ঢাকা, শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১ আপডেট : ৫০ মিনিট আগে
শিরোনাম

অভিমানে ১৭ বছর জঙ্গলে বসবাস

  কুমিল্লা প্রতিনিধি

প্রকাশ : ২৮ মে ২০২৩, ২০:৪৭

অভিমানে ১৭ বছর জঙ্গলে বসবাস
ছবি: প্রতিনিধি

বাঁশের ঝোপঝাড়, বিস্তৃত জঙ্গল৷ সেখানে পলিথিন ও লাকড়ি দিয়ে তৈরি করেছেন খুপড়ি। সেখানে চিরকুমার মুজিবুর রহমানের (৬০) বসবাস ১৭ বছর ধরে। কুমিল্লার দেবিদ্বার উপজেলার মাশিকাড়া গ্রামের একটি জঙ্গলে এভাবেই বসতি গড়েছেন মুজিবুর রহমান। তার এই জঙ্গলে বসতির খবরে রোববার ছুটে যান দেবিদ্বার উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ ও নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা।

চিরকুমার মুজিবুর রহমানের কেন এই জঙ্গলে বসতি?

আবেগময় কণ্ঠে জানান সেই গল্প। অর্থ-বিত্তে সাঝানো সংসার সৎ ভাইদের রোষানলে পৈত্রিক সম্পত্তি থেকে বঞ্চিত করায় তাকে জঙ্গলেই ঠাঁই নিতে হয়েছে। জঙ্গলের খুপড়িতে থাকায় বিয়েটাও করতে পারেননি তিনি।

মুজিবুর রহমান জানান, তার বাবা মরহুম লাল মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর দ্বিতীয় বিয়ে করেন তার মাকে, এ সংসারে মায়ের এক মাত্র সন্তান ছিলেন তিনি। প্রথম সংসারে ২ ভাই ফরিদুল ইসলাম ও জহিরুল ইসলাম। দ্বিতীয় সংসারে মো. মুজিবুর রহমান। তার বাবা লাল মিয়া রেলওয়েতে চাকরি করতেন। সৎ ভাই ফরিদুল আলম পরিবার পরিকল্পনা বিভাগে চাকরি করতেন। মুজিবুর কাইচপুর মালেক জুট মিলে চাকরি করে সৎ ভাই জহিরুল ইসলামকে বিএ পাশ করান। সেই জহিরুল ইসলামই তার পৈত্রিক সম্পত্তির ১০৫ শতাংশ জমির মধ্যে ৮৫ শতাংশ জমি লিখে নেয়। তাকেও বাড়ি থেকে বের করে দেয়। স্থানীয়দের সহযোগিতায় ২০০৭ সাল থেকে জঙ্গলে খুপড়ি বানিয়ে ঠাই নেন। বিয়ে করে বৌ রাখার ঘর নেই, তাই বিয়েটাও করতে পারেননি। মিলের চাকরি ছেড়ে বাড়িতে এসে ইলেক্ট্রিক লাইনের কাজ শুরু করি, বাম চোখটিও নষ্ট হয় গেছে। বয়স হয়েছে এখন কাজে নিতে চায় না কেউ। অর্ধাহার, অনাহারে রোদ, ঝর-বাদলে, শেয়ালের হাক-ডাকের মাঝেই খুপড়ির মধ্যেই থাকতে হয় তাকে। কখনো লাকরির চুলায় ভাত আর আলু সিদ্ধ করে লবন মরিচ দিয়ে খান, কখনো শুকনা খাবার খেয়ে থাকেন।

এ ব্যাপারে কথা বলতে মুজিবুরের ভাই জহিরুলকে পাওয়া যায়নি। জহিুলের বড় ভাই ফরিদুল আলমের ছেলে আল-আমিন জানান, আমার কাকা অভিমানী, আমার দাদার জায়গা জমি ভাগ হয়নি এখনো, তবে চাচা কিছু জমি নিজ নামে লিখে নিয়েছে। চাচার পাওনা বুঝিয়ে দিতে আমাদের আপত্তি নাই।

১০নং গুনাইঘর ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ কুমিল্লা (উত্তর) জেলা সাংগঠনিক সম্পাদক মো. হুমায়ুন কবির জানান, বিষয়টি আমাকে কেউ জানায়নি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অবগত হয়েছি।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নিগার সুলতানা জানান, মজিবুর রহমানকে তার পিতার জমির কাগজপত্র নিয়ে এসিল্যান্ডের সাথে দেখা করার জন্য বলা হয়েছে। কাগজপত্র ঠিক থাকলে তার পাওনা জমি তাকে উদ্ধার করে দেয়া হবে। না হয় আবাসনের ব্যবস্থা করে দেব।

উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কুমিল্লা (উত্তর) জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ তাৎক্ষণিক চক্ষু চিকিৎসার জন্য তাকে ১০ হাজার টাকা দেন ও স্বচ্ছলতা আনয়নে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ জার্নাল/আরকে

  • সর্বশেষ
  • পঠিত