ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

ইতালি নেয়ার কথা বলে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও নিবিড়

  ফরিদপুর প্রতিনিধি

প্রকাশ : ১৯ মে ২০২৩, ০৪:০৮  
আপডেট :
 ১৯ মে ২০২৩, ০৯:৪৯

ইতালি নেয়ার কথা বলে ৩০ লাখ টাকা নিয়ে উধাও নিবিড়
অভিযোগকারী আলমগীর সরদার, ফারুক সরদার ও তাদের বাবা। ছবি: প্রতিনিধি

বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান আলমগীর সরদার ও ফারুক সরদার জীবিকার তাগিদে জীবনের অর্ধেকটা সময় কাটিয়েছেন মালোশিয়ায়। মাথার ঘাম পায়ে ফেলে সেখান থেকে যা উপার্জন করেন তা দিয়ে সংসারের খরচ মিটিয়ে ৩০ লাখ টাকা জমা করেন। এরই মধ্যে দেশে ফিরে এসে উন্নত জীবনের আশায় ইতালি যাওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করেন দুই ভাই। সে অনুযায়ী তারা নিরব কুমার সরকার ওরফে নিবিড় নামে এক দালালের মাধ্যমে বৈধপথে ইতালি যাওয়ার জন্য ৩০ লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হন। কিন্তু দালাল নিবিড় ওই টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়ে গেছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভুক্তভোগি দুই ভাইয়ের অভিযোগ তাদের টাকায় দালাল নিজেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন।

আলমগীর ও ফারুক ফরিদপুরের সালথা উপজেলার মাঝারদিয়া ইউনিয়নের মাঝারদিয়া গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিকুর রহমান সরদারের ছেলে। অভিযুক্ত দালাল নিবিড় একই ইউনিয়নের হরিনা গ্রামের মৃত ননী গোপাল সরকারের ছেলে। এদিকে দালালের খপ্পড়ে পড়ে নিঃস্ব হয়ে যাওয়া মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা টাকা ফেরত পেতে স্থানীয় মুরুব্বিদের কাছে ঘুরেও কোনো লাভ না হওয়ায় আদালতে মামলা করেছেন।

ভুক্তভোগী ফারুক সরদার অভিযোগ করে বাংলাদেশ জার্নালকে বলেন, জীবিকার তাগিদে ৫৩ বছর জীবনের ২৭ বছরই মালোশিয়ায় কাটিয়েছি। আমার ভাই আলমগীরও ৪১ বছরের মধ্যে ১৬ বছর মালোশিয়ায় কাটিয়েছে। সেখানে থেকে আমরা দুই ভাই মাথার ঘাম পায়ে ফেলে উপার্জন করে সংসার চালিয়েছি। পাশাপাশি সারাজীবন কষ্ট করে দুই ভাই মিলে কিছু টাকা জমিয়েছি। বছর খানেক আগে দেশে ফিরে আসি। বাড়ি আসার পর থেকে পাশের হরিনা গ্রামের নিরব কুমার সরকার ওরফে নিবিড় নামে এক দালাল আমাদের ইতালি যাওয়ার পরামর্শ দিতে থাকে। নিবিড় আমাদের পূর্বপরিচিত।

তিনি আরও বলেন, নিবিড়ের মাধ্যমে আমাদের এলাকার একাধিক যুবক বিভিন্ন দেশে গেছে। যে কারণে একপর্যায় তার প্রতারণার ফাঁদে পা দেই। পরে আমাদের দুই ভাইকে ইতালি নেয়ার জন্য নিবিড় সর্বমোট ৩০ লাখ টাকা চায়। ওই টাকায় তিনি আমাদের ইতালি নিয়ে যাবেন বলেন জানান। সেখানে নিয়ে ৯০ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেয়ার চুক্তি হয়। চুক্তি অনুযায়ী কয়েক দফায় আমরা দুই ভাই ৩০ লাখ টাকা দেই। এরমধ্যে ২০ লাখ টাকা নিবিড়ের ব্যাংক একাউন্টে পাঠানো হয়। ব্যাংকের মাধ্যমে যে টাকা পাঠিয়েছি তার জমা রশিদের কাগজ আমাদের কাছে আছে।

