ঢাকা, সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ৬ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১ আপডেট : ১৪ মিনিট আগে
শিরোনাম

প্রধান শিক্ষকের গায়ের কাপড় খুলে পেটালেন চাকরি প্রার্থীরা

  লালমনিরহাট প্রতিনিধি

প্রকাশ : ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০০  
আপডেট :
 ০৬ নভেম্বর ২০২৩, ১২:০৬

প্রধান শিক্ষকের গায়ের কাপড় খুলে পেটালেন চাকরি প্রার্থীরা
ছবি: প্রতিনিধি

৩০ লক্ষ টাকা ঘুষ নেয়ার অভিযোগ তুলে মোশারফ হোসেন নামে এক প্রধান শিক্ষকের গায়ের কাপড় খুলে পেটালেন চাকরি প্রার্থী ও তাদের লোকজন। এ ঘটনায় আহত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন ওই শিক্ষক।

মোশারফ হোসেন লালমনিরহাটের খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়েরপ্রধান শিক্ষক। গতকাল রোববার(৫ নভেম্বর) বিকেলে লালমনিরহাট সদর উপজেলার খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

ভুক্তভোগীও স্থানীয়রা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলে জানান, প্রধান শিক্ষক এলাকার ৪/৫ জন বেকার শিক্ষিত যুবককে চাকরি দেয়ার প্রলোভন দেখিয়ে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ টাকা নেন। দীর্ঘ কয়েক বছর পেরিয়ে গেলেও তিনি চাকরি না দিয়ে টালবাহানা করেন। যদিও ২০২০ সালে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে পত্রিকায় ভুয়া নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে তাদের শান্তনা দেন।

পরে গোপনে বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং বডির সভাপতি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডঃ মতিয়ার রহমানের সাথে আলাপ করে একটি সিদ্ধান্তে অফিস সহকারী কাম হিসাবরক্ষক,অফিস সহায়ক, নিরাপত্তা কর্মী, আয়া ও পরিচ্ছন্ন কর্মী এই ৫টি পদের জন্য কয়েকদিন আগে আবারও পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। ওই ৫টি পদের বিপরীতে ৪০ জন প্রার্থী আবেদন করেন।

গতকাল রোববার এসব পদে নিয়োগ পরীক্ষা হওয়ার কথা শুনে এলাকাবাসী বিদ্যালয়ের চারিদিকে অবস্থান নিয়ে থাকে। যাতে করে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষা নিতে না পারেন। এরই এক পর্যায়ে বিকেলে প্রধান শিক্ষক বিদ্যালয়ের বাইরে এলে শিক্ষক নিয়োগ প্রত্যাশী খুনিয়াগাছ ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি নুর ইসলামসহ চাকরি প্রার্থীরা ও এলাকাবাসী চাকরির জন্য দেয়া টাকা ফেরত চান। পরে প্রধান শিক্ষক টাকা দিতে না চাওয়ায় সেখানেই তাকে বেদম মারপিট করে শরীরের জামা কাপড় ছিড়ে ফেলেন।

এর কিছুক্ষণ পর বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং বডির সভাপতি এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান আসলে তার সামনেই আবারও প্রধান শিক্ষককে পেটানো হয় এবং সভাপতিকেও অশ্লীল ভাষায় গালিগালাজ করা হয়। পরে বিদ্যালয়ের অফিসে যাওয়ার পথে আবার বেশ কয়েকজন মহিলা হাতে ঝাড়ু ও স্যান্ডেল নিয়ে তাদের উপর চড়াও হয়।

তারপরেও জেলাশিক্ষা অফিস ও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ নিয়োগ পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করলে উত্তেজিত এলাকাবাসীও মহিলাগণ ক্লাসে নিয়োগ প্রার্থীদের উপর চড়াও হোন। পরে সদর থানার পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

তারা আরও জানান, এই নিয়োগ পরীক্ষা গত অক্টোবর মাসের ৩১ তারিখ হওয়ার কথা থাকলেও সেদিন পরীক্ষা স্থগিত করা হয় এবং পরবর্তীতে পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দেয়া হবে বলেও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ প্রার্থীদের জানান। কিন্তু যাদের চাকরি দেয়া হবে শুধুমাত্র তাদেরকে আজকের পরীক্ষার তারিখ জানিয়ে দিয়ে গোপনে পরীক্ষা নেয়ার চেষ্টা করেন। বিষয়টি জানা-জানি হলে আরও ৪০ প্রার্থী আজ নিয়োগ পরীক্ষা দিতে আসেন।

কিন্তু বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ যে ৫জনকে নিয়োগ দেয়ার কথা বলে ২৫ থেকে ৩০ লক্ষ নিয়েছেন তাদেরকে উত্তরপত্রসহ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র দিয়ে দেন এবং বিকেলে পুলিশের উপস্থিতিতে নিয়োগ পরীক্ষা সম্পন্ন করেন।

এব্যাপারে চাকরি প্রত্যাশী ছাত্রলীগ সভাপতি নুর ইসলাম জানান, আমি একজন বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। আমি আমার চাকরির জন্য প্রধান শিক্ষক মোশারফ স্যারকে ৫ লক্ষ টাকা দিয়েছি। গত ৫ বছরেও তিনি আমার চাকরি নিশ্চিত করেন নাই। তিনি আমার চাকরি নিশ্চিত হয়েছে বলে মিথ্যা শান্তনা দেন। কিন্তু পরে আমি জানতে পারি তারা গোপনে নিয়োগ পক্রিয়া শেষ করেছেন। বিষয়টি জানতে পারলে এলাকাবাসী আজ ওই শিক্ষকে টাকা ফেরত দিতে বলে। টাকা দিতে না পারায় একটু ধাক্কাধাক্কি হয় বলেও জানান তিনি।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোশারফ হোসেন জানান, বিদ্যালয়ের ক্লাস চলায় নিয়োগ পরীক্ষাটি বিকেলে নেয়ার কথা ছিল। বিদ্যালয় ছুটি হলে তারপর নিয়োগ পরীক্ষা হবে তাই আমি আসরের নামাজ পড়ার জন্য মসজিদে যাওয়ার পথে এলাকার সন্ত্রাসী নুর ইসলামসহ ২০/২৫ জন পথরোধ করে আমাকে লাঞ্ছিতসহ বেদম মারপিট করে। পরে বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান এসে উদ্ধার করে হাসপাতালেভর্তি করে। আমি প্রশাসনের কাছে এই ঘটনার ন্যায়বিচার দাবি করছি।

এব্যাপারে খুনিয়াগাছ এসসি উচ্চ বিদ্যালয়ের সভাপতি এ্যাডঃ মতিয়ার রহমান মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়।

সদর থানার ওসি ওমার ফারুক জানান, এ বিষয়য় এখনো কোন অভিযোগ আসেনি। অভিযোগ এলে তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে তিনি জানান।

বাংলাদেশ জার্নাল/ওএফ

  • সর্বশেষ
  • পঠিত