ভয়ংকর অপরাধীরা আত্মগোপন করে সাভারে
সাব্বির হোসেন
প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০২:২৯ আপডেট : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ০৩:৪৬

ঢাকার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থানায় পুলিশ কর্তৃক পরিচালিত ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহ নিয়ম মানছে না কেউ। এ ব্যাপারে আগ্রহ নেই সিংহভাগ বাড়ি মালিকদের। তথ্য না থাকার কারণে অপরাধ সংগঠিত হলে বিপাকে পড়ছেন পুলিশ ও বাড়ি মালিকেরা। এ সুযোগে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ভয়ংকর অপরাধীরা আত্মগোপন করে আছে এই এলাকায়। সচেতন মহল এমনি আশংকা করলেও ঢাকা জেলা পুলিশের নাগরিক তথ্য ফরম বা ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্ৰহ নিয়ম মুখ থুবড়ে পড়ে আছে।
|আরো খবর
পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৭/৮ বছর যাবৎ ঢাকা জেলার প্রতিটি থানায় অপরাধ নিয়ন্ত্রণে চালু করা হয় নাগরিক তথ্য সংগ্রহ কার্যক্রম। বাড়ি মালিকদের অনুরোধ করা হয় বাড়ি ভাড়া দেয়ার সময় ভাড়াটিয়াদের জাতীয় পরিচয় পত্রের অনুলিপিসহ নাগরিক তথ্য ফরম পুরণ করে থানায় জমা দিতে। প্রথম প্রথম কার্যক্রমটি গতিশীল হলেও বছরের পর বছর পার হলেও পুলিশের এই উদ্যোগ প্রায় শূণ্যের কোঠায় দাঁড়িয়েছে। বাড়ি মালিকদের অসতেনতাকে এজন্য দায়ী করছেন সচেতন মহল।
অপরদিকে, বাড়িওয়ালাদের কাছে ভাড়াটিয়াদের তথ্য না থাকার কারণে অনেকেই অপরাধ সংগঠিত করে গাঁ ঢাকা দিচ্ছেন। পুলিশি ঝামেলায় পড়ছেন বাড়ি মালিকরা।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, নারায়নগঞ্জের সোনারগাঁওয়ে স্ত্রীকে হত্যা করে দীর্ঘ ১৭ বছর সাভারের আশুলিয়ায় আত্মগোপনে ছিলেন আশরাফ হোসেন নামে এক ব্যক্তি। তিনি আশুলিয়ায় এসে সাংবাদিকতা শুরু করেন। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারী মাসে এই অপরাধীকে গ্রেপ্তার করে র্যাব সদস্যরা।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আন্তর্জাতিক ট্রাইবুনাল আদালতে মৃত্যুদন্ডাদেশ প্রাপ্ত পলাতক আসামি খলিলুর রহমানকে সাভারের চাপাইন থেকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। তিনি ২০২২ সালের ২৮ সেপ্টেম্বর র্যাবের কাছে গ্রেপ্তার হন। ২০১৫ সাল থেকে খলিলুর রহমান পলাতক ছিলেন। তার বাড়ি নেত্রকোনা জেলার দুর্গাপুরে।
১৭ বছর পলাতক থাকার পর রংপুরের মিঠপুকুর এলাকার ধর্ষণ ও হত্যা মামলার আসামী নূর মোহাম্মদকে সাভারের গেন্ডা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ২০২৩ সালের ৯ ফেব্রুয়ারী র্যাব সদস্যরা তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
পৃথক ঘটনায় রংপুরের মাঝারের খাদেম রহমত আলীকে এলোপাথারীভাবে কুপিয়ে হত্যা করে জেএমবি সদস্য আব্দুর রহমান ওরফে চান্দু মিয়া। এরপর সে রিক্সাচালকের ছদ্মবেশে সাভারের গেন্ডা এলাকায় প্রায় ৫ বছর বসবাস করে আসছিল। ২০২১ সালের ২৬ মে পুলিশের এন্টি টেরোরিজম ইউনিট তাঁকে গ্রেপ্তার করে।
ভয়ংকর বাস ডাকাত ও হত্যা চক্রের সদস্য জাভেদ ও রহিমকে আত্মগোপনে থাকাবস্থায় গত ২০১১ সালের আগস্ট মাসে সাভার থেকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। তাদের দেয়া তথ্যমতে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই থেকে আরও ১১ ডাকাতকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এরা গার্মেন্টস কর্মী, ব্যবসায়ী ও নানা ছদ্মবেশে বাসা ভাড়া নিয়ে এসব এলাকায় বসবাস করে আসছিল। মূলত: এরা ছিল ভয়ংকর বাস ডাকাত দলের সদস্য। ডাকাতি করা কালে এরা যাত্রীদের হত্যা করে লাশ ফেলে পালিয়ে যেত।
অপরাধ বিশেষজ্ঞদের মতে, এমনি অনেক অপরাধীরা আত্মগোপনে থাকতে পারে সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাইয়ের বিভিন্ন এলাকায়। বাসা ভাড়া নিয়ে বিভিন্ন পোশাক কারখানার চাকরী করছেন অনেক অপরাধী। অনেকে নিজেকে সাংবাদিক, ব্যবসায়ী, মানবাধিকারকর্মী পরিচয় দিয়ে দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন সদলবলে। পুলিশের কাছে ভাড়াটিয়াদের তথ্য নিশ্চিত করলে এসব অপরাধীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার করা সম্ভব ছিল।
সাভারের সোবহানবাগের সবুর খান জানান, তার ভবনের একটি ফ্লাটের ভাড়াটিয়া কাজী আঃ রহিমের বিরুদ্ধে বাল্য বিয়ে সংক্রান্ত একটি মামলা হয়। এ মামলার পরে আত্মগোপন করেন আঃ রহিম। সাভার মডেল থানা পুলিশ অভিযুক্তের নাম ঠিকানা যাচাই করতে এলে তিনি ভাড়াটিয়া সম্পর্কে কোন তথ্য দিতে পারেননি।
সাভারের ছায়াবীথি এলাকার বাড়ি মালিক মাধব চন্দ্ৰ মন্ডল জানান, মাদক ব্যবসায়ী ভাড়াটিয়া মানিকগঞ্জের ইয়াকুব আলীর বাসায় ঝামেলা হলে তিনি জানতে পারেন অপরাধের কথা। পরে ভাড়াটিয়াকে বাসা ছেড়ে চলে যেতে বললে ইয়াকুব চলে যান। অপর ভাড়াটিয়া গাজীপুরের কালিয়াকৈরে নাসির উদ্দিনের একটি প্রতারণা মামলায় বাসায় পুলিশ এলে ঝামেলায় পড়েন তিনি।
সাভার মডেল থানার ওসি দীপক চন্দ্র সাহা বলেন, মাদক ব্যবসায়ী, চোর, ডাকাত, জঙ্গীসহ বিভিন্ন অপরাধীরা এই এলাকায় বাসা ভাড়া নিয়ে অল্প কিছু মালামাল নিয়ে বসবাস শুরু করেন। তারা অপরাধ করে এক সময় পালিয়ে যায়। বাড়িওয়ালাদের বা পুলিশের কাছে তথ্য থাকলে এদের খুঁজে বের করা সহজ হয়। জনগণের সেবা করতে পুলিশ সর্বদা সচেষ্ট। ভাড়াটিয়া তথ্য সংগ্রহের ব্যাপারে তিনি বাড়িওয়ালাদের সহযোগিতা কামনা করেন।
বাংলাদেশ জার্নাল/এমএ