ার পথে সৌদি আরবে এক সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত ৮ বাংলাদেশীর একজন কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার গিয়াস উদ্দিন(৫৫)। তার মৃত্যু সংবাদ বাড়িতে পৌছার পর থেকে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্নায় ভারী হয়ে উঠছে রাজামেহার মীর বাড়ির আকাশ। পাগলপ্রায় স্ত্রী রাবেয়ার কান্না থামাতে পারছে না কেউ৷ নিহত গিয়াস উদ্দিনের এক ছেলে ও দুই মেয়ে৷ বড় ছেলে আবদুর রহমান (১৫) দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী। শিশু সাদিয়া (১২) ও আমেনা (৬) অবুঝ পলকে তাকিয়ে মায়ের আহাজারির দিকে। হয়তো এখনো বুঝে উঠতে পারছে না ফিরবে না তাদের বাবা। বাবার স্পর্শ ও আদর থেকে বঞ্চিত আমেনা হয়তো কখনো জানতেই পারবে না বাবার স্নেহ কী।
ওমরা করতে যাওয়ার পথে স্ত্রী রাবেয়ার সাথে মোবাইলে শেষ কথা হয় গিয়াস উদ্দিনের। বলেছিলেন, আগামী ২ এপ্রিল রমজানের মধ্যেই দেশের বাড়িতে ফিরে আসবেন। সন্তানদের বেড়াতে নিয়ে যাবেন।
গিয়াস উদ্দিনের স্ত্রী আকাশ ভেদী কান্নায় বলেন, তার আর জীবিত ফিরে আসা হলো না। ছেলে মেয়ে কোলে নেয়া হলো না গো...।
নিহতের বড় ছেলে দশম শ্রেণির ছাত্র আব্দুর রহমান কান্নায় ভেঙে পড়েছে। বলে, কেমনে বাবার লাশ দেশে আনবো, সরকার কি ব্যবস্থা করবে? সৌদিতে আমাদের কোনো আত্মীয়-স্বজন নেই।
নিহত গিয়াস উদ্দিন কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলার রাজামেহার গ্রামের মীর বাড়ির আব্দুল হামিদের ছেলে। ২০০১ সাল থেকে তিনি সৌদি আরবে প্রবাস জীবন শুরু করেন। ৬ বছর আগে একবার দেশে এসেছিলেন। তার ১ ছেলে, ২ মেয়ে। বড় ছেলে মো. আবদুর রহমান (১৫), মেয়ে সাদিয়া (১২) ও ছোট মেয়ে আমেনা (৬)।
গত সোমবার সৌদি আরবের আসির প্রদেশের আবহা সংযোগ সড়কে বাস উল্টে গিয়ে গাড়িতে আগুন ধরে যায়। এ দুর্ঘটনায় ২২ জন নিহতের মধ্যে ৮জন বাংলাদেশী। এর মধ্যে কুমিল্লা দেবীদ্বারের নিহত মো. গিয়াস উদ্দিনও রয়েছেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে