ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫ মিনিট আগে
শিরোনাম

হত্যার পর গৃহবধূর লাশ বস্তায় ভরে ফেলা হয় যমুনায়

  গাজীপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০১ এপ্রিল ২০২৩, ২০:২৪

হত্যার পর গৃহবধূর লাশ বস্তায় ভরে ফেলা হয় যমুনায়
গ্রেপ্তারকৃতরা। ছবি: প্রতিনিধি

কালীগঞ্জে এক গৃহবধূকে শ্বাসরোধে হত্যা করে তার লাশ বালুর বস্তায় ভরে যমুনার পানিতে ফেলে দেয়ার প্রায় তিন মাস পরে এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বৃহস্পতিবার দুই ভাইকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুরের পিবিআই।

গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন- রূপার সাবেক স্বামী মো. মোজাম্মেল হক (৩২) ও তার বড় ভাই মো. জহির আলী (৩৯)। তারা জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার হিমারদীঘি গ্রামের সোহরাব প্রামানিকের ছেলে। ভিক্টিম জনি আক্তার রূপা (২০) জামালপুরের মাদারগঞ্জ থানার ফাজিলপুর গ্রামের রবিউল ইসলামের মেয়ে। রুপা তার দ্বিতীয় স্বামী গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামের উজ্জ্বল মিয়ার সঙ্গেই বসবাস করতেন।

গাজীপুর পিবিআই’র উপ-পুলিশ পরিদর্শক সনজিৎ বিশ্বাস জানান, ২০১৫ সালে মোজাম্মেল হক ও জনি আক্তার রূপার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। এরপর তাদের দাম্পত্য জীবনে দুটি ছেলে সন্তান জন্মগ্রহণ করে। পরে পারিবারিক ও আর্থিক অভাব অনটনের কারণে মোজাম্মেল মালেশিয়া চলে যায়। দীর্ঘ চার বছর মালেশিয়া থাকাকালে মোজাম্মেল ভিকটিমের মায়ের ব্যাংক একাউন্টে বিভিন্ন সময়ে প্রায় নয় লক্ষ টাকা পাঠিয়েছিলেন। ২০২২সালে দেশে ফিরে এসে তার পাঠানো টাকার বিষয়ে ভিকটিম এবং তার মায়ের কাছে জানতে চাইলে তারা টাকার কোন হিসাব দিতে পারেনি। পরবর্তীতে পারিবারিক মীমাংসায় মোজাম্মেলকে ভিকটিমের পরিবার দুই লক্ষ ২০ হাজার টাকা ফেরত দেয়। এসব নিয়ে তাদের দাম্পত্য জীবনে অশান্তি দেখা দিলে দুই সন্তানকে স্বামী গৃহে রেখে ভিকটিম রুপা গোপনে (মোজাম্মেল হকের বোনের সতিনের ছেলে) জামালপুরের ইসলামপুর থানার চিনাডুলি গ্রামের মনু মিয়ার ছেলে মো. উজ্জল মিয়ার (২৬) সঙ্গে পালিয়ে গিয়ে বিয়ে করেন এবং গাজীপুরের কালীগঞ্জ উপজেলার বালিগাঁও গ্রামে বাসবাস করতে থাকেন।

গ্রেপ্তাররা স্বীকারোক্তিকে জানান, ওই ঘটনায় তাদের সামাজিক, পারিবারিক ও আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে বিধায় প্রতিশোধ নেয়ার পরিকল্পনা করেন। পরে পরিকল্পনা অনুযায়ী ৬ জানুয়ারি মোবাইলের মাধ্যমে ভিকটিম জনি আক্তার রুপাকে তাদের দুটি সন্তানদের বিষয়ে আলাপ আলোচনা করার জন্য নিজ গ্রামে আসার অনুরোধ করেন। সে মোতাবেক ভিকটিম জনি আক্তার রুপা গাজীপুর থেকে মোজাম্মেলের তাদের গ্রামের উদ্দেশে রওনা করেন। বিকেল চারটার দিকে ভিকটিম জামালপুরের মাদারগঞ্জ পৌঁছার পর মোজাম্মেল তাকে বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রহণ করে এবং তাকে নিয়ে বগুড়ার সারিয়াকান্দি যমুনা নদীর চরে তার এক বন্ধুর বাসায় বসে আলাপ-আলোচনা করার জন্য রওনা করেন। মোজাম্মেল পূর্বেই তার বড় ভাই জহির আলীকে একটি নৌকা নিয়ে মাদারগঞ্জ থানার জামথৈল ঘাটে আসতে বলেন। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী দুইভাই ভিকটিমসহ জামথৈল ঘাট থেকে নৌকা যোগে যমুনার চরে যাওয়ার পর তারা প্রথমে ভিকটিমকে তার সঙ্গের ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। মোজাম্মেল তার সঙ্গে আনা দা দিয়ে গলাকেটে মৃত্যু নিশ্চিত করে বালু ভর্তি বস্তায় ভরে যমুনা নদীর গভীর পানিতে ফেলে দেয়।

এদিকে স্ত্রীর কোন খোঁজ না পেয়ে রূপার দ্বিতীয় স্বামী উজ্জ্বল মিয়া বাদি হয়ে ২৪ জানুয়ারি গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। পরবর্তীতে ভিকটিমের পরিবার থেকে উল্লেখিত জিডির বিষয়টি পিবিআই গাজীপুর জেলাকে জানালে গাজীপুরের পিবিআই জিডির অনুসন্ধানকালে প্রাথমিকভাবে ভিকটিম জনি আক্তার রূপা হত্যা হয়েছে মর্মে সাক্ষ্য প্রমাণ পায়। পরবর্তীতে এই সংক্রান্তে স্বামী মো. উজ্জ্বল মিয়া বাদী হয়ে এজাহার দায়ের করেন। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে মামলাটির নিবিড় তদন্ত তথা অনুসন্ধানকালে ২ মাস ২৪ দিন পর ৩০ মার্চ গাজীপুর মহানগরের বাসন থানার চান্দনা-চৌরাস্তা এলাকা থেকে দুইভাইকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই।

গত ৩১ মার্চ তারা গাজীপুর চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। পরে আদালতের বিচারক শাকিল আহমেদর নির্দেশে তাদের গাজীপুর জেলা কারাগারে পাঠানো হয়েছে।

বাংলাদেশ জার্নাল/এমপি

  • সর্বশেষ
  • পঠিত