ঢাকা, শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ২১ মিনিট আগে
শিরোনাম

৯৯৯-এ ফোন: অবরুদ্ধ নারীকে উদ্ধার করল পুলিশ

  নড়াইল প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ১৩:২৩

৯৯৯-এ ফোন: অবরুদ্ধ নারীকে উদ্ধার করল পুলিশ
জাতীয় জরুরি সেবা । ছবি: সংগৃহীত

বিউটি বেগম (৩৫) নামে এক বিধবা নারীকে নির্যাতন করে ঘরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে তার দেবরের বিরুদ্ধে। শুক্রবার (৩১ মার্চ) লোহাগড়া উপজেলার গিলাতলা গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। পরে জরুরি সেবা ৯৯৯-এ কল পেয়ে লোহাগড়া থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করে।

পুলিশ ও হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার কাশিপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মৃত আমজাদ হোসেন খানের পুত্রবধূ বিউটি বেগম। প্রায় ৮ বছর আগে সড়ক দুর্ঘটনায় তার স্বামী তোফাজ্জেল হকের মৃত্যু হয়। স্বামীর মৃত্যুর পরেও ছোট দুই ছেলে নিয়ে শ্বশুরবাড়িতে বসবাস করে আসছেন বিউটি বেগম। স্বামীর রেখে যাওয়া মাঠের জমি চাষাবাদের পাশাপাশি সেলাইয়ের কাজ করে সন্তানদের পড়াশোনার খরচ জোগান ও জীবিকা নির্বাহ করেন।

শুক্রবার (৩১ মার্চ) সকালে দীর্ঘদিন ধরে ভোগদখল করা জমিতে চাষাবাদের জন্য যান বিউটি। জমি চাষের সময়ে তার দেবর মিন্টু খান, মনির হোসেন খান সেন্টু, সাজ্জাদ হোসেন খান রিন্টু, পিনা খান, দেবরের স্ত্রী রাহেলা বেগমসহ ৬-৭ জন আগ্নেয়াস্ত্র, লাঠিসোঁটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে চাষাবাদ বন্ধ করতে বলেন। বিউটি ও তার ছেলে সাইফ খান চাষাবাদ বন্ধ না করলে তাদেরকে পিটিয়ে গুরুতর জখম করেন তারা।

এ অবস্থায় ভুক্তভোগী সকাল ১০টার দিকে ৯৯৯ -এ ফোন করলে লোহাগড়া থানা পুলিশ অসুস্থ বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে বাড়ি থেকে উদ্ধার করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।

হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ভুক্তভোগী বিউটি বেগম বলেন, আমার স্বামীর মৃত্যুর পর আমার দেবররা বেশ কয়েকবার আমার ওপর অমানবিক নির্যাতন করে হাসপাতালে পাঠিয়েছে। তারা চায় বন্দুকের ভয় দেখিয়ে সব জমি লিখে নিতে আর আমার এতিম সন্তানদের ভিটা ছাড়া করতে।

শুক্রবার (৩১মার্চ) সকালে আমার ভাগের জমি চাষ করতে গেলে তারা বাধা দেয়। আমরা জমি থেকে না যেতে চাওয়ায় সবার সামনে আমার বুকে বন্দুক ঠেকিয়ে বলে জমি সব লিখে দিয়ে চলে যা, তা না করলে তোদের সবাইকে মরতে হবে। এরপর আমাদেরকে লাঠি, হকিস্টিক, বন্দুকের বাট দিয়ে বেধড়ক পেটাতে থাকে। আমাদেরকে মেরে বাড়ির মধ্যে আটকে রাখে। হাসপাতালেও যেতে দেয়নি। পরে বাধ্য হয়ে ৯৯৯ এ কল দেই। পুলিশ এসে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসে।

অভিযুক্তদের মধ্যে মিন্টু খান বলেন, আমি ও মাইর খেয়েছি। আমি অসুস্থ হার্টের রোগী এখন বেডে আছি, কথা বলতে কষ্ট হচ্ছে। আপনি আগামীকাল আসুন তখন সামনাসামনি কথা হবে।

অস্ত্রের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এটা আমার ভাইয়ের লাইসেন্স করা অস্ত্র। ভাইয়ের মাথা গরম উল্টাপাল্টা কিছু করে না বসে সেজন্য অস্ত্রটি আমি নিয়ে রেখেছিলাম।

লোহাগড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক খালিদ সাইফুল্লাহ বেলাল বলেন, বিউটি বেগমের শরীরের বিভিন্নস্থানে জখম রয়েছে। চাপা আঘাতের কারণে রক্ত জমাট হয়ে আছে। আপাতত দৃষ্টিতে আঘাত গুরুতর মনে না হলেও এসব আঘাতের কারণে রোগীকে দীর্ঘ মেয়াদে ভুগতে হবে।

লোহাগড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) নাসির উদ্দীন বলেন, জরুরি সেবা ৯৯৯ -এর কলের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি এক নারীকে তার দেবররা ঘরে অবরুদ্ধ করে প্রাণে মারার চেষ্টা করছে। তাৎক্ষণিক ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠাই। বিউটি বেগম ও তার ছেলেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়।

ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। হামলায় ব্যবহারকৃত অস্ত্র লাইসেন্সকৃত হলেও বৈধ অস্ত্র প্রাপ্তির শর্ত ভঙ্গ করায় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরআই

  • সর্বশেষ
  • পঠিত