কিন্তু টাকা নেয়ার পর থেকে নিবিড় নানা তালহানা শুরু করে। ইতালি নেয়ার ব্যাপারে আজ কাল করতে করতে শুধু সময় পার করেন। একপর্যায় তিনি নিজেই বিদেশে চলে যায়। পরে বাধ্য হয়ে আমরা ভাই আলাদাভাবে বাদি হয়ে নিবিড় ও তার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে আদালতে দুটি মামলা করি। মামলা দুটি আদালত আমলে নিয়ে আসামীদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেন।

ফারুকের সাথে সুর মিলিয়ে একই অভিযোগ করেন তার ভাই আরেক ভুক্তভোগী আলমগীর।

ফারুকের বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আতিকুর রহমান সরদার বলেন, ইতালি যাওয়ার জন্য আমার দুই ছেলে নিবিড়কে ৩০ লাখ টাকা দিয়েছে। টাকা নেয়ার পর থেকে নিবিড়ের আর খোঁজ নেই। আমার ছেলে দুটি নিঃস্ব হয়ে গেছে। ছেলেরা মামলা করার পর থেকে নিবিড় বিদেশে বসে ভূয়া ফেসবুক আইডি খুলে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোপাগন্ডা ছড়াচ্ছে। বিভিন্ন মাধ্যমে হুমকি-ধামকি দিচ্ছে। এ ঘটনায় আমি সালথা থানায় অভিযোগ দিয়েছি।

তিনি আরও বলেন, এখন আমরা অসহায় হয়ে পড়েছি। আমি যেই দেশের জন্য যুদ্ধ করেছি। আজ সেই দেশে আমিসহ আমার পরিবার হুমকিতে আছি। এমন অবস্থায় দালাল নিবিড়ের কাছে থাকা টাকা ফেরত পেতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, দালাল নিবিড়ের মাধ্যমে যারা বিদেশে গেছেন তারা কেউ কাজ পায়নি। সবার সাথেই নিবিড় প্রতারণা করেছেন।

অভিযুক্ত দালাল নিরব কুমার সরকার ওরফে নিবিড় তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করে সৌদি থেকে জানিয়েছেন, আলমগীর আর ফারুকের কাছ থেকে ইতালি নেয়ার কথা বলে আমি কোনো টাকা-পয়সা নেয়নি। আমার সাথে তাদের ব্যবসায়িক সম্পর্ক। ব্যবসার জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে তাদের সাথে আমার অনেক টাকা লেনদেন হয়েছে। সেই লেনদেনের জমা রশিদ দিয়ে আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়েছে। আদালত আমাদের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে। আমরা আদালতে গিয়ে আইনের মাধ্যমে মোকাবেলা করবো।

তিনি আরও বলেন, মুলত আলমগীর ও ফারুকের আত্মীয় নয়নের সাথে আমার ঝামেলা চলছে। ওই ঝামেলার কারণে আমি নয়নের বিরুদ্ধে মামলা করি। মামলার করার পর ওরা ব্যাংকের লেনদেনের ওই জমা রশিদের কাগজ দিয়ে মামলা করেছে। এ ছাড়া আমি ওদের কাছে ১২ লাখ টাকা পাবো। ওই টাকা যাতে না দেয়া লাগে, এ জন্য ষড়যন্ত্র করছে। আর আমি ভুয়া আইডি খুলে ফেসবুকে কারো বিরুদ্ধে হুমকি-থামকি বা গালমন্দ করেনি। এটা বানানো গল্প।

এব্যাপারে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শেখ সাদিক বলেন, যেহেতু কোর্টে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানালেন। তাই এব্যাপারে কোর্ট থেকে আমাদের থানায় ইনভেস্টিগেশনের দায়িত্ব দেয়া হলে আমরা বিষয়টি গুরুত্বের সাথে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে কাজ করবো।

বাংলাদেশ জার্নাল/জিকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত